img

রাজশাহী বিভাগের ৩৯টি সংসদীয় আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের কাউকে কাউকে চলতি মাসের মধ্যেই দল থেকে সিগন্যাল দেওয়া হতে পারে। এছাড়া কেন্দ্রে ডাক পাওয়া সব মনোনয়ন প্রত্যাশীকে দলের ঐক্য ও সংহতি রক্ষায় এলাকায় সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদারের নির্দেশ দিয়েছেন দলের বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

সোমবার সন্ধ্যায় চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে ডাক পাওয়া রাজশাহী বিভাগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের উদ্দেশে বিশেষ বার্তা দিয়েছেন তারেক রহমান।

তারেক রহমান বলেছেন, প্রতিনিয়ত বিএনপির সামনে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ এসে হাজির হচ্ছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সবাইকে ধৈর্যসহকারে ও  ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে যেতে হবে। আগামী নির্বাচন কঠিন হবে এবং উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় সর্বস্তরের দলীয় নেতাকর্মীদের সবসময় ঐক্যবদ্ধ অবস্থানে থাকতে হবে।  ডাক পাওয়া বিভাগের একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশীর সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

দলীয় সূত্রমতে, আগের দিন স্বল্প সময়ের নোটিশে রাজশাহী বিভাগের ৩৯ আসনের তালিকাভুক্ত  মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ঢাকায় বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে উপস্থিত হতে বার্তা পাঠানো হয়। বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ শাহীন শওকত ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ওবায়দুর রহমান চন্দনের মাধ্যমে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের দ্রুত সময়ে চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে হাজির হতে অনুরোধ করা হয়। সেই মোতাবেক ডাক পাওয়া মনোনয়ন প্রত্যাশীরা সোমবার সন্ধ্যায় গুলশান কার্যালয়ে হাজির হন।

দলীয় সূত্রে আরও জানা গেছে, রাজশাহী বিভাগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের উদ্দেশ্যে ভিডিও কলে যুক্ত হয়ে দিক-নির্দেশনামূলক বক্তব্য দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এই বিশেষ সভায় মনোনয়ন প্রত্যাশী ছাড়া শুধুমাত্র বিএনপির স্থায়ী কমিটির তিন সদস্য মেজর অবসরপ্রাপ্ত হাফিজ উদ্দিন, ইকবাল মাহমুদ খান টুকু ও সেলিমা রহমান উপস্থিত ছিলেন।

তবে এ সভায় কোনো মনোনয়নপ্রত্যাশী বক্তব্য দেওয়া বা কথা বলার সুযোগ পাননি।

জানা গেছে, রাজশাহী বিভাগের ৩৯ আসনের বিপরীতে প্রতিটি আসন থেকে গড়ে তিন থেকে চারজন করে মনোনয়ন প্রত্যাশীকে ডাকা হয়েছিল। কোন কোন আসন থেকে মাত্র একজনকেও ডাকা হয়।

এ বিভাগের মধ্যে রাজশাহীতে সংসদীয় আসন ৬টি। এছাড়া নাটোরে ৪টি, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৩টি, নওগাঁ জেলায় ৬টি, জয়পুরহাট জেলায় ৩টি, পাবনায় ৬টি, সিরাজগঞ্জ জেলায় ৬টি এবং বগুড়া জেলায় সর্বাধিক ৭টি সংসদীয় আসন রয়েছে। এসব আসন থেকে সোমবারের বিশেষ সভায় বিএনপির ১৩১ জন মনোনয়ন প্রত্যাশীকে ডাকা হয়েছিল।

জানা গেছে, নাটোর-২ (সদর-নলডাঙ্গা) আসন থেকে শুধুমাত্র ডাকা হয়েছিল চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুকে। রাজশাহী-২ (মহানগর) আসন থেকে ডাকা হয়েছিল চেয়ারপারনসের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু ও মহানগর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট এরশাদ আলী ইশাকে।

রাজশাহীর বাকি ৫টি আসন থেকে কোথাও তিনজন কোথাও চারজনকে ডাকা হয়েছিল।

মঙ্গলবার অনেকে এলাকায় ফিরে মাঠে গণসংযোগ শুরু করেছেন। অনেকেই ঢাকায় থেকে গিয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগে বাড়াচ্ছেন।

অন্যদিকে রাজশাহী বিভাগের সর্বাধিক আসনের জেলা বগুড়ার সাতটি আসন থেকে মোট ২৫ জন মনোনয়ন প্রত্যাশীকে ডাকা হয়েছিল বলে জানা গেছে। বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা জানান,  যুগ যুগ ধরে বগুড়া বিএনপির দুর্গ হিসেবে খ্যাত। বগুড়া-৬ (সদর) আসনটিতে দলের চেয়ারপারসন নির্বাচন করতে পারেন- এমন আশায় এ আসন থেকে কোনো মনোনয়নপ্রত্যাশী নেই। একইভাবে দলের প্রতিষ্ঠাতা শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের জন্মস্থান গাবতলী বগুড়া-৭ আসনের অন্তর্ভুক্ত। এ আসনে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নির্বাচন করবেন- এমন আশায় এই আসনেও কোনো মনোনয়ন প্রত্যাশী নেই। তবে দলের চেয়ারপারসন ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বগুড়ার এই দুটি আসন থেকে ভোট করতে না চাইলে তখন দল উপযুক্ত বিবেচনা করে কাউকে মনোনয়ন দেবেন। তখন মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে  হয়ে কাজ করব।

সোমবারের বিশেষ সভাতেও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তেমন নির্দেশনা দিয়েছেন বলে সবাইকে জানান বিএনপি নেতা বাদশা।

   

এদিকে রাজশাহী-২ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু বলেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আমাদের সবাইকে অতি উৎসাহী না হয়ে দলীয় সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত মাঠে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন। দল যাদের মনোনয়ন দেবেন তাদের শুধুমাত্র ব্যক্তি বিবেচনা না করে দলীয় আমানত হিসেবে গ্রহণ করে তা রক্ষায় মাঠে নামতে হবে। যিনি মনোনয়ন পাবেন তার উচিৎ হবে মনোনয়ন বঞ্চিতদের বাড়ি বাড়িতে গিয়ে সাক্ষাৎ করে ঐক্যবদ্ধভাবে ধানের শীষকে বিজয়ী করতে মাঠে নেমে পড়া। দলের প্রতি ত্যাগ, যোগ্যতা, দক্ষতা ও সর্বজনের মধ্যে জনপ্রিয়দের দল মনোনয়ন দেবে।

তিনি আরও বলেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলে দিয়েছেন- কোনো ভুল লোককে মনোনয়ন দেওয়া হবে না। সর্বাধিক যোগ্যতার নেতাই মনোনয়ন পাবেন। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলে দিয়েছেন এলাকায় ফিরে গিয়ে মনোনয়ন পেয়ে গেছেন অতি উৎসাহী হয়ে কেউ যেন এমনটা না করেন। এতে দলের ঐক্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী মহানগর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট এরশাদ আলী ইশা বলেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলে দিয়েছেন- যাদের ডাকা হয়েছে তারা যেন এলাকায় গিয়ে বলতে শুরু না করেন তিনি মনোনয়ন পেয়ে গেছেন। এমনটা হলে দলের নেতাকর্মী ও জনগণের মাঝে ভুল বার্তা যেতে পারে।

দলীয় সূত্রে আরও জানা গেছে, তারেক রহমান মনোনয়ন প্রত্যাশীদের আরও বলেছেন, প্রতিনিয়ত বিএনপির সামনে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ হাজির হচ্ছে। এসব চ্যালেঞ্জ ধৈর্যসহকারে মোকাবিলা করতে হবে। এসব বিষয়ে কেউ কোনো হঠকারী সিদ্ধান্ত নেবেন না। দলের ভাবমূর্তির প্রতি সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে ব্যক্তির চেয়ে দল বড়। বিএনপি জনগণের দল। জনগণের জন্য আমাদের অনেক কাজ করতে হবে। সেই প্রস্তুতি সবাইকে এখনই নিতে হবে। এ সময় সব মনোনয়ন প্রত্যাশী হাত উঁচিয়ে সম্মতি দেন।

এই বিভাগের আরও খবর


সর্বশেষ