চোট-ঝড় পেরিয়ে দেম্বেলের হাতেই উঠছে ব্যালন ডি’অর?

২০১৭ সালে বরুসিয়া ডর্টমুন্ড থেকে বার্সেলোনায় পা রাখার পর থেকেই তাকে ঘিরে স্বপ্ন ছিল আকাশছোঁয়া। তবে বার্সেলোনার জার্সিতে উসমান দেম্বেলে হয়ে উঠেছিলেন যেন এক অপূর্ণ প্রতিশ্রুতি। ছয় বছর ধরে মাঠের পারফরম্যান্সের চেয়ে বেশি আলোচনায় ছিল তার চোট, খামখেয়ালিপনা আর মাঠের বাইরের নানা ঘটনা। অবশেষে ২০২৩ সালের আগস্টে হতাশা-আক্ষেপ পেছনে ফেলে পাড়ি জমান ফরাসি জায়ান্ট পিএসজির ঘরে।
প্যারিসে তখন চলছে বড় ধরণের রদবদল। মেসি-নেইমার বিদায় নিয়েছেন, এমবাপ্পেরও চলে যাওয়া সময়ের ব্যাপার। সেই শূন্যতার জায়গা পূরণে লুইস এনরিকের ঝরঝরে, মেদহীন দলে নতুন পোস্টার বয় হয়ে হাজির দেম্বেলে।
বড় তারকাবিহীন পিএসজি শুরুর সন্দেহ কাটিয়ে বদলে দিয়েছে ইউরোপীয় ফুটবলের চিত্র।
লিগ আঁ, ফ্রেঞ্চ কাপ, চ্যাম্পিয়নস লিগ—তিন শিরোপা জিতে ইতিহাস গড়েছে তারা। এই ঐতিহাসিক মৌসুমের অন্যতম রূপকার দেম্বেলে।
মৌসুমের প্রথম অংশে ছিলেন ম্লান। ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৮ ম্যাচে মাত্র ৫ গোল।
কিন্তু নতুন বছরের শুরুতেই যেন জ্বলে উঠলেন তিনি। জানুয়ারি থেকে মৌসুমের শেষ পর্যন্ত ২৯ ম্যাচে ২৫ গোল, ৮ গোলে সহায়তা। টানা ছয় ম্যাচে গোল, এক সপ্তাহে টানা দুটি হ্যাটট্রিকের একটি চ্যাম্পিয়নস লিগে স্টুটগার্টের বিপক্ষে, আরেকটি লিগ আঁতে ব্রেসের বিপক্ষে।
চ্যাম্পিয়নস লিগে তার অবদানই ছিল পিএসজির সাফল্যের চাবিকাঠি। দলের হয়ে ৮ গোল ও ৬ গোলে সহায়তা করে ১৪ গোলে সরাসরি বদান রেখে গড়েছেন ফরাসি ক্লাব ইতিহাসের রেকর্ড।
তৈরি করেছেন সর্বাধিক ৩৮টি সুযোগও। লিগ আঁয় ২১ গোল, ৮ সহায়তা। মৌসুম সব মিলিয়ে অবদান রেখেছেন ৪৮ গোলে।
ব্যালন ডি’অরের বিবেচনায় রাখা হয়েছে ২০২৪ সালের ১ আগস্ট থেকে ২০২৫ সালের ১৩ জুলাই পর্যন্ত পারফরম্যান্স। এ সময়ে আলো ছড়িয়েছেন আরও কয়েকজন—সালাহর ২৯ গোল ও ১৮ সহায়তা, এমবাপ্পের ৪৪ গোল, বার্সেলোনার ইয়ামাল-রাফিনিয়ার ঝলক। কিন্তু দলীয় ও ব্যক্তিগত সাফল্যের ভারসাম্যে দেম্বেলে সবার চেয়ে এগিয়ে।
গত বছর রদ্রির ব্যালন ডি’অর বিতর্কিত হলেও, এবার দেম্বেলেকে ছাড়া অন্য কাউকে কল্পনা করা কঠিন।
দেম্বেলে ছাড়া যাদের নাম আসছে তাদের প্রসঙ্গে ক্রীড়া বিষয়ক সংবাদমাধ্যম দ্য অ্যাতলেতিক-এর সাংবাদিক সেরিস জোন্স বলেন, ‘যদি সালাহ চ্যাম্পিয়নস লিগ জিততেন তবে তিনিই ফেভারিট হতেন। এটা অনেকটা এমন হয়ে গেল না, যদি আমার দাদীর চাকা থাকত তবে তিনি সাইকেল হতেন!’
লিওনেল মেসি (৮) আর ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর (৫) যুগ শেষ হয়ে গেছে। তাদের ছায়া সরতেই মঞ্চটা এখন উন্মুক্ত। নাটকীয় কিছু না ঘটলে আজ প্যারিসের আলো ঝলমলে মঞ্চে তার হাতেই উঠবে সোনালি ট্রফি।