img

ফ্রান্সের ফার্স্ট লেডি ব্রিজিত একজন নারী, তা প্রমাণের জন্য ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ ও তার স্ত্রী ব্রিজিত ম্যাখোঁ যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে বৈজ্ঞানিক ও আলোকচিত্র প্রমাণ পেশ করার পরিকল্পনা করছেন। তাদের আইনজীবী এই খবর জানিয়েছেন বলে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। 

এর আগে, ম্যাখোঁ দম্পতি যুক্তরাষ্ট্রের কনজারভেটিভ ইনফ্লুয়েন্সার, উপস্থাপিকা এবং পডকাস্টার ক্যান্ডেস ওয়েন্সের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেন। ওয়েন্স দাবি করেছেন, ব্রিজিত আসলে পুরুষ হিসেবে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।

 

এ নিয়ে ব্যাপক বিতর্কের সৃষ্টি হয়। ক্যান্ডেস ওয়েন্স ইচ্ছাকৃতভাবে ‘অসত্য, হাস্যকর এবং বিভ্রান্তিকর গল্প’ ছড়িয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন ম্যাখোঁ দম্পতি। তাদের ভাবমূর্তিতে ‘গভীর ক্ষতি’ এবং ‘আর্থিক ক্ষতি’ হয়েছে বলেও সেই মামলার অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।

 

ম্যাখোঁ দম্পতির আইনজীবী টম ক্লেয়ার জানান, যুক্তরাষ্ট্রের ডানপন্থী প্রভাবশালী ক্যান্ডেস ওয়েন্সের বিরুদ্ধে দায়ের করা মানহানির মামলায় এই প্রমাণ উপস্থাপন করা হবে।

ওয়েন্সের আইনজীবীরা ইতিমধ্যে মামলাটি খারিজের আবেদন করেছেন।

 

বিবিসির ‘ফেম আন্ডার ফায়ার’ পডকাস্টে টম ক্লেয়ার বলেন, ‘ব্রিজিত ম্যাখোঁ এই দাবিগুলোকে ‘অবিশ্বাস্য এবং বিরক্তিকর’ মনে করছেন। এগুলো ফরাসি প্রেসিডেন্টের জন্যও ক্ষতিকর। যখন আপনার পরিবারকে আক্রমণ করা হয়, এটি ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনে চাপ সৃষ্টি করে।

 

প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরও তিনি এর বাইরে নন।’

 

তিনি জানান, মামলায় বৈজ্ঞানিক বিশেষজ্ঞদের সাক্ষ্যও থাকবে। যদিও এখনো এর সুনির্দিষ্ট বিবরণ প্রকাশ করেননি। ক্লেয়ার বলেন, এই দম্পতি প্রমাণ করতে প্রস্তুত যে, এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। ম্যাখোঁ দম্পতির পরিবারের ব্যক্তিগত ছবি, যেমন ব্রিজিতের গর্ভাবস্থা বা সন্তান পালনের ছবি আদালতে পেশ করা হবে কি না, জানতে চাইলে আইনজীবী বলেন, এই প্রমাণ আছে এবং আদালতের নিয়ম অনুযায়ী তা উপস্থাপন করা হবে।

 

ক্যান্ডেস ওয়েন্স মার্কিন রক্ষণশীল সংবাদমাধ্যম ডেইলি ওয়্যার-এর প্রাক্তন ভাষ্যকার এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় লক্ষাধিক অনুসারী রয়েছে। তিনি বারবার দাবি করেছেন, ব্রিজিত ম্যাখোঁ একজন পুরুষ। ২০২৪ সালের মার্চে তিনি বলেছিলেন, এই অভিযোগের আনতে তিনি নিজের ‘পেশাগত খ্যাতি’ ঝুঁকিতে ফেলতেও রাজি।

এই গুজব প্রথমে ফরাসি ব্লগার আমান্ডাইন রয় এবং নাতাশা রে-এর ২০২১ সালের একটি ইউটিউব ভিডিও থেকে ছড়িয়ে পড়ে। ২০২৪ সালে ফ্রান্সে রয় ও রে-এর বিরুদ্ধে মানহানির মামলা জিতে নেন ম্যাখোঁ দম্পতি। তবে ২০২৫ সালে আপিলে সেই রায় বাতিল হয়, যা মত প্রকাশের স্বাধীনতার ভিত্তিতে হয়েছিল। বর্তমানে তারা সেই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করছেন। ২০২৫ সালের জুলাইয়ে ম্যাখোঁ দম্পতি যুক্তরাষ্ট্রে ক্যান্ডেস ওয়েন্সের বিরুদ্ধে নতুন মামলা করেন। 

তাদের অভিযোগ, ওয়েন্স ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা প্রচার করেছেন এবং সত্য প্রমাণ উপেক্ষা করেছেন। আমেরিকান আইনে জনপরিচিত ব্যক্তিদের মানহানির মামলায় বাদীদের ‘প্রকৃত বিদ্বেষ’ প্রমাণ করতে হয়। অর্থাৎ আসামি জেনেশুনে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়েছেন বা সত্য মানতে চাচ্ছেন না। 

আগস্টে ফরাসি ম্যাগাজিন প্যারিস ম্যাচকে ম্যাখোঁ বলেন, ‘এটি আমার সম্মান রক্ষার বিষয়। কারণ এটি সম্পূর্ণ অর্থহীন। ওয়েন্স ভালো করেই জানতেন যে, তার কাছে মিথ্যা তথ্য রয়েছে এবং তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে ক্ষতি করার লক্ষ্যে এবং  অতি-ডানপন্থী নেতাদের সঙ্গে সম্পর্কের কারণে এই প্রচারণা চালিয়েছেন।’

ওয়েন্সের আইনজীবীরা মামলাটি খারিজের প্রস্তাবে বলেছেন, ডেলাওয়্যারে এই মামলা হওয়া উচিত নয়। কারণ এটি তার ব্যবসার সঙ্গে সম্পর্কিত নয় এবং সেখানে লড়তে গেলে তার ‘বড় আর্থিক ও পরিচালনাগত অসুবিধা’ হবে। বিবিসি ক্যান্ডেস ওয়েন্সের আইনি দলের মন্তব্যের জন্য যোগাযোগ করেছে। তিনি এর আগে বলেছেন, তিনি বিশ্বাস করেন তার বক্তব্য সত্য এবং বাকস্বাধীনতা ও সমালোচনা করার অধিকার ছাড়া আমেরিকান হওয়ার আর কিছু নেই।

সূত্র : বিবিসি

এই বিভাগের আরও খবর


সর্বশেষ