img

ফিলিস্তিনকে আনুষ্ঠানিকভাবে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী স্যার কেয়ার স্টারমার। ডোনাল্ড ট্রাম্পের যুক্তরাজ্য সফর শেষ হওয়ার পর এই ঘোষণা দেওয়া হতে পারে। বৃহস্পতিবার চেকার্সে ট্রাম্পের সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা ছাপিয়ে যেতে পারে এমন আশঙ্কায়, সফরের পর পর্যন্ত ঘোষণাটি বিলম্বিত করা হয়েছে বলে জানা গেছে। দ্য টেলিগ্রাফের প্রতিবেদনে এই খবর বলা হয়েছে।

 

তবে ওয়াশিংটন এ পদক্ষেপের কঠোর বিরোধিতা করছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট আগেই সতর্ক করেছেন, ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়া হামাসকে পুরস্কৃত করার সমান হবে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেছেন, আমেরিকা যুদ্ধের অবসান চায়। তবে হামাসের মতো বর্বরদের সঙ্গে কখনো তা সম্ভব নয়।

 

আগামী সপ্তাহে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশন শুরু হবে। ব্রিটেন, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডাসহ কয়েকটি দেশ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রত্যাশিত তালিকায় রয়েছে। স্যার কেয়ার নিজে সেখানে উপস্থিত থাকবেন না। যুক্তরাজ্যের প্রতিনিধিত্ব করবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইভেট কুপার ও বিচারমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি।

 

গত জুলাইয়ে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন, ইসরায়েল যদি যুদ্ধবিরতিতে রাজি না হয়, দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ না হয় এবং অধিকৃত পশ্চিম তীরের অধিগ্রহণ বাতিল না করে, তবে যুক্তরাজ্য ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেবে। তখন তিনি বলেন, ‘আমরা সবসময় বলেছি যে, সঠিক শান্তি প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই আমরা ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেব। দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে এ পদক্ষেপ নেওয়াই সঠিক। এই সমাধান এখন হুমকির মুখে, পদক্ষেপ নেওয়ার সময় এসেছে।’

তবে ইসরায়েল যুক্তরাজ্যের এসব শর্ত প্রত্যাখ্যান করেছে, যা কার্যত স্বীকৃতিকে নিশ্চিত করেছে।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, ‘স্টারমার হামাসের ভয়াবহ সন্ত্রাসবাদকে পুরস্কৃত করছেন এবং এর শিকারদের শাস্তি দিচ্ছেন। আজ ইসরায়েলের সীমান্তে একটি জিহাদি রাষ্ট্র হলে তা আগামীকাল ব্রিটেনকে হুমকি দেবে। জিহাদি সন্ত্রাসীদের প্রতি তুষ্টি সবসময় ব্যর্থ হয়। এটি আপনাকেও ব্যর্থ করবে। এটি ঘটতে দেওয়া হবে না।’

 

ফিলিস্তিন স্বীকৃতির জন্য লেবার পার্টির ভেতরেও চাপ বাড়ছে। মন্ত্রিসভার এক-তৃতীয়াংশ সদস্য স্যার কেয়ারকে পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানিয়েছেন এবং ১৩০ জনেরও বেশি এমপি সমর্থনপত্রে স্বাক্ষর করেছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইভেট কুপার গাজা সিটিতে ইসরায়েলের আক্রমণকে একেবারে বেপরোয়া ও ভয়াবহ বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, ‘এটি আরো রক্তপাত ঘটাবে, আরো নিরীহ বেসামরিক মানুষকে হত্যা করবে এবং সেখানে ইসরায়েলি জিম্মিদের বিপদে ফেলবে।’

আগস্টে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন করা হয়েছিল, হামাস যদি ক্ষমতায় থাকে তবে ব্রিটেন ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেবে কি না। তখন সরকারের মুখপাত্র বলেন, ‘আমরা খুব স্পষ্ট করে বলেছি, গাজার ভবিষ্যৎ সরকারে হামাসের কোনো ভূমিকা থাকতে পারে না। তাদের অবশ্যই নিরস্ত্রীকরণ করতে হবে এবং সব জিম্মিকে মুক্তি দিতে হবে। হামাস ফিলিস্তিনি জনগণ নয়। ফিলিস্তিনি জনগণের নিজস্ব রাষ্ট্রের অধিকার রয়েছে এবং আমরা আগে যে পদক্ষেপগুলো নির্ধারণ করেছি তার পথ ধরে সেই স্বীকৃতি আসবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘ফিলিস্তিনের স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হামাসের হাতে থাকবে না।’ সরকার বলেছে, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের আগে তারা মূল্যায়ন করবে পক্ষগুলো কতটা শর্ত পূরণ করেছে। এদিকে বৃহস্পতিবার রাতে লন্ডনের মেয়র সাদিক খান প্রথমবারের মতো গাজার পরিস্থিতিকে ‘গণহত্যা’ হিসেবে বর্ণনা করেন। 

জনসম্মুখ একটি প্রশ্নোত্তর অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি গাজায় যা ঘটছে তা গণহত্যা। আমি যখন শিশুদের অনাহারে থাকার ছবি দেখি, ইসরায়েলের নীতির কারণে ২০ হাজার শিশু অনাহারে মারা গেছে। যখন আমি গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়তে দেখি, সরবরাহ সংকট দেখি, মানুষের তৈরি দুর্ভিক্ষ দেখি, আইসিজের অন্তর্বর্তীকালীন রায় পড়ি এবং জাতিসংঘ কমিশনের প্রতিবেদন দেখি, তখন মনে হয় গাজায় আমাদের চোখের সামনেই গণহত্যা ঘটছে, এই সিদ্ধান্তে পৌঁছানো অনিবার্য।’

সূত্র : দ্য টেলিগ্রাফ।

এই বিভাগের আরও খবর


সর্বশেষ