চীন-ফিলিপাইনের জাহাজের সংঘর্ষ

দক্ষিণ চীন সাগরে বিতর্কিত স্কারবোরো শোলের কাছে চীন ও ফিলিপাইনের জাহাজের মধ্যে সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে। দুই দেশের মধ্যে সামুদ্রিক উত্তেজনা ক্রমশ বৃদ্ধির মধ্যেই এমন খবর এলো।
উভয় পক্ষ মঙ্গলবার পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলে। চীন অভিযোগ করে, ফিলিপাইনের একটি জাহাজ তাদের উপকূলরক্ষী বাহিনীর একটি জাহাজকে ধাক্কা মেরেছে।
অন্যদিকে ফিলিপাইনের কোস্ট গার্ড জানিয়েছে, চীনের আক্রমণাত্মক পদক্ষেপ তাদের একটি জাহাজ ক্ষতিগ্রস্ত করেছে এবং তাদের একজন সদস্য আহত হয়েছেন, যিনি চীনের জলকামানের আঘাতে ভেঙে যাওয়া কাচের আঘাত পেয়েছেন।
চীনের কোস্ট গার্ডের এক মুখপাত্র স্বীকার করেছেন, ফিলিপাইনের ১০টি নৌকা পৌঁছনোর পর তারা জলকামান ব্যবহার করেছে। এসব নৌকা সেখানে ‘অবৈধভাবে’ প্রবেশ করেছিল বলে তাদের দাবি।
চীনা মুখপাত্র গ্যান ইউ বলেন, ‘চীনা কোস্ট গার্ড আইনসম্মতভাবে ফিলিপাইনের জাহাজের বিরুদ্ধে নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
’ তিনি আরো জানান, এ ব্যবস্থার মধ্যে মৌখিক সতর্কতা দেওয়া এবং চলাচলের পথ সীমিত করাও অন্তর্ভুক্ত ছিল।
আবার ফিলিপাইন কোস্ট গার্ড জানিয়েছে, তারা যখন শোলে পৌঁছে তাদের ৩৫টিরও বেশি মাছ ধরার নৌকায় সরবরাহ পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছিল, তখন ৯টি চীনা জাহাজ থেকে আগ্রাসনের শিকার হয়।
ফিলিপাইনের মেরিটাইম কাউন্সিলের এক মুখপাত্র বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ফিলিপাইনের জাহাজের বিরুদ্ধে নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার চীনা দাবি ‘সত্য নয়’। তিনি একে চীনের আরেকটি ‘ভুয়া তথ্য ও প্রচারণা’ বলে আখ্যা দেন।
সর্বশেষ এ ঘটনার এক সপ্তাহেরও কম সময় আগে বেইজিং ঘোষণা দিয়েছিল, তারা আট হাজার ৬৫০ একর আয়তনের এ বিতর্কিত প্রবালদ্বীপকে একটি প্রাকৃতিক অভয়ারণ্যে পরিণত করবে, যাতে ‘বৈচিত্র্য, স্থিতিশীলতা ও স্থায়িত্ব’ নিশ্চিত করা যায়। স্কারবরো রিফ ফিলিপাইনের প্রধান দ্বীপ লুজনের পশ্চিমে ২৪০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
ফিলিপাইন ও তাদের মিত্ররা চীনের এ সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানায়। তাদের মতে, এ পদক্ষেপ জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্য নয়, বরং সম্প্রসারণবাদী উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য নেওয়া হয়েছে। ফিলিপাইনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পর দিন জানায়, তারা এই ‘অবৈধ ও বেআইনি পদক্ষেপের’ বিরুদ্ধে ‘আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক প্রতিবাদ’ জানাবে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রও এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে পোস্ট করে চীনের ‘অস্থিতিশীলতামূলক পরিকল্পনা’ প্রত্যাখ্যান করেন। অবস্থিত ফিলিপাইনে কানাডার দূতাবাসও একই অবস্থান নেয়। তারা জানায়, পরিবেশ সুরক্ষার অজুহাত ব্যবহার করে শোল দখলের চেষ্টা করছে চীন।
চীন প্রায় পুরো দক্ষিণ চীন সাগরের ওপর নিজেদের মালিকানা দাবি করে এবং ওই অঞ্চলে তাদের সঙ্গে ফিলিপাইন, ভিয়েতনামসহ বহু দেশের সামুদ্রিক বিরোধ রয়ে গেছে। ২০১৬ সালে হেগের স্থায়ী সালিশ আদালত রায় দিয়েছিলেন, আন্তর্জাতিক আইনের ভিত্তিতে বেইজিংয়ের দাবির কোনো বৈধতা নেই। তবে বেইজিং ওই রায় প্রত্যাখ্যান করেছে।
গত সপ্তাহে চীন সতর্ক করে বলেছিল, দক্ষিণ চীন সাগরে ফিলিপাইন যেন তাদের প্ররোচিত না করে। তখন ওই এলাকায় যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের সঙ্গে ফিলিপাইনের যৌথ সামরিক মহড়া চলছিল। চীনের দক্ষিণাঞ্চলীয় থিয়েটার কমান্ডের এক মুখপাত্র বলেন, ‘পরিস্থিতি ঘোলাটে করার বা অস্থিতিশীল করার যেকোনো চেষ্টা ব্যর্থ হবে।’