কাতারের নিরাপত্তায় ‘জোরালো সমর্থনের’ প্রতিশ্রুতি যুক্তরাষ্ট্রের

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও মঙ্গলবার এক ঝটিকা সফরে কাতারে গিয়ে দেশটির নিরাপত্তায় জোরালো সমর্থনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এর আগে দোহায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় হামাসের আলোচকদের লক্ষ্যবস্তু করা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উপসাগরীয় মিত্র কাতারে ব্যাপক ক্ষোভ ছড়িয়েছিল।
ইসরায়েল সফরের পর তড়িঘড়ি আয়োজিত দোহা সফরে রুবিও কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির সঙ্গে তার দপ্তরে করমর্দন করেন এবং এরপর প্রায় এক ঘণ্টা ধরে চলা বৈঠকে অংশ নেন। বৈঠক শেষ করে তিনি অবিলম্বে দেশ ত্যাগ করেন।
ইসরায়েলে সফরের সময়ও তিনি ‘অটল সমর্থনের’ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, যদিও দোহায় আলোচক দলকে লক্ষ্যবস্তু করার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের উপসাগরীয় মিত্ররা ক্ষুব্ধ হয়।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র টমি পিগট বলেন, ‘পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিও যুক্তরাষ্ট্র ও কাতারের শক্তিশালী দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক পুনর্ব্যক্ত করেছেন এবং গাজা যুদ্ধের অবসান ও সব জিম্মিকে মুক্ত করার প্রচেষ্টার জন্য কাতারকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।’
তিনি আরো জানান, রুবিও কাতারের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বে যুক্তরাষ্ট্রের জোরালো সমর্থন পুনর্নিশ্চিত করেছেন।
রুবিও আগেই বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র খুব দ্রুত কাতারের সঙ্গে একটি প্রতিরক্ষা চুক্তি চূড়ান্ত করবে, যদিও ইসরায়েলের সামরিক পদক্ষেপ তা প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল-আনসারি মঙ্গলবার সাংবাদিকদের জানান, তার দেশ যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতা প্রচেষ্টার সমর্থনকে স্বাগত জানায়। তিনি বলেন, ‘এই হামলা অবশ্যই আমাদের এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে নতুন কৌশলগত প্রতিরক্ষা চুক্তির প্রয়োজনীয়তাকে ত্বরান্বিত করেছে।’
রুবিও আগে মন্তব্য করেছিলেন, ‘আমি কাতারকে অনুরোধ করব তারা যা করে আসছে তা চালিয়ে যেতে। পৃথিবীতে যদি এমন কোনো দেশ থাকে, যে আলোচনার মাধ্যমে এ যুদ্ধ শেষ করতে সাহায্য করতে পারে, তবে সেটি কাতার।’
তবে ইসরায়েল মঙ্গলবার ভোরে গাজা সিটির ওপর বহু প্রতীক্ষিত স্থল হামলা শুরু করায় নতুন কোনো মধ্যস্থতা প্রচেষ্টার সুযোগ কার্যত সীমিত হয়ে গেছে।
রুবিওর সফরের আরেকটি উদ্দেশ্য ছিল কাতারকে আশ্বস্ত করা, যেহেতু ইসরায়েলি হামলা উপসাগরীয় এই আমিরাতের প্রতি প্রধান মিত্রের নিরাপত্তা প্রতিশ্রুতিকে ক্ষুণ্ণ করেছে।
দোহায় অনুষ্ঠিত আরব-ইসলামী শীর্ষ সম্মেলনের এক দিন পর রুবিও কাতারে পৌঁছন, যেখানে নেতারা ইসরায়েলের হামলার নিন্দা জানান। ছয় জাতির গালফ কোঅপারেশন কাউন্সিলের (জিসিসি) প্রধান যুক্তরাষ্ট্রকে ‘তাদের প্রভাব ও চাপ’ ব্যবহার করে ইসরায়েলকে নিয়ন্ত্রণে আনতে আহ্বান জানান।
ওয়াশিংটনে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ‘আবার কাতারে হামলা করবেন না।’
তবে রুবিও ইসরায়েল সফরের সময় এ ধরনের কোনো মন্তব্য করেননি।
নেতানিয়াহু বলেন, তার সরকার দোহা হামলার জন্য ‘পূর্ণ দায়িত্ব’ নিচ্ছে, কারণ ‘তারা বিশ্বাস করে সন্ত্রাসীদের নিরাপদ আশ্রয় দেওয়া উচিত নয়।’
কাতার মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় বিমানঘাঁটির আবাসস্থল, যা মার্কিন সেন্ট্রাল কমান্ডের সামনের ঘাঁটিও।
গ্যাসসমৃদ্ধ ক্ষুদ্র এই আমিরাতকে ওয়াশিংটন প্রধান অ-ন্যাটো মিত্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। কাতার ট্রাম্পকে বিলাসবহুল একটি বিমান উপহার দিয়ে সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ করেছে।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের এত ঘনিষ্ঠ দেশ খুব কমই আছে, যতটা ঘনিষ্ঠ ইসরায়েল। গাজায় সামরিক অভিযান নিয়ে বিশ্বজুড়ে সমালোচনা সত্ত্বেও ইসরায়েল দীর্ঘদিন ধরে ওয়াশিংটনের দৃঢ় সমর্থন পেয়ে আসছে।
২০২৩ সালের অক্টোবরের হামলার আগে, ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র নীরবে দোহাকে ভূমিকা পালনে উৎসাহিত করেছিল, যার মধ্যে গাজার স্থিতিশীলতা রক্ষার আশায় হামাসকে কোটি কোটি ডলার স্থানান্তরের অনুমতিও ছিল।
২০১২ সালে কাতার মার্কিন আশীর্বাদে হামাসের রাজনৈতিক দপ্তর আতিথ্য দিতে সম্মত হয়েছিল। ওয়াশিংটন ও তেলআবিব দুজনেই মনে করত, যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র কাতার হলো হামাসের ওপর নজর রাখার জন্য সর্বোত্তম জায়গা।