কারাবন্দি নেতাদের পদ থেকে অপসারণের ভারতীয় নতুন বিল কেন ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে?

নরেন্দ্র মোদির সরকার ভারতের সংসদে প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী বা কেন্দ্র ও রাজ্যের অন্যান্য মন্ত্রীদের জন্য নতুন শর্ত আরোপ করে একটি বিতর্কিত বিল উত্থাপন করেছে। যেখানে একজন প্রধানমন্ত্রী, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বা অন্যান্য ফেডারেল বা প্রতিমন্ত্রীকে যদি ফৌজদারি তদন্তের মুখোমুখি করা হয়, তবে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার আগেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে তিনি পদ হারাবেন।
গত বুধবার সংসদে মোদি সরকারের পক্ষে সংবিধান (১৩০তম সংশোধনী) বিলটি পেশ করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।প্রস্তাবিত আইনে বলা হয়েছে, ন্যূনতম পাঁচ বছরের সাজাযোগ্য অপরাধে গ্রেপ্তার হয়ে যদি কোনো নির্বাচিত নেতা টানা ৩০ দিন হাজতে থাকেন, তাহলে তাদের স্বয়ংক্রিয়ভাবে অপসারণ হবে।
তবে জামিন পেলে বা খালাস পেলে পুনর্বহালের সুযোগ থাকবে।
সরকারের দাবি, এ উদ্যোগ দুর্নীতিগ্রস্ত ও অপরাধে অভিযুক্ত জন প্রতিনিধিদের জবাবদিহি বাড়াবে এবং জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনবে। বিলটি উপস্থাপন করার সময় বিরোধী দলের সদস্যরা আইনসভার কাগজপত্র ছিঁড়ে ফেলে এবং শাহের দিকে ছুঁড়ে মারেন, এরপর বিশৃঙ্খলার মধ্যে সংসদ স্থগিত করা হয়। বিরোধীদের প্রতিবাদের পর সংশোধনীটি আলোচনার জন্য একটি যৌথ সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়েছে।
যা সরকার এবং বিরোধী দল উভয়ের আইন প্রণেতাদের সমন্বয়ে গঠিত একটি প্যানেল।
২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিজেপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়ে মিত্রদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। শক্তিশালী বিরোধী জোট এই বিলকে ‘অগণতান্ত্রিক’ বলে অভিযোগ করেছে। তাদের মতে, এই আইনকে ব্যবহার করে কেন্দ্রীয় সরকার বিরোধী দলগুলোকে দমন করবে।
ভারতে সাংবিধানিক সংশোধনীর জন্য দুই কক্ষেই দুই-তৃতীয়াংশ সমর্থন দরকার, যা বিজেপি ও তার মিত্রদের নেই। ফলে অনেকের মতে এই বিলটি মূলত রাজনৈতিক কৌশল।
বিরোধীরা বলছে, ভোটের আগে জনমত বিভ্রান্ত করা এবং বিরোধীদের কঠিন অবস্থানে ফেলার জন্যই বিলটি আনা হয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক আসিম আলী বলেন, ‘এটি প্রতীকী ও স্বৈরাচারী প্রকৃতির। এমনকি আইন না হলেও বিরোধীরা এর বিরুদ্ধে ভোট দিলে বিজেপি নির্বাচনী প্রচারে তা কাজে লাগাতে পারবে।’
কংগ্রেস এমপি মনীশ তিওয়ারি বলেছেন, ‘দোষী প্রমাণিত হওয়ার আগে নির্দোষ হিসেবে গণ্য হওয়ার নীতির বিরুদ্ধেই এই বিল।’
হায়দরাবাদের আসাদউদ্দিন ওয়াইসি অভিযোগ করেন, ‘বিরোধী রাজ্য সরকারগুলোকে উল্টে দিতে এই আইন ব্যবহার করা হবে।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষক আসিম আলীর মতে, এই বিল কেন্দ্র-রাজ্যের ক্ষমতার ভারসাম্য নষ্ট করে ভারতের ফেডারেল কাঠামোকে দুর্বল করবে।
প্রতিবাদের জবাবে গতকাল শুক্রবার বিহারের এক নির্বাচনী সমাবেশে মোদি বলেন, ‘কিছুদিন আগে আমরা দেখেছি, জেল থেকে ফাইল সই করা হয়েছে, সরকারি আদেশ দেওয়া হয়েছে। নেতাদের যদি এমন মনোভাব থাকে, তবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কীভাবে লড়াই করব?’
২০১৪ সালে মোদি সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বিরোধীরা অভিযোগ করে আসছে যে, সিবিআই ও ইডির মতো তদন্ত সংস্থাগুলোকে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের টার্গেট করতে ব্যবহার করা হচ্ছে।
একটি পিটিশনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৪ সালের পর থেকে সিবিআই ও ইডির ৯৫ শতাংশ মামলাই বিরোধী নেতাদের বিরুদ্ধে হয়েছে। এটি কংগ্রেস আমলের তুলনায় যথাক্রমে ৬০ এবং ৫৪ শতাংশ পয়েন্ট বেশি। ২০২৪ সালের নির্বাচনের আগে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল, উপ-মুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসোদিয়া ও ঝাড়খণ্ডের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনসহ একাধিক বিরোধী নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গত ১২ বছরে অন্তত ১২ জন বিরোধী মন্ত্রীকে ৩০ দিনের বেশি সময়ের জন্য হাজতে রাখা হয়েছে।
সূত্র : আলজাজিরা।