গলফ ক্লাবে যাওয়ার পথে ট্রাম্পের চোখে পড়ে গৃহহীনদের তাঁবু, পোস্টের পর উচ্ছেদ

গলফ ক্লাবে যাওয়ার পথে গাড়ি থেকে ওয়াশিংটনের একটি পার্কে গৃহহীনদের তাবু দেখে ক্ষুব্ধ হন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মুহূর্তের মধ্যে তিনি ট্রুথ সোশ্যালে চারটি ছবি পোস্ট করে লেখেন, ‘গৃহহীনদের অবিলম্বে সরাতে হবে।’
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওই ছবিগুলোর একটিতে ছিলেন ৬৬ বছর বয়সী গৃহহীন বিল থিওডি। ট্রাম্পের পোস্টের চার দিন পর তাকেসহ আরো কয়েকজন গৃহহীনকে তাদের তাঁবু সরিয়ে নিতে বাধ্য করা হয়।
থিওডি বলেন, ‘অবিশ্বাস্য! প্রেসিডেন্ট গাড়ি থেকে ছবি তুলে আমাকে নেতিবাচকভাবে ব্যবহার করলেন। এটা তার রাজনৈতিক হাতিয়ার ছাড়া কিছু নয়।’
হোয়াইট হাউসে সোমবার সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প ঘোষণা দেন, ‘আমরা আমাদের সুন্দর পার্কগুলো থেকে গৃহহীনদের তাঁবু উচ্ছেদ করছি। এখানে আর বস্তি থাকতে দেওয়া হবে না।’
এর পরই দ্রুত অভিযানে নামে স্থানীয় প্রশাসন। সাধারণত নোটিশ দিয়ে অন্তত এক সপ্তাহ সময় দেওয়া হয়, কিন্তু এবার ট্রাম্পের ঘোষণার পর সেই প্রক্রিয়া শেষ হয় চার দিনেই। বৃহস্পতিবার সকালেই বুলডোজার পাঠিয়ে তাঁবু ও গৃহহীনদের সামগ্রী সরানো হয়।
থিওডি বলেন, ‘আমাদের বলা হলো দ্রুত সরতে হবে, নইলে সব কিছু গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে।
আলোচনার সুযোগ ছিল না।’
ওয়াশিংটনের হেলথ অ্যান্ড হিউম্যান সার্ভিস ডিপার্টমেন্টের ডেপুটি মেয়র ওয়েন টার্নেজ বলেন, ‘এ ধরনের উচ্ছেদ নতুন নয়, তবে এবার তা দ্রুত করা হয়েছে।’ স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানায়, এটি শহরের সবচেয়ে বড় গৃহহীন শিবির ছিল, যেখানে অন্তত ১১ জন থাকত।
তথ্য বলছে, ২০২৫ সালে ওয়াশিংটন ডিসিতে গৃহহীন মানুষের সংখ্যা কমে ৫ হাজার ১৩৮ জনে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৮০০ জন পুরোপুরি আশ্রয়হীন।
বাকিরা অস্থায়ী আশ্রয়ে থাকে।
হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, উচ্ছেদ হওয়া মানুষদের আশ্রয়কেন্দ্রে রাখা হবে এবং প্রয়োজনে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা বা নেশা নিরাময় সেবাও দেওয়া হবে। তবে আশ্রয়ে যেতে অস্বীকৃতি জানালে জরিমানা কিংবা কারাদণ্ডের মুখোমুখি হতে হবে।
তবে উচ্ছেদ হওয়া থিওডি তা মানছেন না। তার ভাষায়, ‘জোর করে কাউকে আশ্রয়ে নেওয়া যায় না। আশ্রয়কেন্দ্রগুলো খারাপ জায়গা।’
উচ্ছেদের পর তিনি একজন দাতার সহায়তায় ভার্জিনিয়ার একটি মোটেলে তিন রাত কাটিয়েছেন। থিওডি বলেন, ‘শয্যায় ঘুমানো, গোসল করা, ব্যক্তিগত টয়লেট ব্যবহার করা—এটা অসাধারণ অনুভূতি। তবে এরপর কোথায় যাব, জানি না। হয়তো আবার নতুন জায়গায় তাঁবু ফেলতে হবে।’
তার মতো একই অভিজ্ঞতার মধ্যে পড়েছেন ৬৫ বছর বয়সী জর্জ মরগানও। মাত্র দুই মাস আগে ভাড়া দিতে না পারায় তিনি রাস্তায় নেমেছিলেন। তিনিও এখন এক দাতার সহায়তায় মোটেলে আছেন, কিন্তু এরপর কী হবে তা অনিশ্চিত। মরগানের ভাষায়, ‘আমার কোনো টাকা নেই। সৃষ্টিকর্তাই দেখবেন এবার কিভাবে চলব।’