কাশ্মীরে অরুন্ধতী রায়ের বিখ্যাত বইসহ ২৫ বই নিষিদ্ধ করল ভারত

কাশ্মীরে বুকার পুরস্কার জয়ী অরুন্ধতী রায়ের বইসহ ২৫টি বই নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। কর্তৃপক্ষের দাবি এ বইগুলোর শিরোনাম মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলটিতে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদ উষ্কে দিচ্ছে’।
সরকারি আদেশে বইগুলোর লেখকদের বিরুদ্ধে কাশ্মীর সম্পর্কে ‘মিথ্যা বর্ণনা’ প্রচার করার অভিযোগ আনা হয়েছে। একই সঙ্গে তারা ভারতীয় রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ‘যুবকদের বিভ্রান্ত করতে, সন্ত্রাসবাদকে মহিমান্বিত করতে ও সহিংসতা উস্কে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে’ বলে অভিযোগ আনা হয়েছে।
ফেব্রুয়ারিতে কর্তৃপক্ষ বইয়ের দোকান ও বাড়ি থেকে ইসলামী সাহিত্য জব্দ করার নির্দেশের পর এমন আদেশ আসলো।
১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে কাশ্মীর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বিভক্ত ও উভয় দেশই হিমালয় অঞ্চলটির সম্পূর্ণ মালিকানা দাবি করে।
বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো ১৯৮৯ সাল থেকে কাশ্মীরের ভারতীয় শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ চালিয়ে আসছে। তারা স্বাধীনতা অথবা পাকিস্তানের সঙ্গে এর একীভূতির দাবি করে।
নয়াদিল্লির সরাসরি শাসন আরোপের ছয় বছর পূর্তিতে মঙ্গলবার এ আদেশ জারি করা হয়। যদিও এ নিষেধাজ্ঞা আরো ব্যাপকভাবে নজরে আনতে সময় লেগেছে।
প্রধান ধর্মীয় নেতা ও বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা মিরওয়াইজ ওমর ফারুক বলেছেন, ‘এ নিষেধাজ্ঞা মূলত এ ধরনের কর্তৃত্ববাদী কর্মকাণ্ডের পিছনে থাকা ব্যক্তিদের নিরাপত্তাহীনতা বোধ ও সীমিত বোধগম্যতাকেই কেবল প্রকাশ করে।’
তিনি আরো বলেন, ‘পণ্ডিত ও খ্যাতিমান ইতিহাসবিদদের বই নিষিদ্ধ করলে ঐতিহাসিক তথ্য ও কাশ্মীরের মানুষের জীবন্ত স্মৃতির ভাণ্ডার মুছে যাবে না।’
নয়াদিল্লির সরাসরি নিয়ন্ত্রণে আনার পর গত নভেম্বরে কাশ্মীর তার প্রথম সরকার নির্বাচিত করে। ভোটাররা বিরোধী দলগুলোকে আঞ্চলিক পরিষদের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য দাবি করে। তবে স্থানীয় সরকারের ক্ষমতা সীমিত ও বাস্তবিক অর্থে অঞ্চলটি নয়াদিল্লি-নিযুক্ত একজন প্রশাসক দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে।
নিষেধাজ্ঞায় ২৫টি বইয়ের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে যা, ‘মিথ্যা আখ্যান ও বিচ্ছিন্নতাবাদ প্রচার করে এমন’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে অরুন্ধতী রায়ের ২০২০ সালের প্রবন্ধের বই ‘আজাদি: স্বাধীনতা, ফ্যাসিবাদ, কল্পকাহিনী’।
৬৩ বছর বয়সী অরুন্ধতী রায় ভারতের অন্যতম জনপ্রিয় একজন জীবন্ত লেখক।
তবে তার কাজ ও লেখনি—বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকারের কঠোর সমালোচনা দেশটিতে তাকে ঘিরে বিভাজন তৈরি করেছে।
নিষিদ্ধ অন্যান্য বইয়ের মধ্যে রয়েছে শিক্ষাবিদদের লেখা বই, যাদের মধ্যে ভারতের অন্যতম প্রধান সংবিধান বিশেষজ্ঞ এ.জি. নূরানী ও লন্ডন স্কুল অফ ইকোনমিক্সে রাষ্ট্রবিজ্ঞান শিক্ষক সুমন্ত্র বোসও রয়েছেন।
ইতিহাসবিদ সিদ্দিক ওয়াহিদ বলেন, এ আদেশ সংবিধানের লঙ্ঘন, ‘যা বাক ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা দেয়’।
ওয়াহিদ এএফপিকে আরো বলেন, ‘নিষিদ্ধ বইয়ের তালিকায় এমন অনেক বই রয়েছে, যেগুলোর লেখক ও প্রকাশকরা যুক্তি, তথ্য ও প্রমাণের মাধ্যমে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করেছেন। সেটার আর কি গুরুত্ব আছে আজকাল?’