ফ্রান্স-ব্রিটেন নতুন অভিবাসন চুক্তি কার্যকর হচ্ছে শিগগিরই

চলতি বছরের জুলাইয়ের শুরুতে ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে হওয়া নতুন দ্বিপক্ষীয় চুক্তিটি শিগগিরই কার্যকর হবে বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ সরকার। লন্ডন জানিয়েছে, এই উদ্যোগ অনিয়মিত অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ ও মানবপাচার চক্র ভেঙে দেওয়ার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। ইউরোপীয় কমিশন ও ইইউ সদস্য দেশগুলো মঙ্গলবার এই চুক্তিটির চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে। তাই দ্রুত চুক্তিটি কার্যকর করতে চায় ব্রিটিশ সরকার।
ব্রিটিশ সরকার জানিয়েছে, এর আওতায় ইংলিশ চ্যানেল পেরিয়ে ছোট নৌকায় যুক্তরাজ্যে পৌঁছনো কিছু অভিবাসীকে কয়েক দিনের মধ্যেই ফ্রান্সে ফেরত পাঠানো শুরু হবে। এ ছাড়া ফ্রান্সে অবস্থানরত যেসব অভিবাসীর পরিবারের সদস্যরা বৈধভাবে যুক্তরাজ্যে আছে এবং আশ্রয়ের আবেদন করতে চায়, তাদের গ্রহণ করবে লন্ডন। বিনিময়ে যুক্তরাজ্যে যাওয়া অনিয়মিত অভিবাসীদের একটি নির্দিষ্ট সংখ্যাকে ফিরিয়ে নেবে প্যারিস।
এই পাইলট প্রকল্পকে বলা হচ্ছে ‘একজনের বদলে একজন’ পরিকল্পনা।
গত মাসে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ ও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার এই ‘ওয়ান ইন, ওয়ান আউট’ প্রকল্প ঘোষণা করেন।
চলতি বছর এখন পর্যন্ত ২৫ হাজারেরও বেশি মানুষ ছোট নৌকায় করে ইংলিশ চ্যানেল পেরিয়ে যুক্তরাজ্যে পৌঁছেছে। গত বছরের জুলাইয়ে ক্ষমতা নেওয়ার সময় স্টারমার মানবপাচার চক্র ভাঙার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে এই উদ্যোগকে।
তবে রাজনৈতিক চাপের মুখে রয়েছেন কিয়ার স্টারমার।
গত বছর নির্বাচনে বড় জয়ের পরও তার জনপ্রিয়তা কমেছে। বিশেষ করে অভিবাসনবিরোধী রিফর্ম ইউকে পার্টির নেতা নাইজেল ফারাজের সমর্থন বেড়েছে। যার ফলে ছোট নৌকা ঠেকানো নিয়ে সরকার প্রচণ্ড চাপে রয়েছে।
এদিকে অভিবাসন ইস্যুতে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় সম্প্রতি একাধিক বিক্ষোভ হয়েছে। যেখানে অভিবাসনবিরোধী ও অভিবাসীদের পক্ষে থাকা মানুষরা পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পালন করেছে।
ফরাসি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ব্রুনো রোতাইয়ো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে জানিয়েছেন, এই নতুন চুক্তির প্রধান লক্ষ্য হলো পাচারকারী চক্রগুলোকে দুর্বল করা। অন্যদিকে ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইভেট কুপার স্কাই নিউজকে বলেন, ‘প্রথমে অল্পসংখ্যক মানুষ ফেরত পাঠানো শুরু হবে, পরে সেটি ধীরে ধীরে বাড়ানো হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘যারা সম্প্রতি ছোট নৌকায় এসেছে, শুধু তাদেরই এই চুক্তির আওতায় ফ্রান্সে ফেরত পাঠানো হবে। যারা ইতিমধ্যে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছে, তারা এর আওতায় পড়বে না।’
সরকারি সূত্র অনুসারে, প্রতি সপ্তাহে প্রাথমিকভাবে প্রায় ৫০ জনকে ফ্রান্সে ফেরত পাঠানো হতে পারে, বছরে যা দাঁড়াবে দুই হাজার ৬০০ জনে। তবে ২০২৪ সালে ৩৫ হাজারেরও বেশি অভিবাসী চ্যানেল পেরিয়ে যুক্তরাজ্যে গিয়েছে। সে ক্ষেত্রে অনেকে মনে করছেন, এই উদ্যোগ যথেষ্ট নয় এবং এটি পাচারকারীদের জন্য কার্যকর বার্তা হতে পারবে না। তবে কুপার বলছেন, ‘ফ্রান্সের সঙ্গে এই নতুন সমঝোতা সরকারের বৃহত্তর পরিকল্পনার একটি অংশ মাত্র।’
এই বৃহত্তর পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে পাচারকারীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত অবৈধ বিজ্ঞাপন বন্ধে অভিযান এবং অভিবাসীদের প্রতিশ্রুত অবৈধ কাজ প্রতিরোধে ফুড ডেলিভারি কম্পানিগুলোর সঙ্গে সমন্বয়।
এই চুক্তিটি গত সপ্তাহে স্বাক্ষরিত হলেও সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে তা প্রকাশ করেনি। ইউরোপীয় কমিশন ও ইইউ সদস্য দেশগুলো মঙ্গলবার এর অনুমোদন দিয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
সূত্র : ইনফোমাইগ্রেন্টস