খলনায়ক নন, ওভালের নাটকীয় জয়ের নায়ক সিরাজ

টেস্ট ক্রিকেটের সৌন্দর্য এমনই। বোঝার উপায় থাকে না জয়ের পাল্লা কার দিকে কখন ঝুঁকে যায়। পাঁচদিনের ম্যাচটি যে ক্ষণে ক্ষণে রং বদলায়। ইংল্যান্ড-ভারত সিরিজের ওভাল টেস্টটিও তেমনি রং বদলেছে।
খলনায়ক হতে হতে নায়ক বনে গেলেন মোহাম্মদ সিরাজ।
অন্যদিকে জোড়া সেঞ্চুরি করে ম্যাচ বের করে নিয়েও শেষে পরাজিত দলের সঙ্গী হলেন জো রুট-হ্যারি ব্রুক। রুদ্ধশ্বাস টেস্টে ৬ রানে হেরেছে ইংল্যান্ড। এ জয়ে সিরিজে সমতায় ফিরেছে ভারত।
জেমস অ্যান্ডারসন-শচীন টেন্ডুলকার ট্রফির পাঁচ ম্যাচের সিরিজটি ড্র হয়েছে ২-২।
শেষ দিনে নাটকীয় কিছুর অপেক্ষায় ছিল ওভালের দর্শকেরা। তবে প্রথম দুই বলে চার মেরে নিজেদের লক্ষ্যটা কি সেটা যেন জানিয়ে দেয় ইংল্যান্ড। প্রসিদ্ধ কৃষ্ণাকে টানা দুই চার মেরে স্বাগতিকদের দারুণ শুরু এনে দেন জেমি ওভারটন।
অবশ্য ভারতও ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নয়। পঞ্চম দিনের দ্বিতীয় ওভারে বোলিংয়ে এসে ইংল্যান্ডের শেষ স্বীকৃতি ব্যাটার জেমি স্মিথকে উইকেটরক্ষক ধ্রুব জুরেলের ক্যাচ বানান মোহাম্মদ সিরাজ। পরের বলেই আবার গাস অ্যাটকিনসনকেও প্রায় আউট করেছিলেন ভারতীয় পেসার। স্লিপে দাঁড়ানো লোকেশ রাহুল ক্যাচটা মুঠোবন্দি করার আগেই অল্প একটু সামনে ড্রপ খাওয়ায় তা আর হয়নি।
তবে ঠিকই জমতে থাকে ম্যাচ।
জমানোর কারিগর সিরাজ। দিনের প্রথম উইকেট নেওয়ার পর যে দ্বিতীয়টিও তিনিই নেন। ওভারটনকে এলবিডব্লউয়ের ফাঁদে ফেলার সময় অবশ্য ভাগ্যের ছোঁয়া পেয়েছেন। আম্পায়ার কুমার ধর্মসেনা আউট না দিলে যে ওভারটনকে ড্রেসিংরুমের পথ দেখানো যেত না। তাই রিভিউ নিয়েও নিজের ‘জীবন’ বাঁচাতে পারেননি ইংল্যান্ডের ব্যাটার।
সেই রেশ কাটতে না কাটতেই ইংল্যান্ডের নবম উইকেট তুলে নেন কৃষ্ণা। জশ টাংকে দুর্দান্ত এক ইয়র্কার দিয়ে। এতে দলকে উদ্ধার করতে ভাঙা হাত নিয়ে মাঠে নামতে হয় ক্রিস ওকসকে। শেষ উইকেটে সমীকরণ দাঁড়ায় ১৭ রানের। এই সমীকরণে ভারতকে ম্যাচ জিতিয়েই দিয়েছিলেন গতকাল সেঞ্চুরিয়ান হ্যারি ব্রুকের ক্যাচ ছেড়ে দিয়ে ‘খলনায়ক’ হওয়ার পথে থাকে সিরাজ।
কিন্তু কাউ কর্নারে গাস অ্যাটকিনসনের ক্যাচটা তালুবন্দি করতে ব্যর্থ হন আকাশ দীপ। ক্যাচ মিস আবার ছক্কাও হয়। তাতে সমীকরণ নেমে আসে ১১ রানের। অ্যাটকিনসন জীবন পেলেও পরে আর দলকে জেতাতে পারেননি। জয়ের জন্য যখন ৭ রান প্রয়োজন ঠিক তখনই দারুণ এক ইয়র্কারে তার স্টাম্প ভেঙে ফেলেন সিরাজ। তাতে ‘খলনায়ক’ থেকে নায়ক বনে যান ভারতীয় পেসার। ক্যাচ মিসের প্রায়শ্চিত্ত করে তুলে নেন ৫ উইকেট।
অ্যাটকিনসন বোল্ড হতেই আনন্দে আটখানা হয়ে যান ভারতীয় ক্রিকেটাররা। আর সিরাজ বনে যান ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। বোল্ড করার পর যে পর্তুগিজ তারকার ট্রেডমার্ক সেলিব্রেশন ‘সিইউ’ করেন তিনি।
৩৭৪ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে আজ শেষ দিনে ৩৫ রান প্রয়োজন ছিল ইংল্যান্ডের। হাতে ছিল ৪ উইকেট। তবে সিরাজের তোপে সমীকরণ মেলাতে পারেনি স্বাগতিকেরা। ৩৬৭ রানে অলআউট হয় ইংল্যান্ডে। দুই ইনিংসে ৯ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা হন সিরাজ। সিরিজসেরা হয়েছেন যৌথভাবে শুবমান গিল ও ব্রুক। ৪ সেঞ্চুরিতে ভারতের অধিনায়ক করেন ৭৫৪। অন্যদিকে দুই সেঞ্চুরিতে ৪৮১ রান করেন ব্রুক।