চার বছর ধরে চলচ্চিত্রে ডাক পান না অভিনেত্রী নাসরিন

ঢাকাই চলচ্চিত্রের পরিচিত অভিনেত্রী নাসরিন। এখন পর্যন্ত এই অভিনেত্রী ৫০০-এর অধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। কিন্তু এখন আর তাকে চলচ্চিত্রে ডাকা হয় না। নাসরিনের ভাষ্য, গত চার বছর ধরে তিনি কোনো চলচ্চিত্রে কাজ করেননি।
এর কারণ হিসেবে অবশ্য তিনি চলচ্চিত্র নির্মাণ কমে যাওয়াকেই দায়ী করছেন।
১৯৯২ সালে সোহানুর রহমান সোহানের ‘লাভ’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে চলচ্চিত্র শিল্পে তার যাত্রা শুরু করেন। প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি নিয়ে তথ্যগত বিভ্রান্তি রয়েছে। লাভ সিনেমার পাশাপাশি ১৯৯২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘অগ্নিশপথ’ ছবিও তার প্রথম ছবি হিসেবে বলা হয়।
তবে দিলদারের সঙ্গে অভিনয় করে দেশব্যাপী ব্যাপক পরিচিতি পান এই অভিনেত্রী।
নাসরিন বলছেন, ‘আমি ২০১৯ সালের দিকে একটি চলচ্চিত্রে কাজ করেছিলাম। করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর সেটা বন্ধ হয়ে যায়। এরপর সেই ছবি বাকি কাজ হয়েছে ২০২১ সালে।
ওটাই আমার শেষ কাজ এরপর নতুন কোনো চলচ্চিত্রে আমি কাজ করিনি, আমাকে আসলে ডাকা হয়নি।’
কেন নতুন চলচ্চিত্রে কাজ পাচ্ছেন না এমন প্রশ্নের জবাবে নাসরিন বলেন, ‘এখন তো আমাদের দেশে চলচ্চিত্রই কম হচ্ছে। আর যেসব হচ্ছে সেসব ছবিতে ডিরেক্টর তাদের পছন্দের মানুষদের নিয়ে কাজ করছেন। যদি চলচ্চিত্রের কাজ বেশি হতো, বেশি সিনেমা বানানো হতো তাহলে হয়তো সুযোগ পেতাম। সেটা তো হচ্ছে না।’
নাসরিনের চেয়েও বেশি ভুগছেন জুনিয়র শিল্পীরা। যারা ছোট খাটো চরিত্রে কাজ করতেন। তারা এখন কাজ না পেয়ে অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন বলে জানালেন এই অভিনেত্রী। কালের কণ্ঠের সঙ্গে আলাপকালে নাসরিন বলেন, ‘দেখেন আমরা যখন চলচ্চিত্রে কাজ করেছি, কিছু সঞ্চয় করেছি। সেই সঞ্চয় দিয়ে আমি কিছু জমি কিনেছি। সেই জমি এমন জায়গায় যেটা সে অর্থে কাজে লাগছে না। তাই কমমূল্যে কিছু কোম্পানিকে ভাড়া দিয়েছি। আমার স্বামী সেসব দেখাশোনা করছে। সেই ভাড়া থেকে যা আসে, তাতে করে কোনো রকম সংসার চলে যাচ্ছে। আমার বাচ্চা দুইটা, তাদের স্কুল, পড়াশোনা এসব কোনো রকম সমান সমান মেটাতে পারছি। জানি না সামনে কী হবে। তবে চলচ্চিত্রের একটা বড় অংশ হচ্ছে জুনিয়র শিল্পী। যারা খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছে, তাদের মধ্যে অনেকেই চিকিৎসার অভাবে মারাও গেছেন।’
নাসরিন এক সময় জুনিয়র শিল্পীদের সহায়তাও করতেন জানালেন। চলচ্চিত্রে কাজ না থাকলেও সার্কাস কিংবা মঞ্চে পারফর্ম করে মোটামুটি একটা আয় করা যেত। কিন্তু দেশের এই পরিস্থিতিতে সেসবও প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে বলে জানালেন।
নাসরিন বললেন, ‘আমি মাসে মাসে কিছু শিল্পীকে সামান কিছু করে টাকা দিতে পারতাম। কিন্তু কাজ না থাকায় সেটাও পারছি না। চলচ্চিত্রে কাজ না থাকায় মঞ্চে ও সার্কাসেও পারুফর্ম করতাম। কিন্তু দেশের যা অবস্থা সেটাও থামকে গেছে। আপনার সঙ্গে আলাপের কয়েকদিন আগেও সিরাজগঞ্জে একটা মঞ্চ প্রোগ্রামের জন্য ডাকা হলো, পরে জানানো হলো সেটার জন্য অনুমতি পাওয়া যায়নি। দেশের এই অবস্থায় কোনো আয়োজনের অনুমতি পাওয়া যাচ্ছে না।’
আসন্ন সময়ে চলচ্চিত্রে নিয়ে তেমন কোনো সম্ভাবনাও দেখেন না এই অভিনেত্রী। ফলে চলচ্চিত্র নিয়ে আশায় বুক বাঁধার উপায় নেই। নাসরিনের ভাষ্য, ‘দেশের চলচ্চিত্র এখন যে অবস্থায় গেছে, মনে হয় না এটার আর কোনো সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে এখন এই শিল্পে অন্ধকার দেখা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।’
জনপ্রিয় কৌতুক অভিনেতা দিলদারের সহশিল্পী হিসেবে যার নাম সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয় তিনি অভিনেত্রী নাসরিন। এ দেশের চলচ্চিত্রে নায়ক-নায়িকা জুটির বাইরে গিয়ে প্রথমবারের মতো আলোচিত জুটি হয়েছিলেন দিলদার-নাসরিন জুটি। এই জুটি সিনেমাপ্রেমীদের নিকট যেমন গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছিল, তেমনই বেশ বিনোদিত করেছিল।