img

একজন শিল্পী বাধ্য হয়ে নিজের আঁকা ছবি ধ্বংস করে সেগুলোর ফ্রেমের কাঠ পুড়িয়ে পরিবারের জন্য রুটি বানাচ্ছেন। প্রায় দুই বছরব্যাপী ইসরায়েলের যুদ্ধে বিপর্যস্ত গাজা উপত্যকায় ছয় মাস ধরে খাদ্য, জ্বালানি বা চিকিৎসার সুযোগ নেই। সেখান থেকে ইনস্টাগ্রামে প্রকাশিত এক ভিডিওতে ৪৩ বছর বয়সী চিত্রশিল্পী ও পাঁচ সন্তানের বাবা তাহা হুসেইন আবু ঘালিকে নিজের আঁকা ছবি ছিঁড়ে আগুন জ্বালিয়ে রুটি বানাতে দেখা যায়।

ভিডিওতে আরো দেখা যায়, তিনি ছবি কাটছেন, কাঠের ফ্রেম ভাঙছেন এবং স্তূপ করে রাখছেন।

 

আবু ঘালি বলেন, ‘এগুলো ছিল আমার সবচেয়ে সুন্দর সব ছবি, আল্লাহ সাক্ষী। এগুলো ছিল হৃদয়ের সংগীতের মতো। আর এখন আমি এগুলো ভেঙে আগুন দিচ্ছি। কারণ শিল্প এখন রুটিতে রূপ নিয়েছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমরা বাধ্য হচ্ছি, হৃদয়ে কষ্ট নিয়ে এই ছবিগুলো পুড়িয়ে ফেলার জন্য। আমাদের কাছে কোনো জ্বালানি নেই, বিদ্যুৎ নেই, গ্যাস নেই—কিছুই নেই। ভাগ্য ভালো হলে হয়তো সামান্য আটা বা বুলগার পাওয়া যায়। কিন্তু রান্নার মতো কিছু নেই।

 

তাই কাঠ নিয়ে এসে রুটি বানাচ্ছি। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।’

 

টিআরটি ওয়ার্ল্ডকে ফোনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে হুসেইন বলেন, ‘সত্যি বলতে, আমরা না খেয়ে মরার এক ধাপ দূরে দাঁড়িয়ে আছি। এখনো টিকে আছি, কিছু বন্ধুর সহায়তায়। কিন্তু মানবিক পরিস্থিতি ভয়াবহ।

 

আমরা গণমৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে আছি।’

একাদশবারের মতো বাস্তুচ্যুত হয়ে তিনি ও তার পরিবার বর্তমানে খান ইউনিসের পশ্চিমে আসদা শহরে একটি তাঁবুতে আশ্রয় নিয়েছেন। কী কারণে তিনি নিজের ২০টিরও বেশি ছবি পুড়িয়ে ফেললেন—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এক কেজি কাঠের দাম আট শেকেল। আর দিনে অন্তত তিন কেজি কাঠ লাগে রুটি বানাতে বা সামান্য কিছু রান্না করতে। দরজা, ক্যাবিনেট, এমনকি বাচ্চাদের ডেস্ক পুড়িয়ে ফেলার পর ছবি ছাড়া আর কিছুই বাকি ছিল না।’

 

তাহা হুসেইন আবু ঘালি বিমূর্ত ও কিউবিস্ট ধারার প্রভাব নিয়ে কাজ করেন। তার রয়েছে মানসিক স্বাস্থ্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি এবং শিল্প, শিক্ষা ও মানবিকতায় ডিগ্রি। আর্ট থেরাপি বিষয়ে গবেষক হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি তিনি আল-নাসর মডেল স্কুলে আরবি ক্যালিগ্রাফি, শিল্প ও কারুশিল্প পড়ান।

এদিকে ইসরায়েলের লাগাতার বোমাবর্ষণের পাশাপাশি মানবিক বিপর্যয় গাজায় অপুষ্টির হারকে ‘উদ্বেগজনক মাত্রায়’ নিয়ে গেছে বলে রবিবার সতর্ক করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। সংস্থাটি বলেছে, ‘গাজা উপত্যকায় অপুষ্টি ভয়াবহ গতিতে বাড়ছে, জুলাই মাসে মৃত্যুর সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে।’

২০২৫ সালে রেকর্ডকৃত ১১৬টি অপুষ্টিজনিত মৃত্যুর মধ্যে ৬৩টি ঘটেছে শুধু জুলাই মাসেই। মৃতদের মধ্যে ছিল পাঁচ বছরের নিচে ২৪ শিশু, পাঁচ বছরের বেশি বয়সী এক শিশু ও ৩৮ জন প্রাপ্তবয়স্ক।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর শুরু হওয়া ইসরায়েলি অভিযানে এখন পর্যন্ত প্রায় ৬০ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।

সূত্র : এনডিটিভি

এই বিভাগের আরও খবর