img

থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে বৃহস্পতিবার এক দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী সামরিক সংঘর্ষ হয়েছে। একটি বিতর্কিত সীমান্ত অঞ্চলে এ সংঘর্ষে উভয় পক্ষের ট্যাংক, কামান ও স্থল বাহিনীর সংঘর্ষে কমপক্ষে ১২ জন নিহত হয়েছে।

থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়ার ও লাওসের সীমানা মিলিত হওয়া এমেরাল্ড ট্রায়াঙ্গেল নামে পরিচিত একটি অঞ্চল নিয়ে এ সংঘর্ষ—দেশ দুটির মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী বিরোধের একটি নাটকীয় বৃদ্ধির ইঙ্গিত দিচ্ছে।

শতাব্দী প্রাচীন এই বিরোধ ১৫ বছরেরও বেশি সময় আগে রক্তাক্ত সংঘর্ষে রূপ নিয়েছিল।

 

তবে গত মে মাসে গোলাগুলিতে এক কম্বোডিয়ান সেনা নিহত হওয়ার পর এটি আবারও রক্তাক্ত সংঘর্ষে রূপ নেয়।

 

এদিকে বৃহস্পতিবারের সংঘর্ষে কম্বোডিয়া থাইল্যান্ডে রকেট ও কামানের গোলা নিক্ষেপ করে ও থাই সামরিক বাহিনী এফ-১৬ জেট বিমান দিয়ে হামলা চালায়। থাই জনস্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এতে একজন সেনা ও কমপক্ষে ১১ জন বেসামরিক লোক নিহত হয়েছে। এদের মধ্যে বেশির ভাগই সিসাকেট প্রদেশের একটি পেট্রল স্টেশনের কাছে রকেট হামলায় নিহত হয়েছে।

 

 

ঘটনাস্থলের ফুটেজে পেট্রল স্টেশনের সঙ্গে সংযুক্ত একটি দোকান থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখা গেছে। প্রাদেশিক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, হামলার সময় নিহতদের বেশির ভাগই দোকানের ভেতরে থাকা শিক্ষার্থী ছিল।

যে পেট্রল স্টেশনটিতে আঘাত হেনেছে, সেখান থেকে প্রায় ৩০০ মিটার দূরে অন্য একটি পেট্রল স্টেশনে জ্বালানি ভরছিলেন সিসাকেট প্রদেশের ৫৩ বছর বয়সী প্রফাস ইন্তারাচেউন। তিনি এএফপিকে বলেন, ‘আমি তিন-চারবার বিকট শব্দ শুনতে পেয়ে তাকিয়ে বিশাল একটি ধোঁয়ার মেঘ দেখতে পাই।

 

আমি একেবারে হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম। এই প্রথমবার আমি এমন কিছু দেখেছি। রাতে যখন কিছুই দেখা যাবে না, তখন এটি আরো বাড়তে পারে। আমি ঘুমানোর সাহসও পাচ্ছি না।’

 

থাই জনস্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ৩৫ জন বেসামরিক লোক এই হামলায় আহত হয়েছে।

 

 

থাই সেনাবাহিনী জানিয়েছে, ছয়টি স্থানে সংঘর্ষ হয়েছিল। স্থল সেনা ও ট্যাংকগুলো অঞ্চল নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার জন্য কম্বোডিয়ান বাহিনীর সঙ্গে লড়াই করছে। থাই সামরিক বাহিনীর উপমুখপাত্র রিচা সুকসুওয়ানন জানিয়েছে, ছয়টি থাই বিমানবাহিনীর জেট মোতায়েন করা হয়েছিল, যা কম্বোডিয়ার ‘দুটি সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে’ আঘাত করেছে।

কম্বোডিয়া তাদের পক্ষের হতাহতের বিষয়ে এখনো কোনো মন্তব্য করেনি। এক সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে উত্তর দিতে অস্বীকৃতি জানান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মালি সোচেতা।

সীমান্ত এলাকায় অবস্থিত দুটি মন্দিরের কাছে সংঘটিত এ সংঘর্ষের জন্য উভয় পক্ষই একে অপরকে দায়ী করেছে।

কম্বোডিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তাদের বাহিনী সশস্ত্র হামলার বিরুদ্ধে আত্মরক্ষার জন্য প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন মানেত এ ‘সামরিক আগ্রাসন’ মোকাবেলায় জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠক আহ্বান করেছেন।

অন্যদিকে থাইল্যান্ডের সরকার কম্বোডিয়াকে অমানবিক, নৃশংস ও যুদ্ধের জন্য ক্ষুধার্ত বলে অভিযুক্ত করে জানিয়েছে, সব সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ও কাছাকাছি বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

কম্বোডিয়ার সেনারা প্রথমে গুলি চালিয়েছে ও পরে বেসামরিক নাগরিকদের হামলার লক্ষ্যবস্তু করেছে—এমন অভিযোগ করে থাই সেনাবাহিনী জানিয়েছে, দুটি বিএম-২১ রকেট সুরিন প্রদেশের একটি সম্প্রদায়ের ওপর আঘাত করেছে ও তিনজন আহত হয়েছে।

নম পেনে থাইল্যান্ডের দূতাবাস তাদের নাগরিকদের যত দ্রুত সম্ভব কম্বোডিয়া ত্যাগ করার আহ্বান জানিয়েছে।

কম্বোডিয়ার ঘনিষ্ঠ মিত্র চীন এ সংঘর্ষের ব্যাপারে গভীরভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করে সংলাপের আহ্বান জানিয়েছে। কম্বোডিয়া তার নাগরিকদের থাইল্যান্ডের সীমান্ত এড়িয়ে চলার আহ্বান জানিয়েছে।

স্থলমাইন বিস্ফোরণে থাই সামরিক বাহিনীর পাঁচ সদস্য আহত হওয়ার পর থাইল্যান্ড কম্বোডিয়ার রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার ও কম্বোডিয়া থেকে নিজস্ব রাষ্ট্রদূতকে প্রত্যাহার করার কয়েক ঘণ্টা পরেই এ সহিংসতা শুরু হয়।

কম্বোডিয়া বৃহস্পতিবার তার কূটনীতিকদের একজন ছাড়া বাকি সবাইকে প্রত্যাহার করে নেয় ও নম পেন থেকে তাদের থাই সমকক্ষদের বহিষ্কার করে।

মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম উভয় পক্ষকে ‘নিরস্ত্র’ হয়ে আলোচনা শুরু করার আহ্বান জানিয়েছেন। মালয়েশিয়া বর্তমানে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সংস্থা আসিয়ানের সভাপতিত্ব করছে। থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া উভয়ই আসিয়ানের সদস্য।

সূত্র : এএফপি

 

এই বিভাগের আরও খবর