নাগরিকদের ওপর নজরদারি করতে নতুন অ্যাপ আনছে রাশিয়া?

সেপ্টেম্বর থেকে রাশিয়ার বাজারে আসতে যাওয়া সব ধরনের ডিজিটাল ডিভাইসে নতুন একটি মেসেঞ্জার অ্যাপ থাকবে। এর মাধ্যমে ক্রেমলিন রুশ জনসাধারণের ওপর গুপ্তচরবৃত্তি করতে পারবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। এনডিটিভি এক প্রতিবেদনে বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানিয়েছে।
দি ইন্ডিপেনডেন্টের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, এ বছরের সেপ্টেম্বর থেকে রাশিয়ার বাজারে বিক্রি হতে যাওয়া সব ধরনের ডিভাইসে ম্যাক্স নামের অ্যাপটি ইনস্টল করা থাকবে।
অ্যাপটি বার্তা প্রদান ও ভিডিও কল পরিষেবার পাশাপাশি সরকারি পরিষেবা, মোবাইল পেমেন্ট সেবাসহ একটি বিস্তৃত সুবিধাসম্পন্ন হবে।
তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, অ্যাপটির অভ্যন্তরে এমন সফ্টওয়্যার রয়েছে যা ‘গুপ্তচরবৃত্তি’ করতে পারে। যা রাশিয়ার নিরাপত্তা পরিষেবা এফএসবিকে একটি কঠোর নজরদারি কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ দেবে। অ্যাপটির সার্ভার রাশিয়ায় অবস্থিত হওয়ায় এটি রুশ আইনের অধীন হবে ও এফএসবিকে নির্দিষ্ট কিছু বিষয়ে প্রবেশাধিকার অনুমতি দেবে বলে ব্যাখ্যা করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
প্রতিবেদনটিতে আরো বলা হয়েছে, নতুন অ্যাপটি চালু হওয়ার পর দেশটিতে ৭০ শতাংশেরও বেশি নাগরিকের ব্যবহার করা বিশ্বব্যাপী বার্তা প্রদান অ্যাপ হোয়াটসঅ্যাপ নিষিদ্ধ হওয়ার ‘প্রবল সম্ভাবনা’ রয়েছে। রাশিয়ার নিরাপত্তা ও রাজনীতি বিষয়ক অভিজ্ঞ পর্যবেক্ষক ও মায়াক ইন্টেলিজেন্সের পরিচালক মার্ক গ্যালিওটি বলেছেন, ‘মস্কো তার জনগণকে ম্যাক্স ব্যবহারে চাপ দেবে।’
রাশিয়ার বিরোধী সাংবাদিক আনদ্রে ওকুন বলেছেন, “ম্যাক্স অ্যাপটি ক্রেমলিনের ‘ডিজিটাল গুলাগ’ (গুলাগ ছিল ১৯২৯ থেকে ১৯৫৩ সাল পর্যন্ত সোভিয়েত ইউনিয়নে প্রতিষ্ঠিত জোরপূর্বক শ্রম শিবিরের একটি বিশাল ব্যবস্থা) নির্মাণের স্বপ্নের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে। এটি হবে একটি অকার্যকর জায়গা, যেখানে কর্তৃপক্ষ নাগরিকদের অবসর সময়, উদ্দেশ্য ও চিন্তাভাবনার ওপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রাখবে।”
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ভ্লাদিমির পুতিনের নির্দেশে তৈরি করা অ্যাপটি ক্রেমলিনের সমগ্র রুশ অনলাইন ক্ষেত্র পর্যবেক্ষণ করার ক্ষমতার উদ্দেশ্যে সর্বশেষ পদক্ষেপ মাত্র।
রাশিয়ার ওয়ার অন এভরিবডির লেখক কেইর জাইলস বলেছেন, ‘এ অ্যাপটি রাশিয়ার ইন্টারনেট ব্যবহারের ওপর নজরদারির একটি স্বাভাবিকীকরণ—এটি সুদীর্ঘ একটি প্রক্রিয়ার অংশ।’
জাইলস ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘রুশ নাগরিকরা গুগল, স্কাইপ ও হটমেইলের মতো বিদেশি সফ্টওয়্যার ব্যবহারের ফলে তাদের বার্তা পড়া অনেক কঠিন হয়ে পড়ায় রাশিয়ার নিরাপত্তা পরিষেবাগুলো হতাশ। রাশিয়ান নিরাপত্তা পরিষেবাগুলো পশ্চিমা যোগাযোগ প্রযুক্তিগুলোকে সব সময়েই হুমকি হিসাবে বিবেচনা করে আসছে। তাই এটি স্পষ্ট যে, হোয়াটসঅ্যাপের মতো পরিষেবাগুলোকে বছরের পর বছর ধরে দমনের সর্বশেষ পদক্ষেপ হিসেবে রুশদের ম্যাক্সের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।’