img

বাংলা সাহিত্যের কালজয়ী কথাসাহিত্যিক ও নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদ। আজ তার ১৩তম মৃত্যুবার্ষিকী। এদিনটি ঘিরে বিভিন্ন আয়োজনের মধ্য দিয়ে ভক্ত, শুভাকাঙ্ক্ষীরা স্মরণ করছেন তাকে। তবে দিনটি তার দ্বিতীয় স্ত্রী শাওনসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্য ও কাছের মানুষদের জন্য বেদনার।

 

কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ দীর্ঘ কর্মজীবনে নিজেকে আসীন করেছেন অনন্য উচ্চতায়। কোটি পাঠক ও ভক্ত-অনুরাগীর কাছে তিনি জাদুকরী এক মানুষ। তবে ব্যক্তি জীবনের একটি সিদ্ধান্ত এ কিংবদন্তিকে জড়ায় বিতর্কের জালে। আর তা হলো দ্বিতীয় বিয়ে।

 

অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওনের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান হুমায়ূন এবং বিয়ে করেন তাকে। ব্যক্তিগত জীবনে হুমায়ূন আহমেদের দ্বিতীয় স্ত্রী শাওন তার মেয়ে শীলার বান্ধবী হিসেবেই পরিচিত ছিলেন।

 

হুমায়ূন আহমেদের দ্বিতীয় স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন বাংলাদেশ টেলিভিশনের ‘নতুন কুঁড়ি’ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে পরিচিতি পান শিশুশিল্পী হিসেবে। শাওন একাধারে নৃত্যশিল্পী, অভিনেত্রী, সংগীতশিল্পী, পরিচালক ও স্থপতি।

 

 শাওনকে কিভাবে ভালোবাসার কথা বলেছিলেন জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ? এই বিষয় নিয়ে অনুরাগীদের ছিল প্রচণ্ড কৌতূহল। তবে অভিনেত্রী নিজেই একটি সংবাদমাধ্যকে বলেছিলেন তার প্রস্তাব পাওয়ার সেই গল্প।

 

শাওন বলেছিলেন, “ভালোবাসা নিবেদনে উনি আমাকে বলেছিলেন, ‘গুহাচিত্র যারা আঁকতেন তাদেরও কাউকে লাগত ওই অন্ধকারে প্রদীপটা ধরে রাখার জন্য। যাতে সেই চিত্রকর নিজের কাজটা করতে পারেন সুন্দরভাবে’। তুমি কি আমার জন্য সেই আলোটা ধরবে?’’

 

এই কথা শোনার পর মেহের আফরোজ শাওনের পৃথিবী যেন এলোমেলো হয়ে যায়।

 

নিশ্চুপ হয়ে যান কিছুদিনের জন্য। কোনো কথা বলেননি প্রিয় মানুষের সঙ্গে। তবে সে প্রসঙ্গ না উঠিয়ে লেখক আবার কিছুদিন পর শাওনকে বলেন, ‘সেন্ট মার্টিন দ্বীপে যদি একা চলে যাই, সব ছেড়ে? তুমি থাকবে?’

 

এবার আর নিস্তব্ধ থাকেননি অভিনেত্রী। জবাবে তিনি বলেছিলেন, ‘থাকব এবং সব সময় থাকব।’ সেই থেকে দুজনের ভালোবাসার অধ্যায় শুরু। যা গড়ায় বিয়ে পর্যন্ত। দুজনের দাম্পত্য জীবনে রয়েছে দুই সন্তান। নিষাদ ও নিনিত।

 

বিয়ে কিংবা তাদের প্রেমের গুঞ্জন ওঠার পর বেশ আলোচিত হয় এই সম্পর্ক। নেটিজেনরা বলেছিলেন মেয়ের বান্ধবীকেই বিয়ে করেছেন হুমায়ূন আহমেদ। এমন একটি কথা এখনো অবশ্য প্রচলিত আছে। তবে এ বিষয়ে একটি অনুষ্ঠানে শাওন বলেছিলেন, ‘বান্ধবীর বাবার সঙ্গে প্রেম করিনি বরং বন্ধুর মেয়ের সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব হয়েছিল। হুমায়ূন আহমেদের কন্যা শীলা আহমেদ আমার বন্ধুর মেয়ে।’

 

কথার জাদুকর হুমায়ূন আহমেদ একাধারে ছিলেন শিক্ষক, সমাজসেবী, গল্পকার, নাট্যকার, ঔপন্যাসিক, গীতিকার, চিত্রকর, চিত্রনাট্য লেখক, নাট্যনির্দেশক, চলচ্চিত্র নির্মাতা ও প্রবন্ধকার। সাহিত্যের সব জায়গায় ছিল তার সরব উপস্থিতি। কখনো আবার রংতুলির ছোঁয়ায় রাঙিয়েছেন ক্যানভাসের রংহীন সাদা স্থান। পিছিয়ে ছিলেন না নির্মাণেও। ছোট পর্দা, বড় পর্দায় তার নানা সৃষ্টি বাঙালির মনে দাগ কেটে থাকবে হাজার বছর।

২০১২ সালের ১৯ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণে করেন হুমায়ূন আহমেদ। পরে ২৪ জুলাই তাকে নুহাশপল্লীর লিচুতলায় চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়।

এই বিভাগের আরও খবর