জাপানের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে ফুকুশিমার পরিশোধিত তেজস্ক্রিয় মাটি

২০১১ সালের ভয়াবহ পারমাণবিক দুর্ঘটনার পর প্রথমবারের মতো পরিশোধিত (ডিকন্টামিনেটেড) হলেও সামান্য তেজস্ক্রিয় ফুকুশিমার মাটি পুনর্ব্যবহারের উদ্দেশ্যে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবার টোকিওস্থ অফিসে আনা হয়েছে। শনিবার এই মাটি অফিস চত্বরে পৌঁছে দেওয়া হয়।
২০১১ সালে ভূমিকম্প ও সুনামির পর ফুকুশিমা দাইইচি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিপর্যয় ঘটে, যার ফলে বিপুল পরিমাণ তেজস্ক্রিয় পদার্থ নির্গত হয়ে আশপাশের বিস্তীর্ণ এলাকা দূষিত করে। এরপর শুরু হয় বিশাল পরিসরের পরিশোধন কার্যক্রম।
এখন পর্যন্ত প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ ঘনমিটার তেজস্ক্রিয় মাটি সংগ্রহ করা হয়েছে—যা ১১টি বেসবল স্টেডিয়াম পূর্ণ করার মতো পরিমাণ।
জাপান সরকার জনসাধারণের মধ্যে এই মাটির নিরাপত্তা নিয়ে আস্থা ফেরাতে মরিয়া। তারা জানিয়েছে, ২০৪৫ সালের মধ্যে এই মাটির জন্য চূড়ান্ত নিষ্পত্তির স্থান নির্ধারণ করা হবে। পরিবেশ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী ইশিবার অফিস চত্বরে যে ২ ঘনমিটার মাটি আনা হয়েছে, তা একটি লন গার্ডেনের (বাগান) নির্দিষ্ট অংশে রাখা হবে।
আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) অনুমোদিত সুরক্ষা নির্দেশিকা অনুসারে এই মাটি নিরাপদ বলেই বিবেচিত হয়েছে। উল্লেখযোগ্যভাবে, এই মাটির মধ্যে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভেতরের কোনো মাটি নেই।
তবে সরকারের এমন পদক্ষেপের পরও জনমনে গভীর উদ্বেগ বিরাজ করছে। এর আগেও সরকার টোকিও ও আশপাশের কিছু পার্কে ফুলের বাগানে এই মাটি পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহারের পরিকল্পনা করেছিল, কিন্তু জনবিক্ষোভের মুখে সেই পরিকল্পনা বাতিল করতে হয়।
জাপান সরকার চায়, এই পদক্ষেপের মাধ্যমে জনগণকে বোঝানো যাবে যে এই মাটি পুনর্ব্যবহার করা নিরাপদ এবং এটি দেশের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে কাজে লাগানো যেতে পারে। তবে বিশেষজ্ঞরা ও অনেক নাগরিক মনে করছেন, জনগণের আস্থা অর্জনের জন্য শুধুমাত্র কারিগরি নিরাপত্তার ব্যাখ্যা যথেষ্ট নয়, বরং স্বচ্ছতা ও দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব সম্পর্কেও বিস্তারিত ব্যাখ্যার প্রয়োজন আছে। এখন দেখা যাচ্ছে, তেজস্ক্রিয় উপাদানের ব্যবস্থাপনায় জাপানের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সরকারের কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে জনমনের আস্থা ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।
সূত্র : এপি