img

ইসরায়েল বুধবার জানিয়েছে, সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে সেনাবাহিনীর সদর দপ্তরে তারা বিমান হামলা চালিয়েছে। এর আগে তারা ইসলামপন্থী নেতৃত্বাধীন সিরীয় সরকারকে দ্রুজ সংখ্যালঘুদের এলাকা সুয়েইদা থেকে সরে যাওয়ার জন্য সতর্ক করেছিল। সাম্প্রদায়িক সংঘাতে সেখানে এখন পর্যন্ত প্রায় ২৫০ জন নিহত হয়েছে বলে পর্যবেক্ষক সংস্থা জানিয়েছে।

সিরিয়ার সরকারি বাহিনী মঙ্গলবার সংখ্যাগরিষ্ঠ দ্রুজ অধ্যুষিত শহর সুয়েইদায় প্রবেশ করে।

 

তাদের দাবি ছিল, স্থানীয় বেদুইন গোষ্ঠীর সঙ্গে সংঘর্ষের পর দ্রুজ নেতাদের সঙ্গে যেসব যুদ্ধবিরতির চুক্তি হয়েছে, তা তদারকি করাই তাদের লক্ষ্য। ওই সংঘর্ষে শতাধিক মানুষ নিহত হয়।

 

তবে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে, সিরীয় সরকারি বাহিনী দ্রুজ যোদ্ধা ও সাধারণ নাগরিকদের ওপর বেদুইনদের সঙ্গে মিলে হামলা চালিয়েছে। শহরের ভেতরে তাদের এই তাণ্ডবে রক্তক্ষয়ী সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে।

 

সুয়েইদা প্রদেশ ও দামেস্কের কাছে এপ্রিল ও মে মাসে দ্রুজ যোদ্ধাদের সঙ্গে সরকারি বাহিনীর সংঘর্ষে শতাধিক মানুষ নিহত হওয়ার পর এটিই সিরিয়ায় সবচেয়ে গুরুতর সহিংসতা। ২০১১ সালের পর থেকে সিরিয়ার ইসলামপন্থী নেতৃত্বাধীন সরকার সংখ্যালঘু ধর্মীয় ও জাতিগত গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে টানাপড়েনের সম্পর্ক বজায় রেখেছে।

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ বলেন, ‘সুয়েইদায় দ্রুজ জনগোষ্ঠীকে সবার আগে ছেড়ে দিক সিরিয়া। আমরা আগেই সতর্ক করেছিলাম, আবারও বলছি, সিরিয়ায় দ্রুজদের আমরা একা ফেলে দেব না।

 

আমরা আমাদের নির্ধারিত বেসামরিকীকরণ নীতি কঠোরভাবে প্রয়োগ করব।’

 

তিনি সিরিয়ার সরকারি বাহিনীকে সরে যাওয়ার আহ্বান জানান এবং হুঁশিয়ারি দেন, ইসরায়েলের বার্তা আমলে না নেওয়া হলে সামরিক জবাব আরো জোরালো হবে। এর পরপরই ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানায়, তারা দামেস্কে সিরীয় সেনাবাহিনীর সদর দপ্তরের প্রবেশপথে হামলা চালিয়েছে।

এক বিবৃতিতে তারা বলেছে, ‘সামান্য কিছু সময় আগে (ইসরায়েলি সেনা) দামেস্কের এলাকায় সিরীয় সরকারের সামরিক সদর দপ্তরের প্রবেশপথে আঘাত হানে।’

সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন জানায়, এই হামলায় রাজধানী দামেস্কের কেন্দ্রীয় এলাকায় দুজন আহত হয়েছে, তবে নির্দিষ্ট স্থান জানানো হয়নি।

 

‘অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই’
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ফেব্রুয়ারিতে বলেছিলেন, সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চল অবশ্যই পুরোপুরি বেসামরিকীকরণ করতে হবে। তিনি সতর্ক করেছিলেন, ইসলামপন্থী সরকারের বাহিনী ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকার কাছে অবস্থান করলে তা মেনে নেওয়া হবে না।

ইসরায়েল জানায়, গোলান মালভূমির সঙ্গে সিরিয়ার নিয়ন্ত্রিত এলাকাঘেঁষা আর্মিস্টিস লাইন বরাবর তারা অতিরিক্ত সেনা পাঠাচ্ছে। এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘পরিস্থিতির মূল্যায়ন অনুযায়ী, (ইসরায়েলি বাহিনী) সিরিয়ার সীমান্ত এলাকায় নিজেদের শক্তি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’

ইসরায়েলে দ্রুজ সম্প্রদায়ের প্রধান শেখ মুওয়াফাক তারিফ বলেন, ‘এটি দ্রুজ জনগোষ্ঠীর জন্য একটি অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই।’

পর্যবেক্ষক সংস্থা, প্রত্যক্ষদর্শী ও দ্রুজ সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর বরাত দিয়ে বলা হয়, সরকারি বাহিনী বেদুইনদের সঙ্গে মিলে দ্রুজদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অংশ নেয়।

এদিকে বুধবার শহরে এখনো থেমে থেমে গুলি চলছে বলে এক এএফপি প্রতিবেদক জানিয়েছেন। শহরের বিভিন্ন অংশে ধোঁয়া উড়তে দেখা যায়, সঙ্গে গোলাবর্ষণের শব্দ শোনা যাচ্ছে। প্রতিবেদক প্রায় ৩০ জন যোদ্ধার মরদেহ গুনতে পেরেছেন, যাদের কেউ কেউ সাধারণ পোশাকে ছিলেন, কেউ আবার সামরিক পোশাকে।

‘সুয়েইদা ২৪’ সংবাদমাধ্যম জানায়, ‘ভারী কামান ও মর্টার দিয়ে ব্যাপক গোলাবর্ষণ চলছে।’

এ ছাড়া সিরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দাবি করেছে, ‘আইনের বাইরে থাকা গোষ্ঠীগুলো’ শহরের ভেতর তাদের বাহিনীর ওপর হামলা চালিয়েছে এবং তারা এখন ‘হামলার উৎসগুলোর জবাব দিচ্ছে’।

নিহতের সংখ্যা প্রায় ২৫০
ব্রিটেনভিত্তিক সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানিয়েছে, সুয়েইদা প্রদেশে রবিবার থেকে সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ২৪৮ জন নিহত হয়েছে।

সংস্থাটি আরো জানায়, নিহত ৯২ জন দ্রুজের মধ্যে ২৮ জন ছিলেন বেসামরিক ও তাদের মধ্যে ২১ জনকে ‘সরকারি বাহিনী তাৎক্ষণিকভাবে হত্যা করেছে’। এ ছাড়া সিরিয়ার নিরাপত্তা বাহিনীর ১৩৮ জন সদস্য ও বেদুইন মিত্র যোদ্ধাদের মধ্যে ১৮ জন নিহত হয়েছে।

বেদুইন ও দ্রুজদের মধ্যে কয়েক দশক ধরে উত্তেজনা বিরাজ করছে। অবজারভেটরি জানায়, এক দ্রুজ তরকারি ব্যবসায়ীকে অপহরণের ঘটনায় পাল্টাপাল্টি অপহরণ শুরু হয়, যার সূত্র ধরে এই সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে।

২০১১ সালের পর দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকা বাশার আল-আসাদকে পদচ্যুত করার পর থেকে ইসলামপন্থী নেতৃত্বাধীন কর্তৃপক্ষ সংখ্যালঘুদের অধিকার হরণ করছে বলে বারবার অভিযোগ উঠেছে। ইসরায়েল দ্রুজদের রক্ষাকারী হিসেবে নিজেদের তুলে ধরলে কিছু বিশ্লেষক বলছেন, এটি আসলে দেশটির নিজস্ব সামরিক উদ্দেশ্য পূরণে এক ধরনের অজুহাত, যার লক্ষ্য হলো সিরীয় সরকারি বাহিনীকে সীমান্ত থেকে দূরে রাখা।

এই বিভাগের আরও খবর