বিশ্বের প্রথম জাতীয় উদ্যান বোগদ খান উল?

যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েলোস্টোনকে বিশ্বের প্রথম জাতীয় উদ্যান হিসেবে মনে করে অনেকেই। তবে এই খেতাবের দাবিদার মঙ্গোলিয়ার রাজধানী উলানবাটরের ঠিক দক্ষিণের একটি পর্বত। বোগদ খান উল নামের এই পর্বতের সঙ্গে মঙ্গোল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা চেঙ্গিস খানের সম্পর্ক রয়েছে। মঙ্গোলীয় ভাষায় ‘বোগদ’ শব্দের অর্থ পবিত্র, ‘উল’ শব্দের অর্থ পর্বত, আর খান হলো শাসকদের উপাধি।
বোগদ খান উল শব্দের অর্থ পবিত্র খানের পাহাড়।
১৭৭৮ সালে মঙ্গোলীয় অভিজাতরা তৎকালীন অঞ্চলটি শাসনকারী কিং (মাঞ্চু) রাজবংশের সম্রাটকে চিঠি লিখে বোগদ খান উলকে একটি সরকারি সুরক্ষিত এলাকা হিসেবে মনোনীত করার অনুরোধ জানান। এটি বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন সংরক্ষিত প্রাকৃতিক এলাকা। ১৯৯৬ সালে বোগদ খান উলকে ইউনেসকো জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
শিকার ও কৃষি নিষিদ্ধ থাকায় এই অঞ্চলের প্রাকৃতিক ভারসাম্য দীর্ঘদিন ধরে রক্ষা পেয়ে আসছে।
অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েলোস্টোন পার্ক প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৭২ সালে। এ ছাড়া অস্ট্রেলিয়া তাদের প্রথম জাতীয় উদ্যান পায় ১৮৭৯ সালে, কানাডা ১৮৮৫ ফ্রান্স ১৯৬৩ ও মিসর ১৯৮৩ সালে জাতীয় উদ্যান পায়। তবে ক্যারিবীয় অঞ্চলেও আরেকটি উদ্যান এ খেতাবের দাবিদার রয়েছে—১৭৭৬ সালে প্রতিষ্ঠিত টোবাগো মেইন রিজ ফরেস্ট রিজার্ভ।
যুক্তরাষ্ট্রের লাইব্রেরি অব কংগ্রেসে কর্মরত মঙ্গোলিয়া বিশেষজ্ঞ সারউল-এর্দেন মিয়াগমার বলেন, ‘বৌদ্ধ ধর্মের আগেও মঙ্গোলিয়ায় ছিল শামান ধর্ম। বিশ্বাস করা হতো, প্রতিটি পাহাড়-নদীর নিজস্ব আত্মা বা মালিক আছে। বোগদ খান উউলের আত্মা হলেন এক বৃদ্ধ পুরুষ, যাকে অসম্মান করলে দুর্ভাগ্য নেমে আসে।’
এখনো পার্কজুড়ে ছড়িয়ে আছে ওভো নামের পবিত্র স্তূপ, যা তৈরি হয় পাথর, কাঠ আর রঙিন কাপড় দিয়ে। এখানে ময়লা ফেলা, অনুমোদিত এলাকার বাইরে মলত্যাগ করা, বা ওভোতে হাত দেওয়া অপমানজনক বলে বিবেচিত।
পর্বতের চূড়ায় উঠলে দেখা যায়, মানজুশির মঠের ধ্বংসাবশেষ। ১৯৩৭ সালে সোভিয়েতপন্থী কমিউনিস্টদের হাতে এটি ধ্বংস হলেও স্থানীয়রা এখনো এটি সংরক্ষণ করে চলেছে। এখানে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সীমিত হলেও শান্ত পরিবেশ, রাতের তারাভরা আকাশ ও তুষারপাত পর্যবেক্ষণের এক অনন্য অভিজ্ঞতা পাওয়া যায়।
বোগদ খান উল এখনো বিশ্ববাসীর কাছে তেমন পরিচিত নয়। এর একটি বড় কারণ মঙ্গোলিয়ার ভৌগোলিক অবস্থান ও সীমিত পর্যটন। তবে ২০২৪ সালে দেশটিতে আট লাখের বেশি বিদেশি পর্যটক ভ্রমণ করেছে, যা ইতিহাসে সর্বোচ্চ। মঙ্গোলিয়া সরকার চায়, ২০৩০ সালের মধ্যে পর্যটন যেন দেশের জিডিপিতে ১০ শতাংশ অবদান রাখে। এই লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক প্রচারণাও জোরদার করা হচ্ছে।
এটি শুধু জাতীয় উদ্যান নয়, এটি মঙ্গোলিয়ার আত্মপরিচয়ের প্রতীক ও ইতিহাসের অংশ। মিয়াগমারের মতে, ‘এটি শুধু প্রাচীনতম পার্ক নয়। এটি আমাদের বিশ্বাস, সংস্কৃতি আর আত্মার অংশ।’