মেসির শরীরজুড়ে ট্যাটু, পেছনে কী গল্প লুকিয়ে আছে?

বর্তমানে পেশাদার ফুটবলে ট্যাটু যেন একপ্রকার ইউনিফর্মের অংশ। শরীরজুড়ে নকশা, হাত-পা ভর্তি ড্রয়িং—আধুনিক ফুটবলারদের কাছে এগুলো কেবল সাজ নয়, বরং নিজের গল্প বলার মাধ্যম। আর এই ‘ইঙ্ক’-দুনিয়ায় যে নামটি অন্যতম অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছে, তিনি হলেন ফুটবলের নক্ষত্র লিওনেল মেসি।
বিশ্ব ফুটবলের জীবন্ত কিংবদন্তি মেসির আজ (২৪ জুন) ৩৮ তম জন্মদিন।
অনেকের মতে ইতিহাসের সেরা ফুটবলার এই বিশ্বকাপজয়ী আর্জেন্টাইন। তিনিও তার শরীরকে ব্যবহার করেছেন জীবনের নানা অধ্যায় লিখে রাখার ক্যানভাস হিসেবে। তার প্রতিটি ট্যাটুতেই ফুটে উঠেছে তার জীবনের গল্প।
চলুন দেখে নিই, সাবেক বার্সেলোনা ও পিএসজি তারকা মেসির কোন ট্যাটুগুলো কোথায় রয়েছে, আর এর পেছনে কী গল্প লুকিয়ে আছে—
বাঁ পায়ে ফুটবল, পরিবার আর ক্যারিয়ারের ছাপ
মেসির সবচেয়ে চোখে পড়া ট্যাটুগুলোর বেশির ভাগই তার বাঁ পায়ে।
যে পা দিয়েই বিশ্ববরণ্য খেলোয়াড় হয়ে উঠেছেন সেই পায়েই রয়েছে তার জীবনের নানা প্রতীকী চিহ্ন।
এক সময় তলোয়ার, দেবদূতের ডানা আর একটি গোলাপ ফুলের নকশা ছিল সেখানে। পরবর্তীতে সেই পুরোনো ডিজাইনগুলোর ওপর দিয়ে মোটা কালো কালি দিয়ে ব্লক ডিজাইন করিয়ে ফেলেন মেসি। তবে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ট্যাটু এখনো সেই ব্লকের মধ্য থেকে উঁকি দেয়।
যেমন, বড় ছেলে থিয়াগোর হাতের ছাপ ও নাম এখনো স্পষ্ট। তার ঠিক ওপরে রয়েছে বিখ্যাত ১০ নম্বর জার্সি নম্বরটি, একটি ফুটবল, এবং মেসির সাবেক ক্লাব বার্সেলোনার ক্রেস্ট। আছে ‘ফাইভ অব কাপস’ নামের একটি স্প্যানিশ ট্যারোট কার্ডও।
অন্যদিকে ডান পায়ের গোড়ালির একটু ওপরে রয়েছে তাঁর তিন ছেলে—থিয়াগো, মাতেও ও সিরোর নাম ও জন্মতারিখ। বাবার ভালোবাসার স্থায়ী ছাপ এটাই।
ডান হাতে বিশ্বাস, পরিবার আর ভালোবাসার প্রতীক
মেসির ডান হাতজুড়ে ট্যাটুগুলোর একেকটি যেন তার বিশ্বাস আর আত্মিক সংযোগের গল্প বলে।
কাঁধের ওপর রয়েছে কাঁটাযুক্ত মুকুট পরিহিত যিশুখ্রিস্টের ছবি—যা মেসির খ্রিষ্টান বিশ্বাসের প্রতীক। বাইসেপে একটি চোখের ছবি, যা অনেকেই মনে করেন তার স্ত্রী আন্তোনেলা রোকুজ্জোর প্রতীক। দুজনেরই এই চোখের পাশে একই জায়গায় একটি করে মুকুট ট্যাটু রয়েছে—যা ভালোবাসার যুগল ছাপ।
হাতের নিচের দিকে আছে বার্সেলোনার বিখ্যাত সান্তা মারিয়া দেল পি গির্জা থেকে অনুপ্রাণিত একটি ‘রোজ উইন্ডো’ ট্যাটু। তার চারপাশে রয়েছে লাল গোলাপ, গোলাপি পদ্মফুল, কমলা ফুল ও একটি রোসারির মালা—একসাথে মিশে গেছে ধর্ম, নান্দনিকতা আর ভালোবাসার বার্তা।
সবশেষে রয়েছে একটি পকেট ঘড়ি, যার চারপাশে সময়ের চাকার নকশা—একটি বার্তা, সময় সবার জন্যই সম্পদ, এমনকি ফুটবলের মহাতারকার জন্যও।
মায়ের প্রতিকৃতি আর ঠোঁটের চুম্বন
মেসির প্রথম দিককার আরেকটি আবেগঘন ট্যাটু হলো তার মায়ের প্রতিকৃতি, যা রয়েছে তার বাঁ কাঁধের পেছনে। মা সেলিয়া মেসির জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন, এখনো তার ফাউন্ডেশনের (লিও মেসি ফাউন্ডেশন) নেতৃত্ব দেন তিনি।
তার শরীরের বাকি অংশ বেশিরভাগই ট্যাটুশূন্য। ব্যতিক্রম একটি—বাম কোমরে ছোট্ট একটি লাল ঠোঁটের ছাপ। অনেকে মনে করেন, এটি স্ত্রী আন্তোনেলার প্রতি ভালোবাসার এক ব্যক্তিগত নিদর্শন।
বিশ্বকাপ ট্যাটু নেই, তবে আছে ‘ভাগ্যের কার্ড’
২০২২ সালে বিশ্বকাপ জয়ের পর অনেকেই ভেবেছিলেন, মেসি হয়তো শরীরে একটি ট্রফি বা গোল্ডেন মুহূর্তের ট্যাটু করাবেন। কিন্তু অবাক করার মতো বিষয় হলো—তেমন কোনো সরাসরি ট্যাটু নেই।
তবে সেই ট্রফি জয়ের ঠিক পরেই, মেসি তাঁর বাম পায়ের সামনের অংশে ‘ফাইভ অব কাপস’ নামের স্প্যানিশ ট্যারো কার্ডের ট্যাটু করান।
এই কার্ডের পেছনেও রয়েছে একটি বিশেষ গল্প। নেটফ্লিক্স ডকুমেন্টারি ‘সিন ইতার্নোস: ক্যাম্পেওনেস দে আমেরিকা’-তে দেখা যায়, কোপা আমেরিকা জয়ের সময় মেসি ও তার সতীর্থরা (দি মারিয়া, লো সেলসো, ওতামেন্দি, গোমেজ, আগুয়েরো) একটি কার্ড খেলা খেলছিলেন। সেখানে মেসি ‘ফাইভ অব কাপস’ কার্ডটি অনুমান করে ফেলেন, যা পরে তাদের কাছে ছিল সৌভাগ্যের প্রতীক।