img

ইরান ও ইসরায়েলের ওপর একের পর এক প্রাণঘাতী হামলার পর দুই দেশের শীর্ষ নেতারা পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দিয়েছেন, যা মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনাকে আরো বাড়িয়ে তুলেছে। রবিবার গভীর রাতে ইরানের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থানে আঘাত হানে, যার মধ্যে কয়েকটি আবাসিক ভবনেও আঘাত করেছে। এই ঘটনায় হতাহতের খবর পাওয়া গেছে। 

এরপর ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ এক বার্তায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘তেহরানের দাম্ভিক স্বৈরশাসক এখন একজন কাপুরুষ খুনি হয়ে উঠেছে।

তেহরানের বাসিন্দারা এর চরম মূল্য দেবে—এবং তা খুব শিগগিরই।’

 

অন্যদিকে, ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান জাতির উদ্দেশে এক বিবৃতিতে একতা বজায় রাখার আহ্বান জানান এবং দেশটির পারমাণবিক কর্মসূচির পক্ষে অবস্থান নেন। তিনি বলেন, ‘ইরানি জনগণকে এক হয়ে আমাদের বিরুদ্ধে চালানো এই আগ্রাসনের মোকাবিলা করতে হবে। আমরা হামলাকারী নই, বরং প্রতিরক্ষায় বাধ্য হয়েছিল।

 

পরমাণু প্রযুক্তি বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের পরমাণু শক্তি ব্যবহারের পূর্ণ অধিকার রয়েছে। এই গবেষণা আমাদের সমাজের উন্নয়ন ও স্বার্থ রক্ষার জন্যই পরিচালিত হচ্ছে।’ বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই পাল্টাপাল্টি বক্তব্য ও হুমকি পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলছে। আন্তর্জাতিক মহল উদ্বেগ প্রকাশ করে উভয়পক্ষকে সংযত হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে, তবে মাটিতে সংঘর্ষের বাস্তবতা ভিন্ন ইঙ্গিত দিচ্ছে।

 

এখন পর্যন্ত সংঘাতের বিষয়ে যা জানা যাচ্ছে

ইসরায়েল

ইরান রাতভর মধ্য ইসরায়েলে নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। তেল আবিব ও জেরুজালেমসহ সারা দেশে বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় করা হয়। ইরানের ছোঁড়া ক্ষেপণাস্ত্র উপকূলীয় শহর হাইফায় একটি তেল শোধনাগারের আশেপাশে বেশ কয়েকটি আবাসিক ভবনে আঘাত হানে এবং সেখানে বিস্ফোরণ ঘটে। হামলায় মধ্য ইসরায়েলের বিদ্যুৎ গ্রিডও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ইরানি মিডিয়া অনুসারে, গতকাল রবিবার ভোরে ইরান ইসরায়েলের আবাসিক ভবন এবং অবকাঠামো লক্ষ্য করে ‘শত শত’ ক্ষেপণাস্ত্র পাঠিয়েছে।

 

দিনের আলোতে ধ্বংসের চিত্র আরো ফুটে ওঠে, যা ইসরায়েলি বাসিন্দাদের জন্য আরো উদ্বেগ তৈরি করেছে। ক্ষতির পরিমাণ মূল্যায়ন করা হয়েচ্ছ এবং  কর্তৃপক্ষ ধ্বংসস্তূপের মধ্যে অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছে। তেল আবিব থেকে পাওয়া ছবিতে দেখা যায়, রাস্তাগুলো ধ্বংসস্তূপে ঢাকা, দোকানের জানালা ভেঙে গেছে এবং ভবন ও গাড়ি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রাতভর হামলায় ইসরায়েলে কমপক্ষে পাঁচজন নিহত হয়েছে, যার ফলে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলি নিহতের সংখ্যা ১৯ জনে দাঁড়িয়েছে। 

ইরান

এদিকে, ইরানে কমপক্ষে ২২৪ জন নিহত এবং ১ হাজহার ২৭৭ জন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক বলে ইরানি কর্তৃপক্ষ এবং রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে,  যুদ্ধবিমান ইরানের বিপ্লবী গার্ডের গোপন শাখা কুদস ফোর্সের কমান্ড সেন্টারগুলিতে হামলা চালিয়েছে। এর আগে রবিবার, ইসরায়েলি বিমানগুলো ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনা এবং সামরিক লক্ষ্যবস্তু লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে এবং রেভোলশনারি গার্ডের গোয়েন্দা প্রধানকে হত্যা করেছে।

দুই মার্কিন কর্মকর্তা সিএনএনকে বলেছেন, রাষ্ট্রপতি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে হত্যার ইসরায়েলি পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করেছেন। তবে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এই ধরণের পরিকল্পনার প্রতিবেদনকে দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করেছেন।  ট্রাম্প আরো বলেছেন, তিনি ইসরায়েল এবং ইরানের মধ্যে একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে চান। তিনি বিশ্বাস করেন, চুক্তির একটি ‘ভালো সম্ভাবনা’ রয়েছে, তবে তিনি আরো বলেছেন, ‘কখনও কখনও চুক্তির জন্য লড়াই করতে হবে।’

ইরান এবং ইসরায়েল উভয়ই তাদের নিজস্ব সুরক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ সামরিক স্থাপনার কাছাকাছি এলাকা থেকে অন্য দেশের বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়ার জন্য সতর্ক করেছে। গতকাল রবিবার তেহরানের গ্যাস স্টেশনগুলোর বাইরে গাড়ির দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে। ইসরায়েলি হামলার কয়েকদিন পর আতঙ্কিত বাসিন্দারা ইরানের রাজধানী শহর ছেড়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল বলে জানা গেছে।

এদিকে সংঘাতের কারণে তেলের দাম আবারও বেড়েছে।  রবিবারও তেলের দাম বৃদ্ধি অব্যাহত ছিল, যা গত সপ্তাহের ৭শতাংশ বৃদ্ধির সঙ্গে যোগ হয়েছে। কারণ এই সংঘাত বিশ্বব্যাপী তেল সরবরাহকে হুমকির মুখে ফেলেছে।

সূত্র : সিএনএন

এই বিভাগের আরও খবর