লাহোরকে চ্যাম্পিয়ন করতেই যেন ইংল্যান্ড থেকে উড়ে আসেন রাজা

পরশু ২৫ ওভার বোলিং করেছেন, পরদিনই ২০ ওভারের মতো ব্যাটিং, রাতে বার্মিংহামে খাবার খেয়ে সকালবেলা নাশতা করেছেন দুবাইয়ে, দুপুরে গাড়ি চালিয়ে পৌঁছেছেন আবুধাবিতে—এরপর উড়াল দিয়ে সন্ধ্যায় পাকিস্তান। আর এই নাটকীয় সফরের শেষপ্রান্তে পা রেখেই পিএসএলের ফাইনালে ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেলে নায়ক বনে গেলেন সিকান্দার রাজা।
প্রায় ৮ হাজার কিলোমিটার আকাশপথ পেরিয়ে ৩৯ বছর বয়সী এই জিম্বাবুইয়ান অলরাউন্ডার শেষ মুহূর্তে কয়েকবার গাড়ি ও বিমান বদলে পৌঁছান লাহোর। পথে মাত্র ৩ ঘণ্টা ঘুম।
টসের মাত্র ১০ মিনিট আগে মাঠে আসা রাজা নামেন একাদশে, যেখানে স্কোয়াডে বিকল্প খেলোয়াড়ের অভাব ছিল না। লাহোর কালান্দার্সের মালিকের সেই ঝুঁকির বিনিময়ে বিন্দুমাত্র হতাশ করেননি তিনি। মাঠে নেমে হয়ে উঠলেন দলের ‘সুপারম্যান’।
বল হাতে খুব একটা প্রভাব রাখতে না পারলেও ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তগুলোতে ছিলেন জ্বলে ওঠা এক নক্ষত্রের মতো।
রুশোকে আউট করে ব্রেকথ্রু এনে দেওয়া হোক বা লং-অফে নওয়াজের গুরুত্বপূর্ণ ক্যাচ কিংবা কঠিন সময়ে আমিরকে চার-ছক্কা মেরে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া—সবখানেই রাজা ছিলেন অবিচল ও কার্যকর। তার ৩১৪.২৮ স্ট্রাইকরেটে ২২ রানের বিধ্বংসী ইনিংসই শেষতক জয় এন দেয় দলকে। লাহোরের হয়ে অপরাজিত ৬২ রানের ইনিংস খেলা কুশল পেরেরার অবদানও ছিল সমান গুরুত্বপূর্ণ।
সাধারণত ৩৯ বছর বয়সে খেলোয়াড়দের অনেকেই ক্যারিয়ারের শেষ পর্যায়ে থাকেন।
কিন্তু সিকান্দার রাজা প্রমাণ করলেন, বয়স শুধুই একটি সংখ্যা। তার ফিটনেস, মানসিকতা এবং আত্মবিশ্বাসই তাকে গন্তব্যে পৌঁছানোর পথ দেখিয়েছে। ম্যাচ শেষে সতীর্থদের কাঁধে উঠে যখন আকাশে ভেসে উঠলেন রাজা, তখন যেন সত্যিই তিনি হয়ে উঠলেন সেই পাইলট, যিনি যাত্রীদের ঠিক সময়ে ঠিক জায়গায় পৌঁছে দেন।
রাজারা আসলে সত্যিকারের চ্যাম্পিয়ন। হাত থেকে ফসকে যাওয়া ম্যাচ কিভাবে জিততে হয় তা ভালো করেই জানেন।
কোনো অজুহাতের আশ্রয় নেওয়ার চিন্তাই মাথায় নেন না। মাথা উঁচু করে বীরের বেশে কিভাবে মাঠ ছাড়তে হয়, সেই সুযোগের অপেক্ষাই যেন করেন। সুযোগ কাজে লাগিয়ে পরে প্রশংসা করতে বাধ্য করেন। তার এমন বিধ্বংসী ইনিংস দেখে কে বলবে গত তিন দিন টেস্ট খেলেছেন।