ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হতাশার মৌসুম ও আমোরিমের চ্যালেঞ্জ

ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড বৃহস্পতিবার দুপুরে বিলবাও থেকে ফিরে আসলেও, বিমানবন্দরে সবার চোখেমুখে ছিলো ব্যর্থতার ছাপ। প্রিমিয়ার লিগে ১৬তম স্থানে থাকার পাশাপাশি ইউরোপা লিগ শিরোপা হারিয়ে দুঃস্বপ্নের মতো এক মৌসুম শেষ করলো রেড ডেভিলরা।
বিলবাওয়ে ইউরোপা লিগের ফাইনালে টটেনহ্যাম হটস্পারের কাছে ১-০ গোলে হেরে যাওয়ার পর এবার মৌসুমের লাভ-ক্ষতির হিসাব করতে বসেছেন ফুটবল বিশ্লেষকরা। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি'র এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, শুধু এক ম্যাচ হেরেই ১০০ মিলিয়ন পাউন্ড হারিয়েছে ক্লাবটি।
এছাড়া রেড ডেভিলদের ম্যানেজার রুবেন আমোরিম ও তার পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়েও নানা প্রশ্ন তুলেছে সংবাদমাধ্যমটি।
অর্থনৈতিক ক্ষতির হিসাব
ফাইনালে টটেনহামের কাছে হেরে যাওয়ার পর নিশ্চিত হয়েছে, ইউনাইটেড আগামী মৌসুমে কোনো ইউরোপীয় প্রতিযোগিতায় খেলতে পারবে না। এই এক ম্যাচের হারেই ক্লাবটি অন্তত ১০০ মিলিয়ন পাউন্ড আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে।
চ্যাম্পিয়নস লিগে না থাকায় অ্যাডিডাসের সঙ্গে ৯০০ মিলিয়ন পাউন্ডের স্পনসরশিপ চুক্তি থেকে বছরে ১০ মিলিয়ন পাউন্ড কম পাবে ইউনাইটেড।
লিগে ১৬তম স্থানে থাকায় প্রাইজমানি থেকেও ৩৩ মিলিয়ন পাউন্ড কম পাবে ক্লাবটি। ঘরের মাঠ ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে চ্যাম্পিয়নস লিগের চারটি ম্যাচ না হওয়ায় আরও ১৭ মিলিয়ন পাউন্ডের রাজস্ব হারাবে তারা।
ট্রান্সফার বাজেট ও সম্ভাব্য নতুন চুক্তি
ইউনাইটেড এখনো বলে যাচ্ছে যে ট্রান্সফারের জন্য অর্থ থাকবে। তবে বাস্তবতা হলো, ক্লাবটি এখনো ২৭২ মিলিয়ন পাউন্ডের বকেয়া ট্রান্সফার ফি-র দায়ে রয়েছে, যার মধ্যে ১৫৬ মিলিয়ন দিতে হবে এই গ্রীষ্মেই।
ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড ম্যাথেউস কুনহার ৬২.৫ মিলিয়ন পাউন্ডের রিলিজ ক্লজ অ্যাক্টিভ করার জোরালো সম্ভাবনা থাকলেও, সেটির অর্থও সম্ভবত খেলোয়াড় বিক্রি করেই যোগাড় করতে হবে।
যত দ্রুত ইউনাইটেড খেলোয়াড় বিক্রি করতে পারবে, তত দ্রুত নতুন খেলোয়াড় দলে নিতে পারবে।
কারা ছাড়তে পারেন ক্লাব?
ভিক্টর লিন্ডেলফ ও ক্রিশ্চিয়ান এরিকসেনের চুক্তি শেষ হবে গ্রীষ্মে, এবং তা নবায়ন হচ্ছে না। কোচ আমোরিম থাকলে ইউনাইটেডের হয়ে আর খেলবেন না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন মার্কাস রাশফোর্ড।
জাদন সানচোকে নিয়ে চেলসির ৫ মিলিয়ন পাউন্ডের ‘রিটার্ন ক্লজ’ যদি অ্যাক্টিভ হয়, তাহলে তাকে আবার সামলাতে হবে ক্লাবকে।
গার্নাচো এবং কোচের মধ্যে টানাপোড়েনও নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
কাসেমিরো, ম্যাগুইয়ার, লুক শ বা অ্যান্টনিরা বড় অঙ্কের বেতন পেলেও তাদের বিক্রি করা সহজ নয়।
আমোরিমেই সমস্যা?
ইউরোপা লিগ ফাইনালে টটেনহামের বিপক্ষে হারের পর আগামী মৌসুমে ইউরোপের কোন প্রতিযোগিতায় খেলার শেষ সুযোগ হারালো ম্যানেজার আমোরিমের দল। অবশ্য এই মৌসুমের ব্যার্থতায় সবার আগে যার নাম আসবে সে আর কেউ নয়, এই আমোরিম।
টটেনহামের বিপক্ষে ম্যাচের পর কোচ আমোরিম বলেছিলেন, ‘যদি মালিক বা সমর্থকরা আমাকে না চায়, আমি পরদিনই ক্লাব ছাড়ব।’ সবাইকে অবাক করে দিয়ে ক্লাব তখনই তার পাশে থাকার বার্তা দেয়।
তবে বাস্তবতা হলো, প্রিমিয়ার লিগের জায়ান্ট ইউনাইটেড যদি ২৬ ম্যাচে মাত্র ৬টি জেতে, সেটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এমনকি কিছু অভিজ্ঞ সাবেক খেলোয়াড় মনে করছেন, আমোরিমের স্টাফদের অনেকে খেলোয়াড়দের চেয়েও কম অভিজ্ঞ!