জাপানে মুদ্রাস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি, চালের দাম বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ

জাপানে চালের মূল্যবৃদ্ধি এবং মুদ্রাস্ফীতির হার বেড়ে যাওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবার ওপর রাজনৈতিক চাপ ক্রমেই বাড়ছে। এই অবস্থায় জুলাইয়ে জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সরকার কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়েছে। এরই মধ্যে এক মন্ত্রীকে চাল সংক্রান্ত বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য পদত্যাগও করতে হয়েছে আর জরুরি মজুদ থেকেও চাল ছাড়তে বাধ্য হয়েছে সরকার।
দেশটির অভ্যন্তরীণ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত মাসে তাজা খাদ্যপণ্য বাদ দিয়ে মূল মুদ্রাস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছে ৩.৫ শতাংশে, যা জানুয়ারি ২০২৩ সালের পর সর্বোচ্চ।
মার্চে এই হার ছিল ৩.২ শতাংশ। চালের দাম গত বছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে ৯৮.৪ শতাংশ—এক মাস আগের তুলনায় আরো বেশি। এ বৃদ্ধি সরকারের জন্য এখন প্রকট সংকটে পরিণত হয়েছে, বিশেষ করে ২০২৪ সালের নির্বাচনে পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানোর পর।
চালের ঘাটতির পেছনে রয়েছে ২০২৩ সালের তীব্র গরমে খারাপ ফসল, একটি সম্ভাব্য ‘ বড় আকারের ভূমিকম্প’ নিয়ে আতঙ্কে অতিরিক্ত মজুদ এবং বিপুল সংখ্যক পর্যটকের আগমন, যা চাহিদা বাড়িয়ে দিয়েছে।
ব্যবসায়ীদের মধ্যে চাল মজুদের প্রবণতাও পরিস্থিতি আরো খারাপ করেছে। সরকার ফেব্রুয়ারি থেকে মজুদ চাল নিলামে বিক্রি শুরু করেছে, যা ১৯৯৫ সালে সংরক্ষণ শুরু হওয়ার পর সরবরাহ ব্যবস্থার ব্যর্থতার কারণে প্রথমবারের মতো ঘটেছে।
শক্তি ও তাজা খাদ্য বাদ দিলে ভোক্তা মূল্যসূচক বেড়েছে ৩.০ শতাংশ, যা মার্চে ছিল ২.৯ শতাংশ। তবে সামগ্রিক অপরিবর্তিত মুদ্রাস্ফীতির হার এখনো ৩.৬ শতাংশেই রয়েছে।
শুল্ক হুমকি ও সুদের হার নিয়ে অনিশ্চয়তা
গত তিন বছর ধরেই মুদ্রাস্ফীতি জাপানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বোঝানো ২ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রার ওপরে রয়েছে। যদিও ব্যাংক অব জাপান গত বছর সুদের হার বাড়ানো শুরু করেছিল, সাম্প্রতিক সময়ে তারা তা স্থগিত রেখেছে, কারণ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। জাপানের কর্মকর্তারা এখন ওয়াশিংটনে মার্কিন শুল্ক কমানোর বিষয়ে আলোচনায় ব্যস্ত। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আপাতত নতুন কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
মুডিজ অ্যানালিটিক্স-এর স্টেফান অ্যানগ্রিক বলেন, ‘ভোক্তা মূল্যস্ফীতি ধীরে ধীরে কমবে।
যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক ও শুল্ক হুমকি জাপানে ও বিশ্বজুড়ে প্রবৃদ্ধি কমাবে, যার ফলে চাহিদা-নির্ভর মূল্যচাপও কমবে। ব্যাংক অব জাপান এখনো সুদ বাড়ানো শেষ করেনি, তবে এখনই কিছু করছে না।’ তিনি বলেন, ‘আমরা ২০২৬ সালের শুরুতে আরেকটি সুদবৃদ্ধি আশা করছি।’
চালের মন্তব্যে মন্ত্রীর পদত্যাগ
কৃষিমন্ত্রী তাকু এতো এক বিতর্কিত মন্তব্যের কারণে পদত্যাগ করেলে প্রধানমন্ত্রী ইশিবার আরো চাপে পড়েন। কৃষিমন্ত্রী এক সভায় বলেন, ‘আমি নিজে কখনো চাল কিনিনি, কারণ আমার সমর্থকরা এত চাল দান করেন যে আমি চাইলে তা বিক্রিও করতে পারি।’ এই মন্তব্য জনরোষের সৃষ্টি করে। পদত্যাগের পর প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাপানি জনগণের কাছে আমি ক্ষমাপ্রার্থী। কারণ তাকু এতোকে নিয়োগ দেওয়ার দায় আমার।’
তিনি আরো বলেন, ‘চালের দাম যে এত বেশি, তা কোনো এককালীন ঘটনা নয়, বরং এটি একটি কাঠামোগত সমস্যা। আমাদের এ বিষয়ে বিস্তৃত আলোচনা করতে হবে এবং চালের দাম অবশ্যই কমাতে হবে।’
ক্যাপিটাল ইকোনমিক্স-এর মার্সেল থিলিয়েন্ট বলেন, ‘সাপ্তাহিক চালের দামে স্থিতিশীলতার ইঙ্গিত দেখা যাচ্ছে, তাই চালের মূল্যস্ফীতি শিগগিরই হ্রাস পেতে পারে।’ এইচএসবিসির জুন তাকাজাওয়া বলেন, ‘সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ এবং বিশ্ববাজারে জ্বালানি ও আমদানিকৃত পণ্যের দামে মন্দার ফলে বছরের দ্বিতীয়ার্ধে মুদ্রাস্ফীতি আরো স্থিতিশীল হবে বলে আশা করা যায়।’
সূত্র : ফ্রান্স২৪