img

উত্তর কোরিয়ার নতুন একটি যুদ্ধজাহাজ (ডেস্ট্রয়ার) উদ্বোধনের সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে বৃহস্পতিবার দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে। কিম জং উন ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন এবং তিনি এই দুর্ঘটনাকে ‘অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড’ বলে আখ্যা দিয়েছেন।

রাষ্ট্রীয় কোরিয়ান সেন্ট্রাল নিউজ এজেন্সি (কেসিএনএ) জানায়, বুধবার দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় বন্দরে চংজিনে একটি পাঁচ হাজার টন ওজনের ডেস্ট্রয়ার জাহাজ উদ্বোধনের সময় ‘গুরুতর একটি দুর্ঘটনা ঘটে’। কেসিএনএ জানায়, কিম জং উনের উপস্থিতিতে জাহাজটি পানিতে নামানোর সময় জাহাজটির নিচের কিছু অংশ ভেঙে যায় এবং জাহাজটির ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়।

 

’ কারণ হিসেবে বলা হয়েছে ‘অভিজ্ঞতা ও পরিচালনাগত অবহেলা।’

 

ঘটনাটি প্রত্যক্ষ করে কিম জং উন এটিকে ‘চূড়ান্ত অবহেলাজনিত অপরাধ’ বলে মন্তব্য করে বলেন, ‘এমন ঘটনা কোনোভাবেই সহ্য করা যাবে না। দায়ী কর্মকর্তাদের দলীয় কেন্দ্রীয় কমিটির আগামী মাসের পূর্ণাঙ্গ বৈঠকে উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া হবে।’

এর এক মাস আগেই উত্তর কোরিয়া আরো একটি পাঁচ হাজার টনের ডেস্ট্রয়ার শ্রেণির জাহাজ ‘চো হিয়ন’ উদ্বোধন করেছিল।

 

সেই অনুষ্ঠানে কিম জং উন তার কন্যা কিম জু এ-কে সঙ্গে নিয়ে উপস্থিত ছিলেন—যিনি অনেক বিশ্লেষকের মতে, সম্ভাব্য উত্তরসূরি। উত্তর কোরিয়া দাবি করে, চো হিয়ন সর্বাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত এবং আগামী বছরের শুরুতে তার কার্যক্রম শুরু করবে।

 

কিছু বিশ্লেষক ধারণা করছেন, জাহাজটিতে স্বল্পপাল্লার পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র বসানো হতে পারে—যদিও উত্তর কোরিয়া এখনও পারমাণবিক অস্ত্রকে পর্যাপ্তভাবে ক্ষুদ্রায়িত করতে পেরেছে কি না, তা প্রমাণিত নয়।

রাশিয়ার সহায়তা?

দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, চো হিয়ন জাহাজটি রাশিয়ার সহায়তায় তৈরি হয়ে থাকতে পারে—সম্ভবত ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য মস্কোর পক্ষে হাজার হাজার সেনা পাঠানোর বিনিময়ে।

 

এদিকে উত্তর কোরিয়া গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান এবং সাবেক উত্তর কোরিয়ান পলাতক গবেষক আহন চান-ইল বলেন, নতুন যুদ্ধজাহাজটি নির্মাণে রাশিয়ার সহযোগিতা থাকলেও থাকতে পারে।

তিনি বলেন, ‘চংজিন শহরটি রাশিয়ার ভ্লাদিভস্তক বন্দরের খুব কাছাকাছি, তাই প্রকল্পের সময়সূচি ও নির্মাণ সংক্রান্ত তথ্য রাশিয়াকে জানানো হয়ে থাকতে পারে।’

তিনি আরো বলেন, ‘জাহাজটি যেখানে উদ্বোধন করা হয়, সেই ডকটি সম্ভবত তাড়াহুড়ো করে তৈরি করা হয়েছিল এবং জাহাজ নির্মাণের সময় একাধিক সমস্যা দেখা দিয়েছিল।’ তিনি মন্তব্য করেন, ‘আজকের এই ঘোষণা শুধু দেশের জনগণকে নয়, রাশিয়াকেও বার্তা দিতে পারে।’

নৌবাহিনী শক্তিশালী করার উদ্যোগ

উত্তর কোরিয়া এপ্রিল মাসে প্রথমবারের মতো স্বীকার করে, তারা রাশিয়ায় সেনা পাঠিয়েছে ইউক্রেন যুদ্ধে মস্কোকে সাহায্য করতে।

সম্প্রতি পিয়ংইয়ং ও মস্কো প্রথমবারের মতো দুই দেশের মধ্যে একটি সড়কসেতু নির্মাণ শুরু করার ঘোষণা দিয়েছে। অন্যদিকে, উত্তর কোরিয়া গত বছর জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করে একাধিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালায়। বিশ্লেষকরা বহুদিন ধরেই আশঙ্কা করছেন, উত্তর কোরিয়া হয়তো এসব অস্ত্র রাশিয়ার কাছে রপ্তানি করার জন্য পরীক্ষা করছে।

 

মার্চ মাসে কিম জং উন একটি পারমাণবিক সাবমেরিন নির্মাণ প্রকল্প পরিদর্শন করেন এবং বলেন, ‘নৌবাহিনীকে আমূল শক্তিশালী করা’ পিয়ংইয়ংয়ের প্রতিরক্ষা কৌশলের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সে সময় তিনি নৌবাহিনীর পানির ওপর এবং নিচের যুদ্ধক্ষমতা বাড়ানোর জন্য যুদ্ধজাহাজ উন্নয়নের ডাক দেন।

উত্তর কোরিয়া এর আগে দাবি করেছে, তারা এমন পারমাণবিক ড্রোন তৈরি করছে, যা ‘তেজস্ক্রিয় সুনামি’ সৃষ্টি করতে পারে। তবে বিশেষজ্ঞরা এই ধরনের অস্ত্রের বাস্তব অস্তিত্ব নিয়ে সন্দিহান।

ওয়াশিংটন, দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধান নিরাপত্তা মিত্র, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যৌথ সামরিক মহড়া বাড়িয়েছে এবং কোরীয় উপদ্বীপ অঞ্চলে একটি পারমাণবিকচালিত সাবমেরিনসহ কৌশলগত মার্কিন সামরিক বাহিনীর উপস্থিতি জোরদার করেছে।

পিয়ংইয়ং বারবার নিজেকে ‘অপরিবর্তনযোগ্য পারমাণবিক অস্ত্রধারী রাষ্ট্র’ ঘোষণা করেছে এবং যুক্তরাষ্ট্র-দক্ষিণ কোরিয়ার মহড়াকে ‘আক্রমণের মহড়া’ হিসেবে নিন্দা করে আসছে।

সূত্র : এএফপি, ফ্রান্স২৪

এই বিভাগের আরও খবর