রাষ্ট্রদূতের মেয়ের শিরশ্ছেদ : শিল্পপতির ছেলের মৃত্যুদণ্ড বহাল

পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট মঙ্গলবার এক রায়ে প্রেমিকাকে নির্মমভাবে হত্যার দায়ে এক ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছেন। মামলাটি দেশজুড়ে ব্যাপক আলোড়ন তোলে এবং নারী অধিকারের পক্ষে কাজ করা কর্মীরা এটিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ রায় হিসেবে দেখছেন।
পাকিস্তানি-আমেরিকান জহির জাফর এক শিল্পপতির ছেলে। ২০২১ সালে ইসলামাবাদের তার প্রাসাদসম বাড়িতে ২৭ বছর বয়সী নূর মুকাদামকে হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত হন।
বিয়ের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তিনি নূরকে নির্যাতন, ধাতব অস্ত্র দিয়ে আঘাত এবং পরে শিরশ্ছেদ করেন।
নূরের শৈশবের বন্ধু শাফাক জায়েদি রায়ের বলেন, ‘এটা পাকিস্তানের সব নারীর জন্য একটি জয়। এটা প্রমাণ করে, আমাদের বিচারব্যবস্থা ন্যায় দিতে সক্ষম এবং এতে নারীরা আরো সাহস পাবে আইনি সহায়তা চাইতে। এটা ছিল আমাদের শেষ আশ্রয়, আর এই রায়ের গুরুত্ব ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন।’
ত্রিশের কোঠায় থাকা জাফরকে ২০২২ সালে ধর্ষণ ও হত্যার দায়ে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল। তবে তার আইনজীবীরা দাবি করেছিলেন, জাফর মানসিকভাবে অসুস্থ ছিলেন। মঙ্গলবার বিচারপতি হাশিম কাকার হত্যার দণ্ড বহাল রাখলেও ধর্ষণের দণ্ড পরিবর্তন করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে রূপান্তর করেন। তবে পাকিস্তানে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা খুবই বিরল।
সাবেক এক রাষ্ট্রদূতের মেয়ে নূর হত্যাকাণ্ডের রাতে বারবার পালানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু জাফরের বাড়ির দুই কর্মচারী তাকে আটকান। এই দুই কর্মচারী ২০২২ সালে হত্যায় সহায়তার দায়ে দণ্ডিত হলেও মঙ্গলবার আদালত সেই রায় বাতিল করে তাদের মুক্তির আদেশ দেন। আর জাফরের বাবা জাকির জাফর ও মা আসমত আদমজিকে হত্যাকাণ্ড আড়াল করার অভিযোগ থেকে আগেই খালাস দেওয়া হয়েছিল।
নৃশংস এই হত্যাকাণ্ড পাকিস্তানি অভিজাত সমাজের দুই সদস্যকে কেন্দ্র করে ঘটেছিল।
এ ঘটনা দেশের ধীরগতির বিচারব্যবস্থার মাঝে দ্রুত বিচার শেষ করার দাবি তোলে। দেশটিতে সাধারণত মামলাগুলো বছরের পর বছর ধরে চলে। আসমা জাহাঙ্গীর লিগ্যাল এইড সেলের তথ্য অনুযায়ী, পাকিস্তানে নারীর প্রতি সহিংসতাসংক্রান্ত মামলায় দণ্ডদানের হার তিন শতাংশের নিচে। ধর্ষণ ও পারিবারিক সহিংসতার শিকাররা অনেক সময়ই মুখ খুলতে ভয় পান এবং অভিযোগের যথাযথ তদন্তও হয় না। অনেক ক্ষেত্রে ভুক্তভোগীর আচরণ নিয়ে প্রশ্ন তোলা হলে পরিবারগুলো সমাজে অপমানিত হয়।
মামলার বিচার চলাকালে একাধিক বিচারক নূরকে উদ্দেশ করে অবমাননাকর মন্তব্য করেন। কারণ তিনি অবিবাহিত অবস্থায় জাফরের সঙ্গে সময় কাটিয়েছিলেন। বিচারপতি কাকার মঙ্গলবার বলেন, ‘এটা আমাদের মূল্যবোধের পরিপন্থী।’
আদালতে উপস্থিত নারী অধিকারকর্মী ফারজানা বারি বলেন, এই ধরনের মন্তব্য ‘পুরুষের হাতে নারীর ওপর জোর খাটানোর বৈধতা দেয়, যা অত্যন্ত ক্ষতিকর ও পশ্চাদপদ মানসিকতা। এই রকম বিচারিক মনোভাব ন্যায় পাওয়ার লড়াইকে দীর্ঘ ও ক্লান্তিকর করে তোলে, যার ফলে অনেক ভুক্তভোগী শেষ পর্যন্ত হার মানেন ও হাল ছেড়ে দেন।’