সুদানে রাজধানীর কাছে ২ বাহিনীর সংঘর্ষ

সুদানের নিয়মিত সেনাবাহিনী ও প্রতিদ্বন্দ্বী আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) মধ্যে মঙ্গলবার খার্তুমের যমজ শহর ওমদুরমানে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়েছে। সেনাবাহিনী এটিকে ‘বৃহৎ পরিসরের’ সামরিক অভিযানের অংশ বলে বর্ণনা করেছে।
ঘটনাস্থলে থাকা এএফপির একজন প্রতিবেদক জানিয়েছেন, ওই এলাকায় বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। মার্চ মাসে সুদানের রাজধানী খার্তুমের নিয়ন্ত্রণ হারানোর পর আরএসএফ সেখানে পিছু হটেছিল।
অন্যদিকে সেনাবাহিনী জানিয়েছে, সোমবার শুরু হওয়া এই অভিযানের লক্ষ্য ছিল খার্তুম রাজ্যে আধাসামরিক বাহিনীর সর্বশেষ অবস্থানগুলো থেকে তাদের হটানো। মুখপাত্র নাবিল আবদাল্লাহ এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আমরা বৃহৎ পরিসরের অভিযান চালাচ্ছি এবং আমরা খার্তুম রাজ্যের পুরো এলাকা এই অপরাধী সন্ত্রাসীদের হাত থেকে মুক্ত করতে চলেছি।’
২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে চলা এই যুদ্ধে সুদানের স্বঘোষিত শাসক জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহানের নেতৃত্বাধীন সেনাবাহিনী ও তার সাবেক উপপ্রধান মোহাম্মদ হামদান দাগলোর (হেমেতি) নেতৃত্বাধীন আরএসএফের মধ্যে সংঘাত চলছে।
বর্তমানে উভয় পক্ষই নিজেদের সরকার প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
সেনাপ্রধান বুরহান সোমবার জাতিসংঘের সাবেক কর্মকর্তা কামিল ইদরিসকে নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। বিশ্লেষকেরা তার এ পদক্ষেপকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়ার চেষ্টা ও চলমান যুদ্ধের মধ্যে একটি কার্যকর বেসামরিক নেতৃত্বাধীন সরকার গঠনের উদ্যোগ হিসেবে দেখছেন।
আফ্রিকান ইউনিয়ন মঙ্গলবার এই নিয়োগকে স্বাগত জানিয়ে একে ‘সমন্বিত শাসনের পথে পদক্ষেপ’ বলে আখ্যা দিয়েছে। একই সঙ্গে তারা আশা প্রকাশ করেছে, এই পদক্ষেপ সুদানে ‘সংবিধানসম্মত শাসন ও গণতান্ত্রিক সরকারব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা’ করবে।
এর আগে আরএসএফ এপ্রিলে জানিয়েছিল, তারা নিজেদের বিকল্প সরকার গঠন করবে। এর কয়েক সপ্তাহ আগে তারা কেনিয়ায় একটি সনদে স্বাক্ষর করেছিল, যেখানে সামরিক ও রাজনৈতিক মিত্রদের একটি জোটও ছিল।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে আরএসএফ দেশব্যাপী বিভিন্ন স্থানে ড্রোন হামলা চালিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে লোহিত সাগর উপকূলীয় বন্দর নগরী পোর্ট সুদান, যেখানে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর সেনাবাহিনীঘনিষ্ঠ সরকার আসন গেড়েছে। নাইল নদীর ওপারে অবস্থিত ওমদুরমান গত কয়েক দিনে সংঘর্ষের মূল কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। এ ছাড়া এই সপ্তাহে ড্রোন হামলায় ওমদুরমানের তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর পুরো খার্তুম রাজ্যে একাধিক দিনের জন্য বিদ্যুৎ বিভ্রাট দেখা দেয়।
সেনাবাহিনী দক্ষিণাঞ্চলের আরএসএফ নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোতেও হামলা চালাচ্ছে, যেখানে তারা নতুন নতুন এলাকা দখলের চেষ্টা করছে এবং প্রতিপক্ষের রসদ সরবরাহের পথ বন্ধ করে দিতে চাইছে। ইমার্জেন্সি লইয়ার্স নামের একটি পর্যবেক্ষক সংস্থা রবিবার জানায়, গত সপ্তাহে দক্ষিণ করদোফান রাজ্যের আল-হামাদি গ্রামে সেনাবাহিনীর হামলায় চার শিশুসহ অন্তত ১৮ জন বেসামরিক নিহত হয়েছে।
এই যুদ্ধে এখন পর্যন্ত কয়েক হাজার মানুষ নিহত ও এক কোটি ৩০ লাখের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং জাতিসংঘ একে ‘বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ মানবিক সংকট’ হিসেবে উল্লেখ করেছে। সংঘাতের ফলে সুদান কার্যত বিভক্ত হয়ে গেছে—উত্তর, পূর্ব ও মধ্যাঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করছে সেনাবাহিনী; আর দারফুর ও দক্ষিণের বড় অংশ আরএসএফের নিয়ন্ত্রণে।