img

আইসিসির মাসসেরা ক্রিকেটার মেহেদী হাসান মিরাজের জন্ম ও শৈশব কেটেছে খুলনার মাটিতে। এখান থেকেই তার ক্রিকেটযাত্রার শুরু, যা ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়েছে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে। তবে দীর্ঘ আট বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে এখনো নিজ শহর খুলনায় একটি ম্যাচও খেলার সুযোগ হয়নি তার। বিষয়টি মিরাজের জন্য অত্যন্ত কষ্টের ও বেদনাদায়ক।

 

সেই না পাওয়ার কষ্ট নিয়েই গত বৃহস্পতিবার ওয়ালটনের র‌্যালিতে অংশ নিতে খুলনা সফরে আসেন মেহেদী হাসান মিরাজ। সফরের এক ফাঁকে হোটেলের লবিতে স্থানীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনায় মিরাজ বলেন, ‘আমি খুলনার মাঠে আবার খেলতে চাই।’ এ সময় তার কণ্ঠে ছিল একরাশ আবেগ, হৃদয়ের গভীর থেকে উঠে আসা শেকড়ের টান।

খুলনা বিভাগীয় স্টেডিয়ামের আগের জৌলুস ফিরিয়ে আনতে নানা মহলে কথা বলেছেন বলে জানান মেহেদী হাসান মিরাজ।

 

তিনি বলেন, ‘আমরা দেখেছি এখানে অনেক আন্তর্জাতিক ম্যাচ হয়েছে, বিপিএলের ম্যাচও অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন সমস্যার কারণে মাঠটি ব্যবহারের বাইরে চলে যাচ্ছে। যারা দায়িত্বে রয়েছেন, তাদের উচিত এমন একটি ঐতিহাসিক স্টেডিয়াম যেন হারিয়ে না যায়, সে বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া। আমি এ বিষয়টি নিয়ে অনেক জায়গায় কথা বলেছি, এবং তারা বিষয়টি নিয়ে বেশ ইতিবাচকও।’

 

মিরাজ বলেন, ‘আমি খুলনারই সন্তান। ছোটবেলায় খুলনার এমন কোনো জায়গা নেই, যেখানে ক্রিকেট খেলিনি। মাঠের অভাব ছিল, সুযোগ-সুবিধাও ছিল না, তবু আমরা খেলেছি। আজ জাতীয় দলের ক্রিকেটার হলেও আমার হৃদয় পড়ে থাকে খুলনাতেই। তাই যখন ওয়ালটনের দেশব্যাপী র‌্যালিতে অংশ নেওয়ার প্রস্তাব এলো, আমি একনিষ্ঠভাবে খুলনাকেই বেছে নিয়েছি।

 

ভবিষ্যতে খেলার ক্ষেত্রেও আমি খুলনাকেই অগ্রাধিকার দিতে চাই।’

 

‘কিন্তু এখানে মাঠের যে করুণ অবস্থা, তা আমাকে সত্যিই কষ্ট দেয়,’ বলেন মিরাজ। ‘স্টেডিয়ামের বর্তমান পরিস্থিতি দেখে মনেই হয় না যে এখানে এখন খেলার মতো পরিবেশ আছে। বিষয়টি নিয়ে আমি বিভিন্ন পর্যায়ে অনেকের সঙ্গে কথা বলেছি। আশা করছি, যারা দায়িত্বে আছেন, তারা খুলনা বিভাগীয় স্টেডিয়ামটির উন্নয়নে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবেন।’

আইসিসির ‘প্লেয়ার অব দ্য মান্থ’ পুরস্কার অর্জন প্রসঙ্গে মিরাজ বলেন, ‘এই প্রথম আমি এই সম্মাননা পেলাম, খুব ভালো লাগছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘ভালো পারফরম্যান্স করাটা সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ। এটা নিজের আত্মবিশ্বাস বাড়ায়, দলের জন্য অবদান রাখার সুযোগও তৈরি করে।’

উল্লেখ্য, ২০০৪ সালে আইসিসি অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপ দিয়ে যাত্রা শুরু করা খুলনা বিভাগীয় স্টেডিয়ামটি আজ অবহেলায় জর্জরিত। অথচ একসময় এটি বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য ‘লাকি ভেন্যু’ হিসেবে পরিচিত ছিল। আন্তর্জাতিক মানের এই স্টেডিয়ামে একসময় ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টি ও টেস্ট—তিন ফরম্যাটেরই ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু বিগত কয়েক বছর ধরে সেখানে কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজন করা হয়নি। স্টেডিয়ামের নাম পরিবর্তন করে পারিবারিক প্রতিষ্ঠানের রূপ দেওয়া হলেও খেলাধুলার উন্নয়নে নেওয়া হয়নি কোনো কার্যকর পদক্ষেপ। রাজনৈতিক টানাপোড়েনে পড়ে এ ভেন্যুটি হারাতে বসেছে তার গৌরবময় অতীত।

এই বিভাগের আরও খবর