img

নগরায়ন ও শিল্পায়নের চাপে কৃষিজমি ধ্বংসের ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) নেতারা। তারা কৃষি জমি ধ্বংস করে উন্নয়ন বন্ধের দাবি জানিয়েছেন। একইসঙ্গে অবৈধ ইটের ভাটা বন্ধ, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ এবং কৃষি জমি ধ্বংস করে পাথর উত্তোলন বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।

শুক্রবার (১৬ মে) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও সমাবেশে এই আহ্বান জানান তারা।

 

বাপা সভাপতি অধ্যাপক নুর মোহাম্মদ তালুকদারের সভাপতিত্বে ও যুগ্ম সম্পাদক হুমায়ুন কবির সুমনের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তৃতা করেন সাধারণ সম্পাদক মো. আলমগীর কবির, যুগ্ম সম্পাদক ড. মাহবুব হোসেন, অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার, ফরিদুল ইসলাম ফরিদ ও ড. হালিম দাদ খান, জাতীয় কমিটির সদস্য নাজিম উদ্দীন, হাজী শেখ আনছার আলী ও মো. আবদুল হামিদ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মুনিরুজ্জামান, উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে, গ্রীন ভয়েসের সহ-সমন্বয়ক মো. আরিফুর রহমান ও মোনছেফা আক্তার তৃপ্তি, গ্রীন ভয়েস ইডেন মহিলা কলেজ শাখার সাধারণ সম্পাদক তাহমিন প্রমুখ।

 

সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক নুর মোহাম্মদ তালুকদার বলেন, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কৃষিজমি, নদী তীরবর্তী উর্বর ভূমি, এমনকি বনাঞ্চল পর্যন্ত বালু, পাথর উত্তোলন ও ইটভাটা তৈরির নামে বেহাত হচ্ছে। এই অপতৎপরতা খাদ্য নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলছে। একইসঙ্গে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করে দীর্ঘমেয়াদে জনজীবনে সংকট তৈরি করছে।

 

এ সমস্যা থেকে উত্তোরণের জন্য সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।

 

টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রকৃতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে সম্পদের ব্যবহার নিশ্চিত করার আহ্বান জানান আলমগীর কবির। তিনি বলেন, বালু ও পাথর উত্তোলনের নামে কৃষিজমি ধ্বংস শুধু অর্থনৈতিক সংকটই নয়, এটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এক পরিবেশগত ধ্বংসযজ্ঞ। বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১০ অনুযায়ী সেতু, কালভার্ট, ড্যাম, ব্যারাজ, বাঁধ, সড়ক, মহাসড়ক, বন, রেললাইন ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা বা আবাসিক এলাকা থেকে সর্বনিম্ন এক কিলোমিটারের মধ্যে বালু তোলা যাবে না।

 

কিন্তু সেই আইনকে তোয়াক্কা না করেই বালু খেকোরা বালু উত্তোলন করছে। সরকারের দুর্বল নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, কৃষিজমি সংরক্ষণ আইনের প্রয়োগে শৈথিল্যতায় এর জন্য দায়ী বলে তিনি মনে করেন।

 

ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, ইট পোড়ানোর সময় কয়লা, কাঠ ও টায়ার ব্যবহারে বিষাক্ত গ্যাস নির্গমনের ফলে শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি ও ফুসফুসের রোগ বৃদ্ধি এবং বায়ুদূষণের কারণে আশেপাশের এলাকার ফসলের উৎপাদনশীলতা হ্রাস। ইট তৈরির জন্য কৃষিজমির উর্বর টপসয়েল অপসারণ এর প্রভাবে মাটির উর্বরতা নষ্ট হয়ে চিরতরে কৃষি অনুপযোগী হয়ে পড়া, মাটিতে ভারী ধাতু মিশে বিষাক্ত হচ্ছে। মানব দেহে এর ক্ষতিকর প্রভাব প্রতিনিয়ই লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

 

বায়ুদূষণের ফলে মানুষের বয়স গড়ে ৭ থেকে ৮ বছর কমে গিয়েছে।

 

দেশে প্রশাসনিক দূবূলতার কারণে অবৈধ্যভাবে বালু উত্তোলন বৃদ্ধি পেয়েছে বলে মনে করেন উদীচীর সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে। তিনি দেশের পরিবেশ আইনগুলো কাগজে কলমেই বিদ্যমান না রেখে সেগুলো বাস্তবে কঠোর প্রয়োগের মাধ্যমে দেশের পরিবেশ রক্ষার আহ্বান জানান।

এই বিভাগের আরও খবর