ভারতীয় নারীদের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন যে পাকিস্তানি ক্রিকেটাররা

আলাপ হয়েছিল পেশার খাতিরে, কখনো আবার বন্ধুত্বই গড়ে উঠেছিল। বারবার দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ-সংঘর্ষ চললেও প্রেম কিন্তু সীমান্ত মানেনি। একাধিকবার ভারতীয় নারীদের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন পাকিস্তানের ক্রিকেটাররা। কোনো সম্পর্ক দাঁড়ি টেনেছে।
আবার কেউ কেউ সুখে-শান্তিতে সংসারও করেছেন।
শোনা যায়, পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন বলিউড অভিনেত্রী রেখা। এমনকি এক সংবাদপত্রে তাদের বিয়ে নিয়েও আলোচনাও শুরু হয়েছিল। শোনা যায়, ১৯৮৫ সালের এপ্রিল মাসে প্রায় এক মাসের জন্য মুম্বাই গিয়েছিলেন ইমরান।
সেখানে তাঁর সঙ্গে আলাপ হয়েছিল রেখার। তারপর মাঝেমধ্যেই নাকি কখনো সমুদ্রসৈকতের ধারে, কখনো আবার কোনো নাইটক্লাবে দুজনকে একসঙ্গে দেখা যেত।
জনশ্রুতি, রেখার বাড়িতেও নাকি ইমরানকে যেতে দেখা গিয়েছিল। রেখা ও ইমরান যে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন, তা নিয়ে বলিউডে অন্দরমহলে ফিসফাঁস শুরু হয়েছিল সেই সময়।
এমনকি ইমরানের সঙ্গে রেখা বিবাহবন্ধনেও আবদ্ধ হতে পারেন, সেই গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছিল। পরে অবশ্য সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দুই তারকার সম্পর্ক নিয়ে জলঘোলা থেমে গিয়েছিল।
শুধু রেখা নন, বলিউডের আরো দুই অভিনেত্রীর সঙ্গেও নাকি সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন ইমরান। শোনা যায়, অভিনেত্রী শাবানা আজমির সঙ্গেও নাম জড়িয়েছিল ইমরানের। যদিও এই প্রসঙ্গে দুজনের কেউই কোনো মন্তব্য করেননি।
১৯৭৯ সালের নভেম্বর মাসে খেলার সূত্রেই বেঙ্গালুরু গিয়েছিলেন ইমরান। সেই সময় বেঙ্গালুরুর ক্রিকেট স্টেডিয়ামের ড্রেসিং রুমে ইমরানের ২৭তম জন্মদিন পালন করা হয়েছিল। সেখানে উপস্থিত ছিলেন পাকিস্তান ক্রিকেট দলের অন্য সদস্যরাও। শোনা যায়, ইমরানের ২৭তম জন্মদিনে তাঁর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন বলিউড অভিনেত্রী জিনাত আমান। জিনাতের সঙ্গেও নাকি সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন ইমরান। কিন্তু এই বিষয়েও প্রকাশ্যে কেউই কিছু জানাননি।
১৯৯৫ সালে বিয়ে করেছিলেন পাকিস্তানের সাবেক ক্রিকেটার ওয়াসিম আকরাম। কিন্তু ২০০৯ সালে তাঁর স্ত্রী মারা যান। চার বছর পর শানিয়েরা আকরাম নামে অস্ট্রেলিয়ার এক সমাজকর্মীকে বিয়ে করেন ওয়াসিম। তবে বিবাহবিচ্ছেদের আগে এক বাঙালি অভিনেত্রীর সঙ্গে নাম জড়িয়ে পড়েছিল ওয়াসিমের। ২০০৮ সালে একটি রিয়ালিটি শোয়ের সেটে ওয়াসিমের সঙ্গে দেখা হয়েছিল বলি অভিনেত্রী বাঙালি কন্যা সুস্মিতা সেনের। সুস্মিতা এবং ওয়াসিম দুজনেই ওই শোয়ের বিচারকের আসনে ছিলেন। সেই সময়েই নাকি দুজনের বন্ধুত্ব হয়েছিল।
শোনা যায়, স্ত্রীর মৃত্যুর পর সুস্মিতার সঙ্গে ওয়াসিমের বন্ধুত্ব আরো গভীর হয়ে উঠেছিল। শুটিংয়ের পর দুজনকে একসঙ্গে নানা জায়গায় দেখা যেত। বলিউডের একাংশের দাবি, দুই তারকা নাকি সম্পর্কে ছিলেন। এমনকি একত্রবাসও করেছিলেন তাঁরা। পাকিস্তানি ক্রিকেটার-বন্ধু ওয়াসিম সম্পর্কে সুস্মিতা সামাজিক মাধ্যমে লিখেছিলেন, ‘ওয়াসিম আমার খুব ভালো বন্ধু। আমার জীবনে কোনো ভালো বন্ধু থাকা মানেই যে তাঁর সঙ্গে আমার সম্পর্ক তৈরি হবে এমন কোনো অর্থ নেই। যদি আমার কাউকে পছন্দ হয় তাহলে নিজে থেকেই সে কথা সবাইকে জানাব।’
পাকিস্তানি ফাস্ট বোলার হাসান আলীও প্রেমে পড়েছিলেন এক ভারতীয় নারীর। হরিয়ানার বাসিন্দা ছিলেন সামিয়া আর্জু। পেশায় অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন সামিয়া। ভারত এবং পাকিস্তানের এই দুই নাগরিক একে অপরের প্রেমে মজেছিলেন। ২০১৯ সালে সামিয়াকে বিয়ে করেন হাসান। বিয়ের দুই বছর পর ২০২১ সালে কন্যাসন্তানের জন্ম দেন সামিয়া। স্ত্রী এবং সন্তান ভরপুর সংসার করছেন হাসান।
সত্তর থেকে আশির দশকে হিন্দি চলচ্চিত্রজগতে সর্বাধিক উপার্জনকারী অভিনেত্রীদের দলে নাম লিখিয়েছিলেন রিনা রায়। বলিউডে কানাঘুষো শোনা যায় যে, বলিউড অভিনেতা শত্রুঘ্ন সিন্হাকে পছন্দ করতেন রিনা। কিন্তু ১৯৮০ সালে বিয়ে করে ফেলেছিলেন শত্রুঘ্ন।
বলিউডের জনশ্রুতি, লন্ডনে বলি অভিনেতা অমিতাভ বচ্চনের একটি অনুষ্ঠান দেখতে গিয়েছিলেন রিনা। সেই অনুষ্ঠানে রিনার সঙ্গে আলাপ হয়েছিল পাকিস্তানের ক্রিকেটার মোহসিন খানের। প্রথম আলাপের পরেই তাঁদের বন্ধুত্ব গাঢ় হতে থাকে। লন্ডনের রাস্তায় একাধিক বার নাকি তাঁদের ডেট করতে দেখা গিয়েছিল। বহু বছর মোহসিনের সঙ্গে সম্পর্কে থাকার পর ১৯৮৩ সালে তাঁকে বিয়ে করেছিলেন রিনা। বিয়ের পর অভিনয় ছেড়ে লন্ডনে চলে গিয়েছিলেন তাঁরা। ছ’বছর লন্ডনে সংসার করার পর আবার মুম্বাই ফিরে গিয়েছিলেন মোহসিন এবং রিনা। বিয়ের পর কন্যাসন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন রিনা।
ছ’বছর গৃহবধূ থাকার পর আবার অভিনয়ে ফিরতে চেয়েছিলেন রিনা। এমনকি, মোহসিনকেও তিন-চারটি হিন্দি ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ করে দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু এই আলোর দুনিয়া থেকে মুক্তি চেয়েছিলেন মোহসিন। শোনা যেতে থাকে যে, লন্ডনে গিয়ে পাকাপাকি ভাবে বসবাস করতে চেয়েছিলেন মোহসিন। কিন্তু রিনার তাতে মত ছিল না। বলিপাড়ার একাংশের দাবি, মোহসিনের বিলাসবহুল জীবনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে উঠতে পারছিলেন না রিনা। তাই ১৯৯০ সালে বিবাহবিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তাঁরা।
কন্যা জান্নাতের দায়িত্ব কে নেবেন তা নিয়ে মামলা-মোকদ্দমা চলতে থাকে মোহসিন এবং রিনার। আইনি মতে প্রথমে কন্যার দায়িত্ব পেয়েছিলেন মোহসিন। বিবাহবিচ্ছেদের পর পাকিস্তানের এক নারীকে বিয়ে করেছিলেন তিনি। তার পর আইনি মতে কন্যার দায়িত্ব পেয়েছিলেন রিনা।
পাকিস্তানের প্রাক্তন ক্রিকেটার শোয়েব আখতারের সঙ্গে নাম জড়িয়েছিল বলিউড অভিনেত্রী সোনালি বেন্দ্রের। ২০১৯ সালে শোয়েব জানিয়েছিলেন, সোনালির ছবি নাকি নিজের মানিব্যাগে ভরে রাখতেন তিনি। সোনালিকে নাকি বিয়েও করতে চেয়েছিলেন তিনি। এক সাক্ষাৎকারে শোয়েব জানিয়েছিলেন, সোনালি যদি তাঁর বিয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন তবে তাঁকে অপহরণ করবেন। শোয়েবের এই মন্তব্যের পর সর্বত্র আলোচনার ঝড় উঠেছিল।
সোনালির সঙ্গে শোয়েবের সম্পর্ক নিয়ে কানাঘুষো বাড়তে থাকলে শোয়েব জানিয়েছিলেন, সোনালি যে ভাবে ক্যানসারের সঙ্গে যুদ্ধ করেছেন, তা দেখে অভিনেত্রীর একনিষ্ঠ অনুরাগী হয়ে উঠেছিলেন তিনি। ব্যক্তিগত স্তরে সোনালির সঙ্গে তাঁর কোনও সম্পর্ক নেই বলেও দাবি করেছিলেন শোয়েব।
২০১০ সালের ১২ এপ্রিল হায়দরাবাদে ভারতীয় টেনিস তারকা সানিয়া মির্জাকে বিয়ে করেছিলেন প্রাক্তন পাকিস্তানি অধিনায়ক শোয়েব মালিক। বিয়ের এক সপ্তাহ আগেই পাকিস্তান থেকে বরযাত্রী চলে এসেছিল ভারতে। আর সেই সময়েই আয়েশা সিদ্দিকির নাম শোনা গিয়েছিল।
ভারতের নাগরিক ছিলেন আয়েশা। তিনি দাবি করেছিলেন যে, শোয়েব নাকি তাঁর স্বামী। ভারতে খেলতে এসে আয়েশার বাড়িতে নিমন্ত্রণ ছিল শোয়েব-সহ পাকিস্তান দলের ক্রিকেটারদের। সেখানেই নাকি বিয়ে হয়েছিল শোয়েব এবং আয়েশার। সানিয়ার সঙ্গে বিয়ের আগে সেই ঘটনা চাঞ্চল্য তৈরি করেছিল।
আয়েশার সঙ্গে বিয়ের কথা অস্বীকার করেননি শোয়েব। কিন্তু তিনি জানিয়েছিলেন, ফোনে আয়েশার সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছিল তাঁর। সে কথা মানতে চাননি আয়েশা। জল গড়ায় আদালত পর্যন্ত। শেষ পর্যন্ত সানিয়াকে বিয়ের আগে আয়েশার সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ হয়েছিল শোয়েবের।
২০২২ সালের নভেম্বরে পাক সংবাদমাধ্যমের খবরে সানিয়া এবং শোয়েবের বিবাহবিচ্ছেদের গুঞ্জন তৈরি হয়েছিল। সেই সময়ই জানা গিয়েছিল যে, সানিয়া এবং শোয়েব একসঙ্গে থাকছেন না। ২০২৩ সালে বিচ্ছেদ হয়েছিল তাঁদের। সানিয়ার সঙ্গে বিচ্ছেদের পর ২০২৪ সালে পাক অভিনেত্রী সানা জাভেদকে বিয়ে করেন শোয়েব।
সূত্র : আনন্দবাজার