উত্তেজনার মাঝেও যোগাযোগ রাখছে ভারত ও পাকিস্তানের নিরাপত্তা উপদেষ্টারা

‘অপারেশন সিন্দুর’–এর পর দুই দেশের মধ্যে সামরিক উত্তেজনা চরমে উঠলেও ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল এবং পাকিস্তানের নতুন নিযুক্ত এনএসএ লেফটেন্যান্ট জেনারেল আসিম মালিকের মধ্যে যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে। পাশাপাশি দুই দেশের হাই কমিশনের মাধ্যমেও চালু রয়েছে কূটনৈতিক সংলাপ। ইন্ডিয়ান ক্সপ্রেসের প্রতিবেদনে এ খবর বলা হয়েছে।
অন্যদিকে পাকিস্তান ভিত্তিক ইংরেজি সংবাদপত্র এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের প্রতিবেদনেও বলা হয়েছে, ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর পাকিস্তান ও ভারতীয় জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের (এনএসএ) মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে ইসলামাবাদ।
বুধবার ভোরে পাকিস্তান ও আজাদ জম্মু ও কাশ্মীরে ভারতীয় ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর এই আলোচনা হয় বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।
দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে দুই দেশ ‘সংকট মোড়ে’ থাকলেও কূটনৈতিক চ্যানেল পুরোপুরি খোলা রয়েছে। ইসলামাবাদে ভারতের চার্জ দ্য’অ্যাফেয়ার্স গীতিকা শ্রীবাস্তব পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বুধবার পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তাকে ডেকে এনে পাকিস্তান ও পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরে ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানানো হয়।
সূত্র জানায়, এই ঘটনার পর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মার্কো রুবিও ভারতীয় এনএসএ অজিত ডোভালের সঙ্গে কথা বলেন। তারপর থেকেই দুই পক্ষের মধ্যে নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ বজায় আছে।
তবে এক শীর্ষ ভারতীয় কর্মকর্তা বলেন, ‘যোগাযোগ থাকা মানে আলোচনা হওয়া নয়।’ তিনি স্পষ্ট করে দেন যে, এই যোগাযোগ কেবল পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য, কোনো আলোচনার অংশ নয়।
পাকিস্তানের এক্সপ্রেস ট্রিবিউনেও প্রতিবেদনেও বলা হয়েছে, পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও আইএসআই প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল আসিম মালিক ভারতের এনএসএ অজিত ডোভালের সঙ্গে কথা বলেছেন বলে জানা গেছে। এই যোগাযোগকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার অংশ হিসেবেই দেখা হচ্ছে।
পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন-কে বলেন, ‘হ্যাঁ, পাকিস্তান ও ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের মধ্যে যোগাযোগ হয়েছে।’ তবে আলোচনার বিস্তারিত জানাতে রাজি হননি তিনি।
এক পাকিস্তানি কর্মকর্তা জানান, ‘সঙ্কটকালে এ ধরনের যোগাযোগের চ্যানেল অপরিহার্য।
’ সূত্রের দাবি, একটি তৃতীয় পক্ষ ভারতীয় হামলার আগে পাকিস্তানকে সতর্ক করে দিয়েছিল। একই সূত্র আরো জানায়, ভারত এ সংঘর্ষ আর বাড়াতে চায় না — এমন বার্তাও এসেছে।
ভারতীয় সেনা ঘাঁটিগুলো এখনও সর্বোচ্চ সতর্কতায় রয়েছে। পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরসহ পাকিস্তানের অভ্যন্তরে নয়টি টার্গেটে ভারতের হামলার পর পাকিস্তান প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, পাকিস্তান সম্প্রতি সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আসিম মালিককে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা (এনএসএ) হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে।
এর আগে পাকিস্তানের আইএসপিআর প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরিফ চৌধুরী সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমরা চাইলে ভারতের আরো ১০টি বিমান গুলি করে নামাতে পারতাম। কিন্তু আমরা সংযম দেখিয়েছি।’
এদিকে ভারতীয় মিডিয়াকে পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়ার বিষয়ে একপ্রকার চুপ থাকতে দেখা গেছে। দ্য হিন্দু প্রথমে তিনটি যুদ্ধবিমান ধ্বংস হওয়ার কথা জানালেও পরে সেই প্রতিবেদন সরিয়ে নেয়। পাকিস্তানের ক্সপ্রেস ট্রিবিউন বলছে, সম্ভবত ভারতের সরকারি চাপের কারণে তারা চুপ আছে।
এক মার্কিন বিশ্লেষক সিএনএন-এ বলেন, ‘যদি সত্যিই রাফাল (যুদ্ধবিমান) গুলি করে নামানো হয়ে থাকে, তবে এটি ভারতের জন্য বড় ধরনের ধাক্কা।’
বিশ্লেষকদের মতে, এই সংঘর্ষ চীনা ও পশ্চিমা প্রযুক্তির মুখোমুখি লড়াই। ভারতের রাফালের জবাবে পাকিস্তান সম্প্রতি চীনা জে-১০সি যুদ্ধবিমান সংগ্রহ করেছে। ফরাসি গোয়েন্দা সংস্থার এক শীর্ষ কর্মকর্তা সিএনএন-কে জানান, এই প্রথম যুদ্ধক্ষেত্রে একটি রাফাল বিমান ধ্বংস হলো — যা চীনের প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতাকেও নির্দেশ করে।