img

ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের বিরুদ্ধে  আরো তীব্র অভিযান পরিচালনার ঘোষণা দিয়েছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। সোমবার নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা এ সংক্রান্ত একটি পরিকল্পনা অনুমোদন করেছে, যার আওতায় গাজা উপত্যকা পুরোপুরি দখল ও ত্রাণের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপও অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।

তবে এক ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এই অভিযান শুরু হবে না যতক্ষণ না মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আগামী সপ্তাহে মধ্যপ্রাচ্য সফর শেষ করেন। গত কয়েক সপ্তাহের ব্যর্থ যুদ্ধবিরতির চেষ্টার পর এই সিদ্ধান্ত নেয়া হলো, যা ইঙ্গিত দিচ্ছে—আন্তর্জাতিক চাপ এবং দেশের ভেতরের জনপ্রিয়তা হ্রাস সত্ত্বেও ইসরায়েল যুদ্ধ চালিয়ে যেতে প্রস্তুত।

 

 

ইসরায়েলের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম ‘কান’-এর এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, নতুন পরিকল্পনাটি ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন হবে এবং এতে কয়েক মাস সময় লাগতে পারে। প্রাথমিকভাবে গাজার একটি নির্দিষ্ট এলাকায় অভিযান চালাবে ইসরায়েলি বাহিনী।

নেতানিয়াহু এক ভিডিও বার্তায় বলেন, ‘এই অভিযান হবে অত্যন্ত তীব্র। গাজার অনেক ফিলিস্তিনিকে নিরাপত্তার জন্য সরিয়ে নেয়া হবে।

 

’ তিনি আরো বলেন, এবার আর বাহির থেকে হালকা আক্রমণ চালিয়ে ফিরে যাওয়া হবে না, বরং দখল করা এলাকাগুলো ধরে রাখা হবে।

 

মার্কিন বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ বলেন, ‘ইসরায়েল একটি স্বাধীন রাষ্ট্র, তারা নিজের সিদ্ধান্ত নিজেরাই নেয়।’ তবে তিনি আশা করেন, ট্রাম্পের সফরের আগে বা তার সময়েই জিম্মিদের মুক্তি এবং একটি যুদ্ধবিরতির চুক্তি সম্ভব হবে।

ইতোমধ্যে ইসরায়েলি সেনারা গাজার এক-তৃতীয়াংশ এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে, সেসব এলাকায়  টাওয়ার ও নজরদারি পোস্ট তৈরি করা হয়েছে।

 

তবে নতুন পরিকল্পনার আওতায় গাজার পুরো ভূখণ্ড দখলের কথা বলা হচ্ছে।

 

এক ইসরায়েলি কর্মকর্তা জানান, পুরো গাজা দখলের পাশাপাশি সাধারণ জনগণকে দক্ষিণে সরিয়ে নেয়া হবে। এ ছাড়া ত্রাণ হামাসের হাতে যাতে না পড়ে, সেজন্য ব্যবস্থাও নেওয়া হবে। তিনি আরো বলেন, রাফাহর দক্ষিণাঞ্চলে বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণ করা হবে। তবে প্রতিরক্ষা বাহিনী সরকারি কর্মকর্তাদের এই মন্তব্যে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।

 

 

গাজার অধিকাংশ মানুষ এখন অনাহারের মুখে এবং জাতিসংঘ জানিয়েছে, ২৩ লাখ মানুষের এই অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ প্রায় অনিবার্য হয়ে উঠেছে। নতুন অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছে ‘অপারেশন গিডিওনের রথ’।

প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘যদি জিম্মি মুক্তি চুক্তি না হয়, তাহলে এই অভিযান পূর্ণ শক্তিতে শুরু হবে এবং লক্ষ্য অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত থামবে না।’ অন্যদিকে, হামাসের এক জ্যেষ্ঠ নেতা মাহমুদ মার্দাওয়ি এই চাপের কৌশলকে প্রত্যাখ্যান করে বলেন, ‘সম্পূর্ণ যুদ্ধবিরতি, গাজা থেকে সম্পূর্ণ ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার, গঠনমূলক পুনর্নির্মাণ এবং উভয় পক্ষের সকল বন্দিমুক্তির বিষয়টি ছাড়া কোনো চুক্তি হবে না।’

'দখল' শব্দ নিয়ে ভয় নেই

ইসরায়েল যুদ্ধ-পরবর্তী গাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে এখনও কোনো স্পষ্ট পরিকল্পনা উপস্থাপন করেনি। তবে দেশটির কট্টর ডানপন্থীরা গাজা পুরোপুরি দখলের পক্ষে এবং এর জনগণকে স্থায়ীভাবে সরিয়ে দেয়ার দাবি করে আসছে।

অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোত্রিচ বলেন, ‘আমরা অবশেষে গাজা দখল করতে যাচ্ছি। ‘দখল’ শব্দটি নিয়ে আমাদের আর কোনো ভয় নেই।’

তবে জনমত জরিপ বলছে, ইসরায়েলি জনগণ এখন যুদ্ধের পরিবর্তে ৫৯ জন জিম্মি ফিরিয়ে আনার পক্ষেই বেশি। সংসদের বাইরে এ নিয়ে বিক্ষোভে উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়, পুলিশের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কিও হয়। এক নিহত সেনার বাবা বলেন, ‘সব পরিবারই ক্লান্ত। আমরা নিশ্চিত না—এই নতুন অভিযান আদৌ আমাদের সন্তানদের ফিরিয়ে আনবে কি না।’

এরই মধ্যে ইরান-সমর্থিত হুতি যোদ্ধারা ইয়েমেন থেকে ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে, সিরিয়া ও পশ্চিম তীরে উত্তেজনা বাড়ছে। ফলে দীর্ঘ মেয়াদী অভিযান পরিচালনার সক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।

ইসরায়েলের সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল এয়াল জামির বলেন, ইতিমধ্যেই লক্ষাধিক রিজার্ভ সেনাকে তলব করা হয়েছে, তবে সেটি গাজা পুরোপুরি দখলের উদ্দেশ্যে নয় বরং অভিযানের বিস্তারের জন্য।

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের এক আকস্মিক হামলায় ১ হাজার ২০০ ইসরায়েলি নিহত হয় এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়। এর জবাবে ইসরায়েলের স্থল ও আকাশপথে চালানো অভিযানে এ পর্যন্ত ৫২ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক।

সূত্র : রয়টার্স

এই বিভাগের আরও খবর