উত্তেজনার মধ্যে দ্বিতীয়বার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালাল পাকিস্তান

ভারতের সঙ্গে কাশ্মীর নিয়ে উত্তেজনার মধ্যেই পর পর দ্বিতীয় দিনের মতো ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়েছে পাকিস্তান সেনাবাহিনী। সোমবার পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী জানায়, তারা ১২০ কিলোমিটার (৭৫ মাইল) পাল্লার একটি ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করেছে।
এর আগে শনিবার ৪৫০ কিলোমিটার (২৮০ মাইল) পাল্লার একটি ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার কথা জানায় ইসলামাবাদ। তবে পরীক্ষাগুলো কোথায় করা হয়েছে, সে বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি।
সেনাবাহিনীর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘এই উৎক্ষেপণের লক্ষ্য ছিল সেনাদের অপারেশনাল প্রস্তুতি যাচাই এবং ক্ষেপণাস্ত্রের উন্নত ন্যাভিগেশন সিস্টেম ও নির্ভুলতা নিশ্চিত করা।’ এ প্রসঙ্গে এক বিবৃতিতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ বলেন, ‘পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা এখন শক্ত হাতে রয়েছে। সফল এই প্রশিক্ষণ উৎক্ষেপণ জাতীয় নিরাপত্তার প্রতি সেনাবাহিনীর পূর্ণ প্রস্তুতির প্রমাণ।’
এদিকে ২২ এপ্রিল ভারতের কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর হামলায় ২৬ জন নিহতের ঘটনার জেরে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দেশটির সেনাবাহিনীকে ‘সম্পূর্ণ অপারেশনাল স্বাধীনতা’ দিয়েছেন।
ভারতের পক্ষ থেকে হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করা হলেও ইসলামাবাদ এ অভিযোগ অস্বীকার করে নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছে।
পাকিস্তান সরকার সম্প্রতি আশঙ্কা প্রকাশ করেছে, ভারত শিগগিরই তাদের ওপর বিমান হামলা চালাতে পারে। ইসলামাবাদ হুঁশিয়ারি দিয়েছে—যেকোনো আগ্রাসনের জবাবে তারা শক্তভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাবে। কাশ্মীর ইস্যুতে দীর্ঘদিনের বৈরিতার জেরে পরমাণু শক্তিধর প্রতিবেশী এই দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বাড়তে থাকায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপও বাড়ছে—দুই দেশকে শান্ত থাকার আহ্বান জানানো হচ্ছে।
গত এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে নিয়ন্ত্রণরেখা (এলওসি) বরাবর রাতভর গুলিবিনিময় চলছে বলে জানিয়েছে ভারতীয় প্রতিরক্ষা সূত্র। প্রায় দেড় কোটি জনসংখ্যার মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মীর অঞ্চলটি ভারত ও পাকিস্তান দুই দেশই পুরোপুরি নিজেদের দাবি করে। অঞ্চলটি দুই দেশে বিভক্ত হয়ে আছে।
এদিকে পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ইতিমধ্যে জরুরি মহড়া চলছে। স্কুল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, বাসিন্দাদের খাদ্য ও ওষুধ মজুদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে, ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে হামলাকারীদের ধরতে চলছে ব্যাপক অভিযান। সীমান্তবর্তী অনেক বাসিন্দা নিজেদের বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে যাচ্ছেন বা বাংকার পরিষ্কার করছেন সম্ভাব্য যুদ্ধের আশঙ্কায়।
তীব্র উত্তেজনার মধ্যে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ এই সপ্তাহে মালয়েশিয়ায় নির্ধারিত একটি রাষ্ট্রীয় সফর স্থগিত করেছেন। সোমবার মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম এই তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, রবিবার রাতে দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে কথা হয় এবং শেহবাজ শরিফ আশ্বাস দিয়েছেন, তিনি চলতি বছরের শেষদিকে মালয়েশিয়া সফর করবেন।
এ ছাড়া, সোমবার ইসলামাবাদে সফর রয়েছেন ইরানের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি। পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার সাংবাদিকদের বলেন, ‘পাকিস্তান তার অবস্থান মিত্র দেশগুলোকে ব্যাখ্যা করে জানাচ্ছে।’
সূত্র : এএফপি