ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণে ‘পূর্ণ অধিকার’ দাবি ইরানের

ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণে ইরানের পূর্ণ অধিকার রয়েছে বলে শনিবার মন্তব্য করেছেন সে দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি। পশ্চিমাবিশ্বের উদ্বেগের মধ্যেই তিনি এ মন্তব্য করলেন, যখন ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনাও স্থগিত হয়ে গেছে।
আরাঘচি এদিন এক্স প্ল্যাটফরমে দেওয়া এক পোস্টে বলেন, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তির (এনপিটি) সদস্য হিসেবে পরমাণু জ্বালানি প্রস্তুতের সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া পরিচালনার অধিকার রাখে। এনপিটির বেশ কয়েকটি সদস্য দেশ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করছে, অথচ তারা সম্পূর্ণভাবে পারমাণবিক অস্ত্র প্রত্যাখ্যান করে।
চুক্তি অনুযায়ী, এনপিটি স্বাক্ষরকারী দেশগুলোকে তাদের পারমাণবিক মজুদ ঘোষণা করতে হয় এবং তা জাতিসংঘের পরমাণু পর্যবেক্ষক সংস্থা আইএইএর তত্ত্বাবধানে রাখতে হয়। অন্যদিকে পশ্চিমা দেশগুলো বহু দিন ধরেই ইরানের বিরুদ্ধে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির অভিযোগ করে আসছে, যদিও তেহরান বারবার বলেছে, তাদের পরমাণু কর্মসূচি একান্তই বেসামরিক উদ্দেশ্যে পরিচালিত হচ্ছে।
চলতি বছরের ১২ এপ্রিল থেকে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্র পারমাণবিক ইস্যুতে আলোচনায় বসে, যা ২০১৮ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের পরমাণু চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর সবচেয়ে উচ্চ পর্যায়ের সংলাপ। এই আলোচনার চতুর্থ দফা শনিবার অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও তা স্থগিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে মধ্যস্থতাকারী ওমান।
দেশটি বলেছে, ‘লজিস্টিক কারণে’ এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘যেসব দেশ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করে, তারা সবাই পারমাণবিক অস্ত্রধারী। ইরানের উচিত এই প্রক্রিয়া থেকে সরে আসা।’
ইরান বর্তমানে ৬০ শতাংশ বিশুদ্ধতা পর্যন্ত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করছে, যা ২০১৫ সালের চুক্তি অনুযায়ী নির্ধারিত ৩.৬৭ শতাংশ সীমার অনেক ঊর্ধ্বে, তবে অস্ত্র তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় মান ৯০ শতাংশের নিচে।
এর আগেও আরাঘচি বলেছিলেন, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার অধিকার ইরানের জন্য অলোচনার বিষয় নয়।
এদিকে আইএইএপ্রধান রাফায়েল গ্রোসি বুধবার বলেন, ‘সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম সহজেই গলিয়ে ফেলা বা ইরান থেকে সরিয়ে নেওয়া সম্ভব।’ তবে গত মাসে ইরান সরকারের মুখপাত্র ফাতেমেহ মোহাজেরানি বলেছেন, সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম স্থানান্তর ইরানের জন্য একটি ‘লাল রেখা’।
এ ছাড়া রুবিও বলেছেন, ইরানকে তার পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে পরিদর্শনের সুযোগ দিতে হবে, এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষজ্ঞদেরও।
তিনি আরো বলেন, ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের প্রতি তেহরানের সমর্থনও বন্ধ করা উচিত।
এই বিদ্রোহীদের হামলা ইসরায়েল ও লোহিত সাগরের জাহাজ চলাচলকে লক্ষ্য করায় যুক্তরাষ্ট্র পাল্টাহামলা চালাতে বাধ্য হয়েছে।
তেহরান অবশ্য বলছে, তাদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সংলাপ কেবল পারমাণবিক ইস্যু ও নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার ঘিরেই হওয়া উচিত। তাদের আঞ্চলিক প্রভাব ও সামরিক ক্ষমতা নিয়ে আলোচনা তারা মানে না।
গত সপ্তাহে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, একটি বিশ্বাসযোগ্য চুক্তিতে ‘ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার সক্ষমতা ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উন্নয়নও বন্ধ থাকতে হবে।’ আরাঘচি এর জবাবে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে ‘যুক্তরাষ্ট্রের নীতিকে প্রভাবিত করার চেষ্টা’ করার অভিযোগ করেন।