নৃত্যাঞ্চল পদক পেলেন ধামাইল সাধক কুমকুম রানী

প্রতি দু বছর অন্তর দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে নীরবে নিভৃতে দেশীয় সংস্কৃতি নিয়ে যারা কাজ করে যাচ্ছেন তাদের প্রতি সম্মান জানাতে ‘নৃত্যাঞ্চল পদক’ প্রদান করে আসছে দেশের স্বনামধণ্য নৃত্য সংগঠন ‘নৃত্যাঞ্চল’। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। এ বছর নৃত্যাঞ্চলের প্রাণপুরুষ মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর স্মরণে ‘নৃত্যাঞ্চল পদক ২০২৪’-এ ভূষিত হয়েছেন ধামাইল নাচের সাধক শ্রীমতি কুমকুম রানী চন্দ। আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবসে তাকে পদক প্রদান করেন নৃত্যাঞ্চলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ও দেশ বরেণ্য নৃত্যশিল্পী ও নৃত্য পরিচালক শামীম আরা নীপা ও শিবলী মোহাম্মদ।
পদক প্রাপ্তির সময় গুণী এই শিল্পী দর্শকদের উদ্দেশ্যে জনপ্রিয় একটি ধামাইল গান পরিবেশন করেন। এতো বয়সে এসেও তার এমন সুললিত কণ্ঠ মিলোনায়তনের দর্শকদের একইসঙ্গে গভীর মুগ্ধতা ও হতবাক করে।
এসময় নৃত্যাঞ্চলের দুই পরিচালক ও একুশে পদকপ্রাপ্ত দুই নৃত্যজন শামীম আরা নীপা ও শিবলী মোহাম্মদ বলেন, ‘নৃত্যাঞ্চলের প্রাণপুরুষ মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর তার দেশের প্রতি, মাটির প্রতি যে দায়বদ্ধতা, তা তিনি তুলে ধরেছেন তার লেখনির মাধ্যমে। তিনি সত্য ও সততায় বিশ্বাস করতেন।
ভালোবাসতেন স্বকীয়তা, ধারন করতেন মৌলিকত্ব। তিনি সব সময় চেয়েছেন নৃত্যাঞ্চল দেশীয় নিজস্ব মৌলিক নৃত্য ধারা গুলোকে সঠিকভাবে এগিয়ে নিয়ে যাবে। মুহাম্মদ জাহাঙ্গীরের স্মৃতির প্রতি সম্মান জানাতে নৃত্যাঞ্চল এ বছর বাংলার ঐতিহ্যবাহী লোকসংস্কৃতির ধামাইল গান ও নৃত্যের বিশিষ্ট গুনীজন ব্যক্তি হিসাবে শ্রী কুমকুম রাণী চন্দকে নৃত্যাঞ্চল পদক ২০২৪ প্রদান করেছে। আমরা নৃত্যাঞ্চলের পক্ষ থেকে গুনী এই শিল্পীর সর্বাঙ্গীন সফলতা কামনা করছি।
নৃত্যাঞ্চল শ্রীমতি কুমকুম রানী চন্দ এর মত গুণী শিল্পীকে পদক দিতে পেরে নিজেদের ধন্য মনে করছি।’
উল্লেখ্য, বৈষ্ণব কবি রাধারমণের গানে নিমগ্ন ধামাইল শিল্পী কুমকুম রানী চন্দ ১৯৫২ সালের ১০ সেপ্টেম্বর সুনামগঞ্জ জেলার বেরিগাঁও গ্রামের জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলা থেকে মায়ের সাথে বিয়ের অধিবাসে যেতেন, অধিবাসের গান শুনে বাড়ি এসে গুনগুনিয়ে গাইতেন। এভাবে তার মাঝে ক্রমেই ধামাইলের প্রতি সৃষ্টি হয় গভীর প্রীতি, তৈরি হয় এক দুর্নিবার আগ্রহ। কালের পরিক্রমাই নিজেই নিজেকে একজন
ধামাইল শিল্পী হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেন।
মাত্র ১২ বছর বয়সে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তার স্বামী ছিলেন একজন উঁচু মানের কীর্তন শিল্পী। বলা যায় স্বামীর পারিবারিক সঙ্গীতচর্চার পরিবেশই তাকে ধামাইল শিল্প বিকাশের পথকে আরো সুগম করে দেয়।
ধামাইল একটি বিস্তীর্ন সঙ্গীত ভান্ডার। যেখানে অনেকগুলো সঙ্গীতের প্রকাশ রয়েছে। যা আনুষ্ঠানিক দিক বিবেচনা করে উপস্থাপন করা হয়। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য বন্দনা, আসর, বাঁশি, জলভরা, জলধামাইল, গৌররূপ, শ্যামরূপ, বিচ্ছেদ, কুঞ্জসজ্জা, কুঞ্জবি চ্ছেদ, খেদবি”ছেদ, মান, মানভঞ্জন, সাক্ষাৎ (দুঃখ প্রকাশ), মিলন ও বিদায়। এছাড়াও আছে ঢোল আসার গান, জামাই ও কনের মা সাজানো গান, কূলা সাজানো গান, আলপনা আঁকার গান, সোমন্ধ মিথি, অধিবাসের টিকা দেয়ার গান, চুরপানি গান, জলে প্রদীপ ভাসানোর গান। সব গানের পদ গুলো রাধারমণ এর ধামাইল পদ। এছাড়াও ধামাইলে রয়েছে কারিকা ধামাইল, বাঁশি কারিকা, বিচ্ছেদ কারিকা, জলভরা কারিকা। এই সব পদগুলো সম্পর্কে কুমকুম রানীর রয়েছে বিষদ সাধনা। তার কাছে প্রায় ৭০০ রাধারমণের ধামাইল শিল্পের সংগ্রহ রয়েছে। গুণী এই শিল্পীর কাছ থেকে এদেশের অনেক শিল্পীই লোক-শিল্প ধামাইল সংগ্রহ করতে আসেন।