ওয়াকফ আইনের বিরোধিতা করায় কংগ্রেসের সমালোচনায় নরেন্দ্র মোদি
সদ্য পাস হওয়া ওয়াকফ (সংশোধনী) আইনের বিরোধিতা করায় ভারতের বিরোধী দল কংগ্রেসের সমালোচনা করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সোমবার ভারতের সংবিধান প্রণেতা ড. বি আর আম্বেদকরের জন্মবার্ষিকীতে হরিয়ানায় এক অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে মোদি অভিযোগ করেন, দলটি রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্য সংবিধান ব্যবহার করছে এবং ভারতের সংবিধান প্রণেতা আম্বেদকরের আদর্শকে সমুন্নত রাখতে ব্যর্থ হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী মোদি আরো দাবি করেন, কংগ্রেস ওয়াকফ (সংশোধনী) আইনের বিরোধিতা করে ভোট ব্যাংক রাজনীতির ভাইরাস ছড়িয়ে দিয়েছে। পাশাপাশি কংগ্রেসের বিরুদ্ধে দলিত উপজাতিদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসেবে বিবেচনা করার অভিযোগ তুলে মোদি বলেন, ‘কংগ্রেস সংবিধানকে ক্ষমতা অর্জনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে।
জরুরি অবস্থার সময় ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য সংবিধানের চেতনাকে ধ্বংস করা হয়েছিল। ভারতের সংবিধান ধর্মনিরপেক্ষ নাগরিক আইনের কথা বললেও কংগ্রেস কখনো তা বাস্তবায়ন করেনি। আজ উত্তরাখণ্ডে অভিন্ন নাগরিক আইন কার্যকর করা হয়েছে। দুর্ভাগ্যবশত কংগ্রেস এর বিরোধিতা করছে।’
কংগ্রেসের সংরক্ষণনীতির কারণে সম্প্রদায়ের কাছে কাঙ্ক্ষিত সুবিধা পৌঁছতে ব্যর্থ হওয়ার অভিযোগ করে মোদি বলেন, ‘কংগ্রেস কখনো খতিয়ে দেখেনি যে সংরক্ষণের সুবিধা এসসি/এসটি ও ওবিসি সম্প্রদায়ের কাছে পৌঁছেছে কি না। রাজনীতির কারণে সরকারি টেন্ডারে ধর্মের ভিত্তিতে রিজার্ভেশন দেওয়ার জন্য একটি আইন এনেছিল কংগ্রেস। বাবা সাহেব আম্বেদকর সংবিধানে ধর্মের ভিত্তিতে রিজার্ভেশনের কোনো স্থান থাকা উচিত নয় উল্লেখ করলেও কংগ্রেস নিজের সুবিধার জন্য ওয়াকফ নিয়ম পরিবর্তন করেছে।’
মোদির বক্তব্যের পুরোটা সময় তিনি কংগ্রেসের তীব্র সমালোচনা করেন।
ক্ষমতা অর্জনের জন্য পবিত্র সংবিধানকে অস্ত্রে পরিণত করেছে কংগ্রেস—এমন দাবি করে মোদি বলেন, ‘আম্বেদকরের সঙ্গে তারা কী করেছে, তা আমাদের ভুলে যাওয়া উচিত নয়। তিনি বেঁচে থাকাকালীন কংগ্রেস তাকে অপমান করেছে।’
এ সময় তিনি উল্লেখ করেন, নিরবচ্ছিন্ন উন্নয়ন, ত্বরান্বিত উন্নয়ন—এটাই বিজেপি সরকারের মন্ত্র।
ওয়াকফ সম্পত্তির বিষয়ে মোদি বলেন, ওয়াকফের নামে কয়েক লাখ হেক্টর জমি রয়েছে। ওয়াকফ সম্পত্তির সুবিধা যদি অভাবীদের দেওয়া হতো, তাহলে তারা উপকৃত হতো।
কিন্তু ভূমি মাফিয়ারা এই সম্পত্তি থেকে উপকৃত হয়েছে। এই সংশোধিত ওয়াকফ আইনের মাধ্যমে দরিদ্রদের লুটপাট বন্ধ হবে। নতুন ওয়াকফ আইনের অধীনে, কোনো আদিবাসীর জমি বা সম্পত্তি ওয়াকফ বোর্ড স্পর্শ করতে পারবে না। দরিদ্র মুসলিমরা তাদের অধিকার পাবে। এটাই প্রকৃত সামাজিক ন্যায়বিচার।’
মোদি তার বক্তব্যে সামাজিক ন্যায়বিচার ও দলিত ক্ষমতায়নে সংবিধানের স্থপতির ভূমিকার প্রশংসা করেন। প্রধানমন্ত্রীর হরিয়ানা সফরের অংশ হিসেবে হিসার থেকে অযোধ্যার প্রথম বাণিজ্যিক বিমানের উদ্বোধন করেন এবং মহারাজা অগ্রসেন বিমানবন্দরের নতুন টার্মিনাল ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ৪১০ কোটি টাকারও বেশি ব্যয়ে নির্মিত এই টার্মিনালটিতে একটি অত্যাধুনিক যাত্রী টার্মিনাল, কার্গো টার্মিনাল ও একটি এটিসি টাওয়ার অন্তর্ভুক্ত থাকবে। মোদি তার সফরের সময় রাজ্যে ১০ হাজার কোটি রুপিরও বেশি মূল্যের উন্নয়নমূলক প্রকল্পের উদ্বোধনও করেন। হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী নায়েব সিং সাইনি ও অন্যান্য রাজ্য মন্ত্রীরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
সূত্র : টাইমস অব ইন্ডিয়া