চার পুলিশ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তারে পরোয়ানা
ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলন চলার সময় রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় আহত এক তরুণকে গুলি করে হত্যা এবং পরে তার লাশ বিকৃত করার অভিযোগে চার পুলিশ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তারে পরোয়ানা জারি করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) সিকিউশনের আবেদনে চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এই পরোয়ানা জারি করেন। আগামী ১২ ডিসেম্বরের মধ্যে তাদের গ্রেপ্তারের অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করতে পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি (তদন্ত) জাকির হোসেন এ তালিকায় আছেন বলে জানিয়েছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
গ্রেপ্তারের স্বার্থে বাকি তিনজনের নাম প্রকাশ না করতে ট্রাইব্যুনালের নির্দেশ রয়েছে বলে জানান চিফ প্রসিকিউটর।
পরোয়ানা জারির আদেশের পর তাজুল ইসলাম বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং সাংবাদিকদের ক্যামেরায় ধরা পড়েছিল যে একজন তরুণকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে যখন তার সহকর্মী নিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন সে স্বাভাবিক অবস্থায় বেঁচেছিল। তার পায়ে আঘাত ছিল সামান্য। সেই ছেলেটিকে কাছে গিয়ে বুকে গুলি করে হত্যা নিশ্চিত করেন এবং লাশটিও নানাভাবে বিকৃত করেন।
তিনি হচ্ছেন যাত্রাবাড়ী থানার তদানীন্তন ওসি জাকির হোসেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘তিনি এখন পলাতক। এই জাকির হোসেনসহ আরো চারজন পুলিশ কর্মকর্তা, যারা যাত্রাবাড়ীর হত্যাযজ্ঞের সঙ্গে জড়িত, যাদের বিরুদ্ধে আমরা অকাট্য প্রমাণ পেয়েছি। তাদের বিরুদ্ধে আমরা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা চেয়েছিলাম।
আদালত সেটি মঞ্জুর করেছেন।’
চিফ প্রসিকিউটর বলেন, ‘হয়রানির শিকার হতে পারে ভেবে পুলিশ বাহিনী নানাভাবে দায়িত্ব পালনে অনীহা প্রকাশ করছে। আগেও বলেছি, আবারও বলছি কোনো নির্দোষ পুলিশ কর্মকর্তাকে হয়রানি করা হবে না। তবে যাদের বিরুদ্ধে অকাট্য প্রমাণ পাওয়া যাবে, তারা কেউ ছাড় পাবেন না।’
এর আগে গত ২৭ অক্টোবর প্রসিকিউশনের আবেদনে ১৭ পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিলেন ট্রাইব্যুনাল।
আগামী ২০ নভেম্বরের মধ্যে তাদের গ্রেপ্তার করে ট্রাইব্যুনালে হাজির করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ২১ জন পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে ট্রাইব্যুনাল থেকে।
এদিকে প্রসিকিউশনের আরেক আবেদনে ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) সাবেক মহাপরিচালক, সাবেক সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসানকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।
এ বিষয়ে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, সেনাবাহিনী থেকে সদ্য অব্যাহতিপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসানের বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ এসেছে। তদন্ত সংস্থা অসংখ্য হত্যাকাণ্ড ও গুমের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা পেয়েছে। ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা ইতোমধ্যেই প্রমাণ পেয়েছে। পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হলে তার ব্যাপারে আরো জানা যাবে। জিয়াউল আহসান ট্রাইব্যুনালের আদেশে গ্রেপ্তার আছেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কার্যবিধি অনুযায়ী তাকে এক দিনের জন্য জিজ্ঞাসাবাদ করতে আদালতের কাছে অনুমতি চাওয়া হয়েছিল। আদালত অনুমতি দিয়েছেন।
এই সেনা কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার তারিখের বিষয়ে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, ‘একটি নির্ধারিত তারিখে তাকে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করব। নিরাপত্তার স্বার্থে সেই তারিখটি আমরা বলছি না। জিজ্ঞাসাবাদ করে তার কাছ থেকে তথ্য উদঘাটনের চেষ্টা করা হবে।’