ক্যারিয়ার গড়ুন অটোমোবাইলে
অটোমোবাইল শিল্প খাতে কাজের সুযোগ-সম্ভাবনা দিন দিন বাড়ছে, দেশে-বিদেশে সবখানে। কারিগরি এই খাতে দক্ষ হলে শিক্ষাগত যোগ্যতা ছাড়াও ক্যারিয়ার গড়া সম্ভব। ডিপ্লোমা ও বিএসসি ডিগ্রি নিলে রয়েছে ভালো বেতনে চাকরির সুযোগ। কাজের ধরন ও সুযোগ, আয়, প্রশিক্ষণসহ দরকারি তথ্য জানিয়ে লিখেছেন সাজিদ মাহমুদ
কাজের সুযোগ বহুমুখী: শ্যামলী আইডিয়াল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চিফ ইনস্ট্রাক্টর রেজানুর রহমান বলেন, অটোমোবাইল শিল্পে কাজের সুযোগ রয়েছে মোটরবাইক বা গাড়ি সারাইখানা থেকে শুরু করে গাড়ি উৎপাদনশিল্প প্রতিষ্ঠান পর্যন্ত। বেসরকারি বা ব্যক্তি উদ্যোগে দেশের বিভাগীয় শহর, জেলা শহর, এমনকি উপজেলা বা গুরুত্বপূর্ণ ছোট-বড় শহরগুলোতে অটোমোবাইলসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রচুর কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, উন্নয়ন সংস্থাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিজস্ব যানবাহন দেখভাল ও সারাইয়ের জন্য পরিবহন বিভাগ থাকে। এই বিভাগেও অটোমোবাইল টেকনিশিয়ান ও দক্ষ কর্মীদের চাহিদা রয়েছে।
এ ছাড়া চাকরির সুযোগ আছে সরকারি প্রতিষ্ঠান বিআরটিসি, বিআরটিএ, আরএইচডি, সরকারি পরিবহন পুল, গাড়ি উৎপাদনকারী সরকারি প্রতিষ্ঠান প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডসহ সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গাড়ি মেরামত ও ট্রান্সপোর্ট বিভাগে। পিএসসির অধীনে সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর, ইনস্ট্রাক্টর বা সিনিয়র ইনস্ট্রাক্টর হিসেবে শিক্ষকতা করা যাবে। বেসরকারি পলিটেকনিক বা টিটিসিগুলোতেও ইনস্ট্রাক্টর হিসেবে চাকরির সুযোগ আছে। দক্ষতা অর্জন করতে পারলে নিজেই গাড়ির সার্ভিস প্রতিষ্ঠান দিতে পারেন।
এ ছাড়া টেকনিশিয়ান বা এক্সপার্ট হিসেবে গাড়ি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান, গাড়ি সংযোজনকারী প্রতিষ্ঠান, গাড়ি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান, গাড়ি বিক্রয়োত্তর সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন ধরনের গাড়ি বিপণনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতেও কাজ করা যাবে।
যোগ্যতার ভিত্তিতে কাজ: ভোকেশনাল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অটোমোবাইলের ওপর ট্রেড এবং পলিটেকনিক থেকে চার বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা কোর্স করা যায়। এসএসসি পাসের পর অটোমোবাইল ট্রেডে চার বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা করে বেসরকারি বা সরকারি প্রতিষ্ঠানে অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারসহ বিভিন্ন পদে চাকরি করা যাবে। গাড়ি উৎপাদন, বিক্রয়, মেরামত প্রতিষ্ঠানে ডিপ্লোমাধারী অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারদের চাহিদা ব্যাপক।
অটোমোবাইলে ডিপ্লোমার পর বিএসসি ডিগ্রি নিলে উচ্চ বেতনে চাকরির সুযোগ তো থাকছেই। ডিপ্লোমা বা ট্রেড সার্টিফিকেট না থাকলেও প্রশিক্ষণ বা দক্ষতা অর্জন করেও আয় করছেন অনেকে। মোটরসাইকেল বা মোটরগাড়ি সার্ভিস সেন্টার, অটোমোবাইল স্পেয়ার পার্টস শোরুমসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দক্ষরা টেকনিশিয়ান, সিনিয়র টেকনিশিয়ান, হেড টেকনিশিয়ান হিসেবে কাজ করতে পারেন।
আয়-উপার্জন যেমন: বেসরকারি গাড়ি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান, গাড়ি সংযোজনকারী প্রতিষ্ঠানে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারসহ বিভিন্ন পদে কর্মীদের বেতন হতে পারে শুরুতে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা বা তারও বেশি। সরকারি প্রতিষ্ঠানে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়াররা দশম গ্রেডে বা দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরির গ্রেড অনুসারে বেতন-ভাতা পান।
সরকারি পলিটেকনিক বা টিটিসিগুলোতে চাকরির ক্ষেত্রে পদ অনুসারে বেতন-ভাতা পাওয়া যায়। বেসরকারি পলিটেকনিক বা টিটিসির ইনস্ট্রাক্টরদের উচ্চ বেতনে নিয়োগ দেওয়া হয়। সামগ্রিকভাবে একজন অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারের কোনো প্রতিষ্ঠানে কাজের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা থাকলে উচ্চতর বেতনে কাজের সুযোগ রয়েছে। গাড়ি বিক্রয়ের শোরুম, স্পেয়ার পার্টস দোকান বা শোরুম বা গাড়ি বিপণনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে পদভেদে কর্মীদের বেতন হতে পারে ১৫ থেকে ২৫ হাজার টাকা বা তারও বেশি। অটোমোবাইল ওয়ার্কশপ বা ছোটখাটো সার্ভিসিং সেন্টারে একজন দক্ষ ও অভিজ্ঞ অটোমোবাইল টেকনিশিয়ান মাসে কম করে হলেও ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা আয় করতে পারেন। বিদেশে গিয়ে এই দক্ষতায় লাখ টাকারও বেশি আয় করা সম্ভব।
নিজেও হতে পারেন উদ্যোক্তা: রেজানুর রহমান বলেন, অটোমোবাইলশিল্পে কাজ শিখে ছোট বা বড় ধরনের উদ্যোক্তা হওয়া যাবে। দক্ষ টেকনিশিয়ানরা চাইলে নিজেরাই দিতে পারেন মোটরবাইক বা মোটরগাড়ির ওয়ার্কশপ বা মেরামতের কারখানা, যেখানে কাজের সুযোগ হয় অনেকের। এ ছাড়া অনেক ডিপ্লোমাধারী বা বিএসসি ডিগ্রিধারীও কাজে দক্ষ হয়ে অটোমোবাইল খাতের নানা ধরনের উদ্যোক্তা হচ্ছেন। ফলে নিজের ক্যারিয়ারের পাশাপাশি অন্য অনেকের কাজের সুযোগ তৈরি করা যায়। আর এ ক্ষেত্রে আয়-রোজগার চাকরির থেকে অনেক বেশি হয়ে থাকে। উন্নত দেশগুলোতে দক্ষ ও অভিজ্ঞদের কাজের সুযোগ রয়েছে। ফলে অনেকে কাজের জন্য বিদেশেও যাচ্ছেন। বিশেষ করে চীন ও দক্ষিণ কোরিয়ায় অটোমোবাইলের কাজে যাওয়া যাবে।
শর্ট কোর্স কোথায় করবেন: বর্তমানে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ন্যূনতম অষ্টম বা এসএসসি পাস বা সমমানের শিক্ষার্থীদের তিন মাস বা ছয় মাসের ট্রেডে কোর্স করার সুযোগ আছে। সরকারি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র বাংলাদেশ-কোরিয়া টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার এবং বাংলাদেশ-জার্মান টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার থেকে বিভিন্ন মেয়াদের অটোমোবাইল বিষয়ে শর্ট কোর্স করা যাবে। বাংলাদেশ শিল্প কারিগরি সহায়তা কেন্দ্র (বিটাক) থেকেও চাইলে ১৪ সপ্তাহের অটোমোবাইল মেইনটেন্যান্স ট্রেডে কোর্স করতে পারেন। বেসরকারি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের মধ্যে ইউসেপ ট্রেনিং স্কুল মিরপুর, টুইন অটোমোবাইল স্কুল মগবাজারসহ বেশ কিছু অটোমোবাইল ট্রেনিং স্কুল থেকে শর্ট কোর্স করা যাবে। তিন মাসের কোর্সে খরচ পড়বে প্রতিষ্ঠানভেদে চার থেকে ছয় হাজার টাকা। ছয় মাসের কোর্সে খরচ হবে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা।
ডিপ্লোমা ও বিএসসি করতে চাইলে: ড্যাফোডিল ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজির ভাইস প্রিন্সিপাল আব্দুল হাকিম বলেন, একজন অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারের দক্ষতা, অভিজ্ঞতা ও কাজ জানার ওপর তাঁর ক্যারিয়ার নির্ভর করে। দেশ-বিদেশে অভিজ্ঞ ও দক্ষ অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারদের কদর অনেক। এসএসসি পাসের পরই সরকারি-বেসরকারি টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার (টিটিসি), সরকারি-বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে চার বছরের ডিপ্লোমা নেওয়ার সুযোগ আছে। সরকারি পলিটেনিক ইনস্টিটিউটে শিক্ষাগত যোগ্যতায় জিপিএসহ বয়স নির্ধারণ থাকলেও বেসরকারি পলিটেকনিক থেকে ডিপ্লোমা নিতে ন্যূনতম এসএসসি পাসের সঙ্গে বয়সের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। সরকারি টিটিসি বা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে ডিপ্লোমা করতে সরকার নির্ধারিত খুবই অল্প টাকা ফি দিতে হবে। বেসরকারি টিটিসি বা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে ডিপ্লোমা নিতে প্রতিষ্ঠানভেদে টিউশন ফি লাগতে পারে এক লাখ ২০ হাজার থেকে এক লাখ ৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত। ডিপ্লোমাধারীরা চাকরির পাশাপাশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সন্ধ্যাকালীন কোর্সে বিএসসি করতে পারবেন।