img

পবিত্র আশুরা ও কারবালা এত গুরুত্বপূর্ণ কেন
 
আশুরা দিবসের আছে ঐতিহাসিক গুরুত্ব, বিশেষ আমল ও ফজিলত। কিন্তু একে কেন্দ্র করে রচিত হয়েছে নানা কল্পকাহিনি, মনগড়া ইবাদত, বিদআত ও কুসংস্কার। যার সঙ্গে মহররম ও আশুরার কোনো সম্পর্ক নেই। কোরআন-হাদিসের ভাষ্য মতে, শুধু দুটি ঘটনা আশুরা দিবসে ঘটেছে বলে প্রমাণিত—

১. মুসা (আ.) ও তাঁর সাথিদের ফেরাউন ও তার সৈন্যদের থেকে মুক্তি পাওয়ার ঘটনা, যেখানে সমুদ্রে রাস্তা বানিয়ে আল্লাহ তাআলা তাঁদের নিরাপদে পৌঁছে দিয়েছেন।


২. এই রাস্তা অতিক্রম করার সময় ফেরাউন ও তার সৈন্যদের সমুদ্রে ডুবিয়ে ধ্বংস করার ঘটনা। নবী (সা.) আশুরা দিবসে ইহুদিদের রোজা রাখতে দেখে তাদের জিজ্ঞাসা করলেন, এ দিনে তোমরা কী জন্য রোজা রাখছ? তারা বলল, এটি একটি মর্যাদাপূর্ণ দিবস। আল্লাহ তাআলা এ দিনে মুসা (আ.) ও তাঁর জাতিকে (ফেরাউনের কবল থেকে) মুক্তি দিয়েছেন। এবং ফেরাউনকে তার দলবলসহ (দরিয়ায়) নিমজ্জিত করেছেন।


এরপর মুসা (আ.) এ দিনে শুকরিয়াস্বরূপ রোজা রাখতেন। তাই আমরাও রোজা রাখি। নবী (সা.) এ কথা শুনে বলেন,  মুসা (আ.)-এর অনুসরণের ক্ষেত্রে তো আমরা তোমাদের চেয়ে অধিক হকদার। এরপর নবী (সা.) নিজেও রোজা রাখলেন এবং অন্যদের রোজা রাখতে বললেন।

(সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১১৩০; সহিহ বুখারি, হাদিস : ১১২৫, ৩৯৪৩)
এ ছাড়া এ দিনের গুরুত্ব প্রকাশ করতে গিয়ে অনেকে নানা ভিত্তিহীন কথা ও গল্প-গুজব বলে থাকেন। যেমন—এদিন ইউসুফ (আ.) জেল থেকে মুক্তি পেয়েছেন, ইয়াকুব (আ.) চোখের জ্যোতি ফিরে পেয়েছেন, ইউনুস (আ.) মাছের পেট থেকে মুক্তি পেয়েছেন, ঈসা (আ.)-কে আসমানে উঠিয়ে নেওয়া হয়। অনেকে বলে, এ দিনেই কিয়ামত সংঘটিত হবে। এসব কথার কোনো ভিত্তি নেই। (আল আসারুল মারফুআ, আবদুল হাই লাখনোভি : ৬৪-১০০; মা ছাবাহা বিসসুন্নাহ ফি আয়ামিস সানাহ : ২৫৩-২৫৭)

আশুরা ও কারবালা

রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ইন্তেকালের প্রায় ৫০ বছর পর ৬১ হিজরির ১০ মহররম কারবালায় হুসাইন (রা.)-এর শাহাদাতের ঘটনা ঘটে।


নিঃসন্দেহে তাঁর শাহাদাত তাঁর উঁচু মাকাম ও উচ্চ মর্যাদার বিষয়। কিন্তু উম্মতের জন্য তা হয়ে গেছে অনেক বড় ইমতিহান ও মুসিবতের বিষয়। তবে মহররম ও আশুরা এ ঘটনার আগে থেকেই সবিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
হাসান (রা.) ও ইয়াজিদ

হাসান (রা.) ও ইয়াজিদ সম্পর্কে কেউ কেউ এমন ধারণা পোষণ করেন, যা খুব বাড়াবাড়ি-ছাড়াছাড়ি পর্যায়ের। এ  ব্যাপারে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামায়াতের অবস্থান কী হবে, সে বিষয়ে আল্লামা ইউসুফ লুধিয়ানবী (রহ.) লেখেন : ‘মধ্যপন্থী রাস্তা হলো এই যে প্রান্তিকতা থেকে মুক্ত হয়ে চলা। সেটা হলো, ইয়াজিদের প্রশংসা করা থেকে বিরত থাকা। এর বিপরীতে হুসাইন (রা.), জুবায়ের (রা.) এবং অন্যান্য আকাবির সাহাবা ও তাবেদিয়ের (যারা ইয়াজিদের সৈন্যদের জুলুমে শহীদ হয়েছেন) অবস্থানকে সঠিক মনে করা।

কিন্তু ইয়াজিদের এই সব নিকৃষ্ট কাজ সত্ত্বেও যেহেতু তার শেষ পরিণতি কুফরের ওপর হওয়ার কোনো অকাট্য দলিল দ্বারা প্রমাণিত নয়, তাই তার কাফের হওয়ার বিষয়ে নীরব থাকা চাই এবং তার নাম নিয়ে লানত করা থেকে বিরত থাকা উচিত। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত এবং আকাবিরে দেওবন্দের এটাই মাসলাক (আকিদা ও বিশ্বাস)। এটাই নিরাপদ পন্থা। (আপকি মাসায়েল আওর উনকা হল : ১/৪০৬)

এই বিভাগের আরও খবর