গাজার স্কুলে ইসরায়েলের বিমান হামলায় নিহত অন্তত ১৬
গাজার স্কুলে ইসরায়েলের বিমান হামলায় নিহত অন্তত ১৬
গাজার একটি স্কুলে ইসরায়েলের বিমান হামলায় অন্তত ১৬ জনের প্রাণহানির খবর দিয়েছেন ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরো কয়েক ডজন। মধ্য গাজার নুসেইরাত আশ্রয়কেন্দ্রে হাজারো বাস্তুচ্যুত মানুষের আশ্রয়স্থল ছিল।
হামাস নিয়ন্ত্রিত ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এসব তথ্য জানিয়েছে।
তবে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) দাবি, আল-জাওনি স্কুল এলাকার বিভিন্ন স্থাপনায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছিল। তাই সেসব অবকাঠামোতে হামলা হয়েছে।
এদিকে ওই ক্যাম্পের আরেক বাড়িতে পৃথক বিমান হামলায় ১০ জন নিহত হওয়ার খবর মিলেছে। নুসেইরাত স্কুলে হামলার একটি ভিডিওতে দেখা যায়, ধ্বংসস্তূপ ও ধুলার মধ্যে বয়স্ক ও শিশুরা চিৎকার করছে।
তারা আহতদের পাশে দাঁড়াতে ছোটাছুটি করছিল।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, ব্যস্ত বাজারসংলগ্ন ওই স্কুল ভবনের ওপরের তলাগুলো নিশানা করে এই হামলা চালায় ইসরায়েল। সাত হাজারের মতো মানুষ ওই ভবনে আশ্রয় নিয়েছিল।
এক নারী সাংবাদিকদের বলেন, এমন কিছু শিশুর প্রাণ গেছে, যারা হামলার সময় ভবনটিতে কোরআন পড়ছিল।
কোনো ধরনের সতর্কবার্তা ছাড়াই তারা হামলা করেছে। এ নিয়ে চতুর্থবার তারা স্কুলটিতে হামলা চালাল।
হামাস পুলিশ ব্যবহার করে এমন একটি কক্ষকে হামলার নিশানা করা হয়েছিল বলে একটি সূত্র বলছে। তবে এই দাবির সত্যতা বিবিসি যাচাই করতে পারেনি।
হামাস বলছে, শনিবারের হামলায় নিহতদের মধ্যে স্থানীয় পাঁচ সাংবাদিকও রয়েছেন; তাদের পরিবারকেও নিশানা করা হয়েছিল।
নতুন করে পাঁচজনের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে যুদ্ধের মধ্যে নিহত সাংবাদিকের সংখ্যা বেড়ে ১৫৮ জনে দাঁড়িয়েছে।
সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে সোচ্চার ফ্রান্সভিত্তিক সংগঠন রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস বলছে, গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ভেতরে হামাসের হামলার পর যে যুদ্ধ শুরু হয়েছে, তাতে গাজায় শতাধিক সাংবাদিকের প্রাণ গেছে।
এক্স পোস্টে বিবৃতি দিয়ে স্কুল ভবনে হামলার কথা স্বীকার করে আইডিএফ বলছে, বেসামরিক নাগরিকদের ক্ষতির ঝুঁকি কমাতে তারা ‘নানা’ পদক্ষেপ নিয়েছে, যার মধ্যে নজরদারি ও বাড়তি গোয়েন্দা তৎপরতা অব্যাহত আছে।
ইসরায়েলি বাহিনীর দাবি, হামাস যোদ্ধারা ওই স্থানে ‘লুকিয়ে’ থেকে আইডিএফ সেনাদের ওপর হামলা চালিয়ে আসছিল।
অন্যদিকে এই হামলাকে ‘বাস্তুচ্যুত অসহায় বেসামরিক মানুষের ওপর হত্যাযজ্ঞ’ বলে বর্ণনা করেছে হামাস।
টেলিগ্রাম চ্যানেলে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠনটি বলেছে, হতাহতদের মধ্যে অনেক নারী, শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তি আছে।
এদিকে গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে গত কয়েক দিনে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে চুক্তির বিষয়ে অগ্রগতির খবর মিলছে।
ইসরায়েল বলেছে, জিম্মি মুক্তির প্রশ্নে হামাসের সঙ্গে আলোচনা করতে আগামী সপ্তাহে তারা মধ্যস্থতাকারী দল পাঠাবে।
সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতির বিষয়ে হামাসের অবস্থানে ‘উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন’ আনতে সম্মত হয়েছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের এক কর্মকর্তার বক্তব্য আসার পর ওই অগ্রগতি হয়েছে।
হামাসের শীর্ষ এক নেতা শনিবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ইসরায়েলি জিম্মি মুক্তির প্রশ্নে আলোচনায় বসতে তারা সম্মত হয়েছেন।
গাজা যুদ্ধের অবসান ঘটাতে সম্ভাব্য চুক্তির প্রথম ধাপের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনায় সম্মত হওয়ার ১৬ দিন পর এই সিদ্ধান্ত এলো ।
বিবিসি লিখেছে, গত আট মাসের যুদ্ধে ঘরহারা এক কোটি ৭০ লাখ মানুষের আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে অনেক স্কুল এবং জাতিসংঘের স্থাপনা ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
গত জুনে নুসেইরাতে জাতিসংঘ পরিচালিত আরেকটি স্কুলে হামলার ঘটনায় অন্তত ৩৫ জনের প্রাণহানি ঘটে।
স্থানীয় সাংবাদিকরা তখন বিবিসিকে বলেছিলেন, স্কুলের ওপরের তলার শ্রেণিকক্ষে দুটি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছিল একটি যুদ্ধবিমান থেকে।
ওই হামলার পর ইসরায়েলির সামরিক বাহিনীর তরফে বলা হয়েছিল, ওই স্কুলে ‘হামাসের একটি অবস্থানে’ সুনির্দিষ্ট আঘাত হানা হয়েছে এবং সেখানে থাকা ‘২০ থেকে ৩০ যোদ্ধার’ অনেকেই মারা গেছে।
জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থীবিষয়ক সংস্থার প্রধান ওই ঘটনাকে ‘ভয়ংকর’ বলেন। তিনি বলেছিলেন, একটি আশ্রয়শিবিরে সশস্ত্র সংগঠনের উপস্থিতি ‘দুঃখজনক’, তবে স্কুলটিতে এমন কেউ ছিল বলে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।