img

গাছ লাগানোর উপযুক্ত সময় বর্ষাকাল। ছাদে, বারান্দায় বাগান করতে গিয়ে অনেকেই বিভিন্ন সমস্যায় ভোগেন। জৈব উপায়ে এসব সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। পরামর্শ দিয়েছেন বিএডিসির উপসহকারী পরিচালক কৃষিবিদ সজীব চাকমা। লিখেছেন মুহাম্মদ শফিকুর রহমান
 
পাতা কোঁকড়ানো

মরিচ, টমেটো, পেঁপে গাছের অন্যতম সমস্যা পাতা কোঁকড়ানো। মাকড়, বিভিন্ন শোষক পোকা (জাব পোকা, থ্রিপস) আর লিফকার্ল ভাইরাসের আক্রমণে (যা সাদা মাছির মাধ্যমে ছড়ায়) পাতা কোঁকড়ানো হতে পারে। পাতা কোঁকড়ানো রোধের জন্য এক লিটার পানিতে দুই গ্রাম শ্যাম্পু, এক গ্রাম গুল গুলে সেই পানি স্প্রে করলে সুফল মিলবে। সপ্তাহে একবার স্প্রে করা যেতে পারে।


একই মাত্রায় ভিনেগার স্প্রে করলেও সুফল পাওয়া যায়।
টমেটো পচে যাওয়া

টমেটো কালো হয়ে পচে যায় মূলত ক্যালসিয়ামের অভাবে। পান খাওয়ার দুই গ্রাম চুন এক লিটার পানিতে গুলে গাছের পাতায় স্প্রে করতে হবে। আবার পানিতে গুলে গোড়ার মাটিতে দিলেও হবে।


ডিমের খোসার মিহি গুঁড়ো মাটি তৈরির সময় দিলে এই সমস্যা হবে না।
ফল ফেটে যাওয়া, আঁকাবাঁকা হওয়া

বোরনের অভাবে ফল ফেটে যায়, ফল ও সবজির আকার আঁকাবাঁকা হয়। বোরন মানে বরিক এসিড। দুই গ্রাম বোরন এক লিটার পানিতে গুলে স্প্রে করতে হবে।


আবার মাছি পোকার আক্রমণে এমন হতে পারে। এ জন্য মশারি নেট দিয়ে গাছ ঘিরে দেওয়া উত্তম।
কুমড়া জাতীয় ফলের কড়া পচে যাওয়া 

কুমড়া জাতীয় লতার গাছে অনেক ফুল হয়, কিন্তু টেকে না। কড়া থাকা অবস্থায় ঝরে পড়ে, পচে যায়। এর অন্যতম কারণ সঠিক পরাগায়ণ না হওয়া।


পুরুষ ফুলের পরাগদণ্ড স্ত্রী ফুলের গর্ভাশয়ের মধ্যে একটু ঘষে দিলেই কাজ শেষ। রঙিন ফুলের কৃত্রিম/হাত পরাগায়ণ সকালে আর সাদা ফুলের হাত পরাগায়ণ বিকেলে করতে হয়। মাছি পোকার আক্রমণে হলে নিচের দিকটা ফাঁকা রেখে ফল সাদা, স্বচ্ছ পলিথিন দিয়ে মুড়িয়ে রাখা যায়।

 

নতুন বাগানে করণীয়

কড়া ঝরলেই চিন্তা নয়

শুরুর দিকে অনেক ফলের কড়া এলেও বেশির ভাগ ঝরে যায়। এটা কোনো সমস্যা নয়। গাছ তার ধারণক্ষমতা অনুযায়ী ফল রেখে বাকিটা ফেলে দেবে—এটা স্বাভাবিক। যেমন—আমগাছে অনেক কড়া আসে। কিছু ঝরে পড়লে চিন্তার কিছু নেই। তবে একটি ছড়ায় যদি একটি আমও না থাকে তখন ভেবে দেখতে হবে। তবে অতিরিক্ত পানি দেওয়া, কম পানি দেওয়া, হুটহাট আবহাওয়ার পরিবর্তনে ফল ঝরে পড়তে পারে।

গাছের গ্রোথ

গাছের গ্রোথ ভালো হচ্ছে না; ফল, ফুল টিকছে না। কেমন যেন মরা মরাভাব। আবার ফল যা হয় তা আকারেও ভালো নয়। এই সমস্যার অন্যতম কারণ গাছের ঘনত্ব বেশি হওয়া। ফলে গাছ পর্যাপ্ত খাবার পায় না। আলো-বাতাসের অভাব হয়। যত্ন নিতেও সমস্যা হয়।

পাখির সমস্যা

চারা গাছের কচি পাতা পাখি খেয়ে ফেলে। যতটা না খায় তার চেয়ে বেশি নষ্ট করে। এ জন্য একটু বড় ফাঁসের জাল দিয়ে ঘিরে দিন। কাকতাড়ুয়া টাঙিয়ে দিন। পাখিরা বিপদ বুঝতে পারে। ফলে কম আসবে।

ভার্মি টি

চারার গ্রোথের জন্য ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সার দিন সাতেক পানিতে পচিয়ে সেই পানি দেওয়া যেতে পারে। একে ভার্মি টি বলে। চারা এটা দ্রুত গ্রহণ করতে পারে। বৃদ্ধি ভালো হবে।

জৈব খাবার

১০০ গ্রাম কালো সরিষা, ১০০ গ্রাম কাঁচা বাদাম এক লিটার পানিতে ১০ দিন পচিয়ে এর সঙ্গে ১০ গুণ পানি মিশিয়ে গাছের গোড়া থেকে ২-৩ ইঞ্চি দূরে অথবা টবের কিনারা বরাবর দিলে গাছ দ্রুত বড় হবে। একদম নেতিয়ে পড়া গাছও এই জৈব খাবারে সতেজ হয়ে উঠবে।

এই বিভাগের আরও খবর