img

পাবনা, নাটোর, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, কুষ্টিয়া, টাঙ্গাইলসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সৌখিন মৎস্য শিকারিরা এবারেও মেতেছেন চলনবিলের বাউৎ উৎসবে। বিলের নানা প্রজাতির মাছ শিকার যেন বাউৎ উৎসবে পরিণত হয়। মঙ্গলবার ভোরে চোখে পড়ে পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার রুহুল বিলে এমন দৃশ্য।

বিভিন্ন স্থান থেকে কাকডাকা ভোরে কারো হাতে পলো, কারো হাতে খেয়া জাল, বাদাই জালসহ মাছ ধরার নানা উপকরণ। দল বেঁধে বিলে নেমে মনের আনন্দে মাছ শিকার শুরু করেন। কেউ পাচ্ছেন বোয়াল, কেউ বা শোল, রুই, কাতল। অনেকে ফিরছেন খালি হাতে। এভাবেই চলনবিলে মাছ শিকারে মেতেছেন সৌখিন মৎস্য শিকারিরা।

জানা যায়, পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার রুহুল বিলে দল বেঁধে মাছ ধরার এই আয়োজনের নাম ‘বাউৎ উৎসব’। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বাউৎ উৎসবে অংশ নেন নানা বয়সী হাজারো মানুষ। তবে, এ বছর বিলে মিলছে না কাঙ্খিত মাছের দেখা। এতে হতাশ ও ক্ষুব্ধ মৎস শিকারিরা। তাদের অভিযোগ, অবৈধ জাল আর গ্যাস ট্যাবলেট দিয়ে মাছ ধরে নিয়েছে প্রভাবশালীরা। ফলে মাছ ও পোকামাকড় মরে গিয়ে পানিতে সৃষ্টি হয়েছে দুর্গন্ধ।

পাবনা-ফরিদপুর আঞ্চলিক সড়কের ভাঙ্গুড়া ইউনিয়নের পাটুলিপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার পাশে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ানো অন্তত ২০টি বাস। এসব বাসে কুষ্টিয়া, নাটোর, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ থেকে এসেছেন অনেক মৎস্য শিকারিরা। আবার অনেকে ইজিবাইক, অটোরিকশা, মোটরসাইকেল, ভ্যানসহ বিভিন্ন যানবাহনে এসেছেন।

এরপর রুহুল বিল অভিমুখে ছুটে চলে মানুষ। ভোরের আলো ফোটার আগেই বিলপাড়ে হাজির নানা বয়সী হাজারো মানুষ। সবার হাতে পলো, ঠেলা জাল, বাদাই জালসহ মাছ ধরার নানা উপকরণ। একসঙ্গে বিলে নেমে লোকজ রীতিতে মনের আনন্দে চলছে মাছ শিকার। দলবেঁধে মাছ ধরার এ আয়োজনে মৎস্য শিকারিদের ডাকা হয় বাউৎ। তাদের ঘিরেই উৎসবের নামকরণ। চলন বিলাঞ্চলে এমন উৎসব চলছে যুগের পর যুগ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর নভেম্বরের শেষে অথবা ডিসেম্বরের শুরুতে মাসব্যাপি চলে এই উৎসব। সপ্তাহের প্রতি শনি ও মঙ্গলবার ভোর থেকে বিলাঞ্চলের পূর্বনির্ধারিত এলাকায় দল বেঁধে মাছ শিকারে নামেন বাউৎ প্রেমিরা। বিভিন্ন বয়সী মানুষের উপস্থিতিতে বিল পাড়ে তৈরি হয় উৎসবমুখর পরিবেশ। কে মাছ পেলেন, কে পেলেন না তা নিয়ে হতাশা নেই। তাদের কাছে আনন্দটাই বড় কথা।

টাঙ্গাইল থেকে মাছ শিকারে আসা আশিকুর রহমান বলেন, বাউত উৎসবের কথা অনেক শুনেছি। এবার টাঙ্গাইল থেকে প্রায় ২০টি বাস নিয়ে পাঁচ শতাধিক লোক এসেছি মাছ ধরতে। এত লোক একসঙ্গে মাছ ধরার আনন্দই আলাদা। খুব ভাল লেগেছে।

নাটোর থেকে বাউত উৎসবে আসা আরেক মৎস্য শিকারি সাইফুল ইসলাম বলেন, প্রতিবছরই আসি এই বাউত উৎসবে। কিন্তু এবার মাছ নেই বললেই চলে। তবে আমরা মাছ পাই বা না পাই, সবাই মিলে আনন্দ করি এটাই ভাল লাগে।

বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর নভেম্বরের শেষ অথবা ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে শুরু হয় মাসব্যাপি এই উৎসব। সপ্তাহের প্রতি শনি ও মঙ্গলবার ভোর থেকে বিলাঞ্চলের পূর্বনির্ধারিত এলাকায় দল বেঁধে মাছ শিকারে নামেন বাউতেরা। চলনবিলের রুহুল বিল, ডিকশির বিল, রামের বিলসহ বিভিন্ন বিলে মাসব্যাপী চলে এই বাউত উৎসব। তবে, আগের মতো মিলছে না দেশি মাছ। এ নিয়ে হতাশ ও ক্ষুব্ধ মৎস্য শিকারিরা।

চাটমোহর উপজেলার মাছ শিকারি ময়েন প্রামানিক বলেন, প্রভাবশালীরা আগেই চায়না দুয়ারী, কারেন্ট জাল দিয়ে সব মাছ মাইরে লিছে। পরে তারা বিলে গ্যাস ট্যাবলেট দিছে, যে কারণে ছোটখাটো মাছ যা আছে বেশিরভাগ মরে গেছে। পানিতেও দুর্গন্ধ ম্যালা। এজন্যি মাছ নাই ইবার।

বিলে বাউত উৎসব দেখতে আসা হাফিজুর রহমান, কথা ইসলাম, মিরোজ হক, জুয়েল আহমেদসহ কয়েকজন বলেন, বিলে যেভাবে গ্যাস ট্যাবলেট ব্যবহার করা হয়েছে তাতে দেশি মাছের প্রজনন নষ্ট হচ্ছে। জীববৈচিত্র হারিয়ে যাচ্ছে। প্রকাশ্যে অবৈধ চায়না দুয়ারী ও কারেন্ট জাল ব্যবহার হচ্ছে। এখনই প্রশাসনের ব্যবস্থা নেয়া উচিত। না হলে আগামীতে দেশি মাছের সঙ্গে বাঙালি সংস্কৃতির এই উৎসবও হারিয়ে যাবে।

পাবনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, মাছের প্রজনন ও জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি না করে বাউত উৎসব পালন করতে হবে। এ বিষয়ে মৎস্য শিকারিদের সচতেন হতে হবে। সেইসঙ্গে বিলে গ্যাস ট্যাবলেট বা অবৈধ জাল ব্যবহার করে মাছের ও পরিবেশের ক্ষতি করছে এমন অভিযোগ পেলে মৎস্য আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি দাবী করেন।

যাযাদি/ এস

এই বিভাগের আরও খবর