img

দীর্ঘকাল ধরেই জ্বালানি তেল বাণিজ্যে অভিন্ন মুদ্রা হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে মার্কিন ডলার। কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধ ঘিরে রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা অবরোধের পরিপ্রেক্ষিতে দেশটির জন্য ডলারে লেনদেন কঠিন হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় রাশিয়া স্থানীয় মুদ্রা রুবলের পাশাপাশি চীনা মুদ্রা ইউয়ানে তেল বাণিজ্য শুরু করে। এ সময় দেশটির তেলের দুই শীর্ষ ভোক্তা দেশ হয়ে ওঠে চীন ও ভারত।

কিন্তু ভারতের সঙ্গে মুদ্রা জটিলতায় তেল বাণিজ্য নিয়ে বিপাকে পড়েছে রাশিয়া।

 

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞার পর ইউরোপের ক্রেতাদের বদলে রাশিয়ার অন্যতম বৃহৎ তেল ক্রেতা হয়ে ওঠে ভারত। কিন্তু চলতি বছরের জুলাই মাসে ভারত গোঁ ধরে বসে যে তারা তেলের দাম রুপিতে পরিশোধ করবে। রাশিয়া তাতে রাজি না হলে বাণিজ্যিক কার্যক্রম ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়।

বিষয়টির সঙ্গে সম্পৃক্ত তিনটি সূত্র রয়টার্সকে এ তথ্য জানিয়েছে।

 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সূত্রগুলো রয়টার্সকে জানায়, রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনানুষ্ঠানিক নির্দেশনার কারণে রাশিয়ার তেল কম্পানিগুলো ভারতীয় রুপিতে তেলের মূল্য নিতে রাজি হয়নি।

রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে সম্পৃক্ত এক সূত্র রয়টার্সকে বলে, রুপির মতো এ রকম রূপান্তর অযোগ্য মুদ্রায় তেলের মূল্য নেওয়ার অর্থ ছিল না, ভারতের বাইরে রুপির মূল্য নেই বললেই চলে। ভারত থেকে রাশিয়ার আমদানি উল্লেখযোগ্য না হওয়ায় রুপি নিয়ে রাশিয়া বিপদে পড়ত।

এ বিষয়ে রয়টার্স রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মন্তব্য চাইলে তারা কিছু বলতে রাজি হয়নি।

 

এই পরিস্থিতিতে গত আগস্ট মাসের মাঝামাঝি সময়ে রাশিয়ার দুটি বৃহৎ তেল কম্পানি ভারতগামী তেলবাহী জাহাজ ভিন্ন পথে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দেয়। বিষয়টির সঙ্গে সম্পৃক্ত দুটি সূত্র রয়টার্সকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। এ নিয়ে রীতিমতো অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়। পরে এই পরিস্থিতি নিরসনে একাধিক মুদ্রায় তেলের মূল্য পরিশোধ করে ভারত।

তেলের একাংশের মূল্য চীনা মুদ্রা ইউয়ানে পরিশোধ করে ভারত; এ ছাড়া ইউয়ানে রূপান্তরযোগ্য হংকং ডলারে একাংশ ও মার্কিন ডলারে রূপান্তরযোগ্য আরব আমিরাতের দিরহামে বাকি মূল্য পরিশোধ করে।

 

সূত্রগুলো রয়টার্সকে জানায়, মূলত ডলারের বিকল্প মুদ্রা অনুসন্ধান করাই মূল সমস্যা। শুধু ভারত নয়, আফ্রিকা, চীন ও তুরস্কের মতো যেসব দেশ এখন রাশিয়ার তেলের সবচেয়ে বড় ক্রেতা, তারাও এই সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে।

তবে সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়েছে ভারতের ক্ষেত্রে; সমুদ্রপথে পরিবাহিত রাশিয়ার তেলের ৬০ শতাংশ কিনছে ভারত। সামগ্রিকভাবে রাশিয়ার তেলের দ্বিতীয় বৃহত্তম ক্রেতা ভারত; প্রথম স্থানে আছে চীন।

অন্যদিকে বাণিজ্যসংক্রান্ত বিধি-নিষেধ আরো কঠোরভাবে প্রয়োগ করা হলে সমস্যা বাড়বে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার তেলবাহী ট্যাংকারের মালিকের ওপর প্রথম নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, যারা পশ্চিমাদের বেঁধে দেওয়া দামের চেয়ে বেশি দামে বিক্রির জন্য তেল পরিবহন করেছে।

গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে পশ্চিমারা রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পর থেকে তারা ডলার ও ইউরোতে বাণিজ্য করতে পারছে না। ফলে আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং ব্যবস্থায় রাশিয়ার প্রবেশাধিকার সীমিত হয়ে পড়েছে। পাঁচটি কম্পানির কাছ থেকে পাওয়া তথ্যানুসারে রয়টার্স জানিয়েছে, রাশিয়ার দৈনিক উৎপাদনের ১০ শতাংশ বা প্রায় ৯০ লাখ ব্যারেল তেল এখনো ডলার বা ইউরোতে বেচাকেনা হচ্ছে। ডলার ছাড়া অন্যান্য মুদ্রায় লেনদেন করা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে।

রয়টার্স জানিয়েছে, চলতি বছরের প্রথম দিকে ভারতের কাছে রাশিয়া তেল ও অন্যান্য পণ্য বিক্রি বাবদ ৪০ বিলিয়ন ডলার পেত, সম্প্রতি সেই অঙ্ক কিছুটা কমে এলেও এ বিষয়ে রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক পূর্ণাঙ্গ তথ্য দিতে রাজি হয়নি।

ভারতীয় মুদ্রা রুপিতে ব্যবসা করা রাশিয়ার জন্য চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠেছে। ভারতীয় মুদ্রা রুপি অন্যান্য মুদ্রায় রূপান্তরের ক্ষেত্রে দেশটি যে বিনিময় হার করেছে, তাতে অনেক ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ পর্যন্ত বেশি অর্থ ব্যয় হচ্ছে বলে রাশিয়ার বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে। চলতি বছরের এপ্রিল-সেপ্টেম্বর সময়ে রাশিয়া থেকে ভারত ৩০.৪ বিলিয়ন বা তিন হাজার ৪০ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করেছে। দেশ দুটির মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি বেড়ে ২৮.৪ বিলিয়ন বা দুই হাজার ৮৪০ কোটি ডলারে উন্নীত হয়েছে, যা আগের বছরের একই সময় ছিল ১৭ বিলিয়ন বা এক হাজার ৭০০ কোটি ডলার। সূত্র : রয়টার্স

এই বিভাগের আরও খবর