img

বাংলাদেশে মা ফারহানা করিমের সঙ্গে থাকা তিন বছরের সন্তানের সঙ্গে সপ্তাহে ১৪ ঘণ্টা সময় কাটানোর অনুমতি পেয়েছেন আমেরিকার নাগরিক গ্যারিসন রবার্ট লাট্রেল। প্রতি শনি ও মঙ্গলবার বেলা ১১টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত তিনি সন্তানের সঙ্গে সময় কাটাতে পারবেন। সেজন্য মা ফারহানা করিমকে আদালত বলেছেন, তিনি যেন নির্ধারিত দিন ও সময়ে রাজধানীর উত্তরা ক্লাবে তাদের শিশু সন্তানটিকে নিয়ে যান।

গ্যারিসন রবার্ট লাট্রেলের রিট আবেদনে শুনানির পর বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ মঙ্গলবার এ আদেশ দেন।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ফাওজিয়া করিম ফিরোজ। তাঁর সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী সজীব মাহমুদ আলম। শিশুর মা ফারহানা করিমের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল।

 

লাট্রেল-ফারহানা দম্পতির দুই সন্তান জানিয়ে আইনজীবী কাজল কালের কণ্ঠকে বলেন, ছোটো সন্তানের বয়স ১ মাস।

দুগ্ধপোষ্য হওয়ায় এ সন্তানের সঙ্গে বাবার দেখা করানোটা আদালতের কাছে বাস্তবসম্মত মনে হয়নি। যে কারণে তিন বছর বয়সী বড় সন্তানের ক্ষেত্রে আদেশ দিয়েছেন।

 

দুই সন্তানকে নিয়ে ফারাহানা করিম রাজধানীর উত্তরায় থাকেন জানিয়ে এ আইনজীবী আরো বলেন, যে কারণে আদালত দেখা করানোর স্থান হিসেবে আদালত বিশেষভাবে উত্তরা ক্লাবের কথা উল্লেখ করেছেন। সমঝোতার মাধ্যমে তারা যদি অন্যকোনো জায়গা ঠিক করে নেন, সেটা অন্য কথা।

আমার মক্কেল অর্থাৎ শিশুটির মা ফারাহানা করিম প্রতি শনি ও মঙ্গলবার বেলা ১১টায় সন্তানকে নিয়ে যাবেন। তাঁর তত্ত্বাবধানে বাবা লাট্রেল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সন্তানের সঙ্গে দেখা করবেন বা সময় কাটাবেন। আগামী ১৬ জানুয়ারি পরবর্তী আদেশের তারিখ রাখা হয়েছে বলে জানান এই আইনজীবী।

 

আইনজীবী সজীব মাহমুদ কালের কণ্ঠকে বলেন, গত ২০ নভেম্বরের আদেশ অনুযায়ী ফারহানা করিম দুই সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে আদালতে এসেছিলেন। আদালত রুদ্ধদ্বার শুনানিতে উভয় পক্ষের বক্তব্য শোনেন।

শুনানির বিরতীতে আদালতের অনুমতি নিয়েই আইনজীবীদের লাউঞ্জে লাট্রেল তাঁর সন্তানদের সঙ্গে সময় কাটিয়েছেন।

 

রিট আবেদনে বলা হয়েছে, নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া গড়ে ওঠার পর আমেরিকার মিসৌরি অঙ্গ রাজ্যের বাসিন্দা লাট্রেল ও বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত ফারহানা করিম বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেয়। ২০১৮ সালের ৩ আগস্ট তারা বিয়ে করেন। বিয়ের পর সামর্থ অনুযায়ী লাট্রেল সংসার ও পারিবারিক জীবনের সব দায়-দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। তারপরও বিভিন্ন সময় ফারহানা লাট্রেলকে মৌখিক ও শারীরিকভাবে নিপীড়ন করতেন। দিন দিন আরো বপেরোয়া হয়ে উঠছিলেন ফারহানা। লাট্রেল এ নিয়ে সতর্ক করলেও ফারহানা গা না করে বেপরোয়া জীবন-যাপন করতে থাকেন। এরকম দাম্পত্য পরিস্থিতির মধ্যে ফারাহানা অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে বাংলাদেশে চলে আসেন। পরে ২০২০ সালের ১৬ অক্টোবর উত্তরার ক্রিসেন্ট হাসপাতালে এ দম্পতির প্রথম সন্তানের জন্ম দেন। দেশে থাকার সময় রেইডাস কুইটিস নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান। এক পর্যায়ে সন্তানকে নিয়ে ফারহানা আবার আমেরিকায় ফিরে যান। 

লাট্রেল রিট আবেদনে উল্লেখ করেছেন, বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক নিয়ে ফারহানার সঙ্গে তাঁর দাম্পত্য কলহের সৃষ্টি হয়। প্রায়ই এ নিয়ে তাদের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ হতো। তারপরও চলে যাচ্ছিল তাদের দাম্পত্য জীবন। চলতি বছর ফারহানা ফের অন্তঃস্বত্ত্বা হয়ে পড়লে গত ২৭ জুন বড় সন্তানকে নিয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন। দেশে ফেরার পর লাট্রেল তাঁর বড় সন্তান ও অনাগত সন্তানের কল্যাণের কথা ভেবে ফারহানার দাবি-দাওয়া পূরণ করে আসছিলেন। কিন্তু এক পর্যায়ে লাট্রেলের সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ করে দেন ফারহানা।

গত ১৭ আগস্ট লাট্রেলকে তালাকের নোটিশ পাঠালে লাট্রেল বাংলাদেশে এসে মুসলিম পারিবাকি আইন-১৯৬১ ৭(১) ধারা অনুসারে তালাকের নোটিশ চ্যালেঞ্জ করে দেওয়ানী মামলা করেন, যা ঢাকার তৃতীয় জ্যেষ্ঠ সহকারী জজ আদালতে বিচারাধীন। এর মধ্যে গত ১৭ অক্টোবর অসুস্থ সন্তানকে দেখতে হাসপাতালে গেলে ফারহানা লাট্রেলকে দেখা করতে দেননি। পরে গত ৩০ অক্টোবর উত্তরা পশ্চিম থানার সহযোগিতায় স্ত্রী ও সন্তানদের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে লাট্রেল দেখেন, ফারহানা রেইডাস কুইটিস নামের এক ব্যক্তির বসবাস করছেন।

রিট আবেদনে লাট্রেল ফারহানা ও রেইডাস কুইটিসের বিয়ের একটি সনদ যুক্ত করেছেন। তাতে দেখা যায়, ২০১৮ সালের ১৫ নভেম্বর তারা বিয়ে করেছেন। যদি তাই হয়, তাহলে লাট্রেলকে বিয়ে করার তিনমাস পর ফারহানা রেইডাস কুইটিসকে বিয়ে করেছেন, যা অবৈধ ও বেআইনি বলে উল্লেখ করা হয়েছে রিটে।

এ অবস্থায় দুই সন্তানের হেফাজত চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন লাট্রেল। প্রাথমিক শুনানির পর গত ২০ নভেম্বর হাইকোর্ট রুলসহ আদেশ দেন। ফারহানা করিমকে দুই সন্তানকে নিয়ে মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) বেলা সোয়া ২টায় আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দেওয়া হয়।

তিন বছর ও এক মাস বয়সের দুই সন্তানকে বেআইনি ও অবৈধভাবে আটক করে রাখা হয়নি, তা নিশ্চিত হতে আদালতের সামনে দুই শিশুকে হাজির করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, জানতে চাওয়া হয় রুলে। এক সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়। সে ধারাবাহিকতায় ফারহানা সন্তানদের নিয়ে হাজির হলে উভয় পক্ষকে শুনে আদালত লট্রেলকে তাঁর বড় সন্তানের সঙ্গে দেখা করার ও সময় কাটানোর আদেশ দেন। 

এই বিভাগের আরও খবর