চলতি ওয়ানডে বিশ্বকাপে আয়োজক দেশ ভারতের পরেই সেমিফাইনালে খেলা নিশ্চিত করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। ৮ ম্যাচ শেষে ১২ পয়েন্ট নিয়ে আছে টেবিলের দ্বিতীয় স্থানে। আজ শুক্রবার লিগ পর্বের নবম ও শেষ ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে হারলেও শেষ চারে খেলা নিয়ে কোনো রকমের ঝামেলার সম্মুখীন হবে না প্রোটিয়ারা। তারপরও আজকের ম্যাচে জয়ে চোখ দক্ষিণ আফ্রিকার। অন্যদিকে, ৮ ম্যাচ শেষে ৮ পয়েন্ট নিয়ে তালিকার ষষ্ঠ স্থানে আছে আফগানিস্তান। আজ দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে ১০ পয়েন্ট নিয়ে সেমিতে খেলার আশাটুকু বাঁচিয়ে রাখতে চায় আফগানরা।

কারণ ৮ ম্যাচ শেষে পাকিস্তান ও নিউজিল্যান্ড দু’টি দলই ৮ পয়েন্ট করে সংগ্রহ করেছে। তবে বৃহস্পতিবার শ্রীলংকার বিপক্ষে জিতে ১০ পয়েন্ট নিয়ে সেমিফাইনালে খেলার আশা বাঁচিয়ে রেখেছে নিউজিল্যান্ড। শনিবার লিগ পর্বের শেষ ম্যাচে ইংল্যান্ডকে হারাতে পারলে পাকিস্তানেরও পয়েন্ট হবে ১০। তাইতো এমন একটি সুযোগ হাতছাড়া করতে চায় না আফগানরাও। এমন এক সমীকরণকে সামনে রেখে আজ শুক্রবার ভারতের আহমেদাবাদে বিশ্বকাপে নিজেদের নবম ও লিগ পর্বের শেষ ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার মুখোমুখি হবে আফগানিস্তান। বাংলাদেশ সময় দুপুর ২.৩০ মিনিটে শুরু হবে ম্যাচটি। দক্ষিণ আফ্রিকা ও আফগানিস্তানের মধ্যকার ম্যাচটি সরাসরি সম্প্রচার করবে গাজী টিভি ও টি স্পোর্টস।

এরইমধ্যে বিশ^কাপ সেমিফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়া। বাকি একটি জায়গার জন্য লড়াই করছে নিউজিল্যান্ড, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান। এই তিন দলেরই আছে ৮ ম্যাচে ৮ করে পয়েন্ট। তিন দলই যদি লিগ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে জয় বা হার বরণ করে নেয়, তাহলে রান রেট বিবেচনায় আসবে। আট ম্যাচ শেষে রান রেটে এগিয়ে নিউজিল্যান্ড। এরপর আছে যথাক্রমে পাকিস্তান ও আফগানিস্তান। শেষ ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের প্রতিপক্ষ শ্রীলংকা এবং পাস্তিানের প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড।

নিউজিল্যান্ড ও পাকিস্তানের ফলাফলের জন্য অপেক্ষায় থাকার আগে, নিজেদের কাজটা ভালোভাবে সম্পন্ন করারই মূল লক্ষ্য আফগানিস্তানের। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জয়ের স্বাদ নিয়ে সেমিফাইনালের দৌঁড়ে ভালোভাবে টিকে থাকতে চায় আফগানরা। কারণ প্রোটিয়াদের কাছে হেরে গেলে এবং নিউজিল্যান্ড বা পাকিস্তান যদি নিজেদের শেষ খেলায় জিতে যায়, তাহলে সেমির আশা শেষ হয়ে যাবে রশিদ খান-মোহাম্মদ নবীদের। আবার তিন দল হারলেও, তখন রান রেটে বিবেচনায় বড় ধরনের সমস্যায় পড়বে আফগানিস্তান। কারণ নিউজিল্যান্ড ও পাকিস্তানের চেয়ে রান রেটে অনেকখানি পিছিয়ে আফগানিস্তান। নিউজিল্যান্ডের আছে ০.৩৯৮, পাকিস্তানের আছে ০.০৩৬ ও আফগানদের আছে -০.৩৩৮ রান রেট।

এজন্য সেমিফাইনালের দৌঁড়ে ভালোভাবে টিকে থাকতে জয়ের বিকল্প নেই আফগানদের। ইনফর্ম ব্যাটসম্যান রহমত শাহ বলেন, ‘আমাদের সামনে জয় ছাড়া অন্য কোনো পথ খোলা নেই। জিতলেই ভালোভাবে সেমির দৌঁড়ে টিকে থাকবো আমরা। হেরে গেলে বিদায়। যদি নিউজিল্যান্ড ও পাকিস্তান কোনো ম্যাচ জিতে যায়। এছাড়া রান রেটেও আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। আর এই কারনে জয় ছাড়া অন্য কিছুই ভাবছি না। দক্ষিণ আফ্রিকা অনেক শক্তিশালী দল, কিন্তু আমাদের সেরা ক্রিকেট খেলতে হবে এবং যেভাবেই হোক জিততে হবে।’

আগের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জয়ের সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করে আফগানিস্তান। গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের অসাধারণ ডাবল সেঞ্চুরির ইনিংসের সুবাদে ৩ উইকেটে হার মানতে বাধ্য হয় আফগানরা। প্রথমে ব্যাট করে ৫ উইকেটে ২৯১ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর পেয়েছিল আফগানরা। বোলারদের নৈপুণ্যে ৯১ রানে অস্ট্রেলিয়ার ৭ উইকেটও তুলে নিয়ে জয়ের স্বপ্ন দেখছিল আফগানরা। কিন্তু ছয় নম্বরে নামা ম্যাক্সওয়েল ১২৮ বলে ২১টি চার ও ১০টি ছক্কায় ২০১ রানের অবিশ^াস্য ইনিংস খেলে আফগানিস্তানের জয়ের স্বপ্ন চুরমার করে দেন। সেদিনের ওই জয়ে সেমিফাইনাল নিশ্চিত হয় অস্ট্রেলিয়ার।

৮ ম্যাচে ১২ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের দ্বিতীয় স্থানে থেকে আগেই সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। নির্ভার হয়ে লিগ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে মাঠে নামবে। সেমির আগে নিজেদের আরও একবার ঝালিয়ে নেয়ার পাশাপাশি জয়ের মধ্যে থেকেই শেষ চারের লড়াইয়ে নামার লক্ষ্য দক্ষিণ আফ্রিকার। প্রোটিয়া দলনেতা তেম্বা বাভুমা বলেন, ‘জয়ের ধারা অব্যাহত রেখেই সেমিতে খেলতে চাই আমরা। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটি হালকাভাবে নেয়ার সুযোগ নেই। মাঠে নিজেদের সেরা পারফরম্যান্স প্রদর্শন করব আমরা। সেমিফাইনালের আগে দল নিয়ে আরও একবার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য এটি আমাদের অনেক ভালো সুযোগ।’

এখন পর্যন্ত ওয়ানডেতে মাত্র একবার মুখোমুখি হয়েছে আফগানিস্তান ও দক্ষিণ আফ্রিকা। সেটিও আবার ২০১৯ সালের বিশ^কাপে। কার্ডিফে হওয়া ওই ম্যাচটি বৃষ্টি আইনে ৯ উইকেটে জিতেছিল প্রোটিয়ারা। ওয়ানডে ছাড়া টি২০তেও মাত্র দু’বার দেখা হয়েছে তাদের। বিশ^কাপে ওই দুই ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে জয় পেয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা।

দক্ষিণ আফ্রিকা দলে আছেন কুইন্টন ডি কক-রাসি ভ্যান ডার ডুসেন, ডেভিড মিলার ও আইডেন মার্করামদের মতো বিশ্বসেরা সব ব্যাটসম্যান। এখনো ফাইনালে খেলতে না পারলেও প্রোটিয়াদের দলে সেরা ব্যাটসম্যানদের পাশাপাশি আছেন লুঙ্গি এনগিডি, আন্দিলে ফেলুকুওয়াও, কাগিসো রাবাদাদের মতো পেসাররা। যারা কিনা একটি ম্যাচকে একাই ঘুরিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন। অন্যদিকে, আফগানিস্তান দলে আছেন ফজল হক ফারুকি, আজমতউল্লাহ ওমরজাই, নাভিন উল হকের মতো পেসার ছাড়াও আছে মুজিব-উর-রহমান-রশিদ খান ও মোহাম্মাদ নবীদের মতো বিশ্বসেরা স্পিনার। তাইতো আজ দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটসম্যানদের সঙ্গে আফগানিস্তানের পেসার ও স্পিনারদের দারুণ এক উপভোগ্য লড়াই দেখায় অপেক্ষায় আছে ক্রিকেট বিশ্ব।