ম্যাক্সওয়েল এক পায়ে দাঁড়িয়ে, সব্বাইকে ছাড়িয়ে

দল খাদের কিনারে। পরাজয় সময়ের ব্যাপার মাত্র। ক্রিজে এলেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। তারও পায়ের হাল খারাপ। আউট হতে হতেও বেঁচে গেলেন দুইবার। স্ক্রিনে দেখে বোঝাই যাচ্ছিল ভীষণ কষ্টে দাঁড়িয়ে তিনি।
একরকম এক পায়ে দাঁড়িয়ে দলকে টেনে তুললেন মৃত্যুকূপ থেকে। করলে দুই শত রান। অস্ট্রেলিয়া জিতলো। তৈরি হলো উপাখ্যান। ছয় আফগানের দলগত রান ২৯১। অস্ট্রেলিয়ার সাতজনের ৯১। আর ম্যাক্সওয়েল একাই করলেন ১৩ জনের রান। যাকে বলাই যায়, ম্যাক্সওয়েল এক পায়ে দাঁড়িয়ে, সব্বাইকে ছাড়িয়ে।
সোমবার গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের ১২৮ বলে করা ২০১ রানের ঐতিহাসিক ইনিংসে ভর করে আফগানিস্তানকে তিন উইকেটে হারাল অস্ট্রেলিয়া।
শতরানের আগেই ম্যাক্সওয়েলের পায়ের পেশিতে টান ধরা শুরু হয়। ইনিংসের সঙ্গে সেই ব্যথাও বাড়ল। কয়েক ওভার পর পর ছুটে আসছিলেন অস্ট্রেলিয়ার সাপোর্ট স্টাফেরা। প্রথমে ম্যাসাজ, পরে ব্যথানাশক- চেষ্টা করা হলো অনেক কিছুরই। সেসব ছাপিয়ে জিতেছে গ্লেনের লড়াকু মনোভাব। ম্যাক্সওয়েলের এই ইনিংসকে তাই অতিমানবীয় বললেও কম বলা হয়। রান তাড়া করতে নেমে, দলের শেষ ভরসাযোগ্য ব্যাটারকে নিয়ে একা দলকে জেতানো, এমন ইনিংস বহুদিন দেখেনি ক্রিকেট।
নবম ওভারে ম্যাক্সওয়েল যখন ক্রিজে এলেন, অস্ট্রেলিয়ার অবস্থা তখন বেশ খারাপ। ৪৯ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলেছে তারা। প্রথম দুই বলে ডেভিড ওয়ার্নার এবং জশ ইংলিসকে তুলে নিয়ে পিচে আগুন ঝরাচ্ছেন আজমাতউল্লাহ। তার হ্যাটট্রিক আটকানোই প্রথম কাজ ছিল ম্যাক্সওয়েলের। অফস্ট্যাম্পে পড়া বল তাঁর ব্যাটের কানায় লেগে থার্ড ম্যান এলাকা দিয়ে বাউন্ডারিতে চলে যায়। আফগানিস্তান মরিয়া হয়ে রিভিউ নিয়েছিল। পরিষ্কার দেখা যায় বল ব্যাটে লেগেছে। কিন্তু আত্মবিশ্বাসে টগবগে আফগানিস্তান হাল ছাড়েনি। একদিকে ম্যাক্সওয়েল টিকে গেলেও উল্টো দিকে একের পর এক উইকেট পড়তে থাকে।
৯১ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে ফেলে অজিরা। মনে হচ্ছিল, অঘটন ঘটিয়ে আফগানিস্তানের বিরাট জয় কেবল সময়ের অপেক্ষা। কিন্তু বিধাতা সম্ভবত ম্যাচের ভাগ্য অন্য রকম লিখে রেখেছিলেন। ম্যাক্সওয়েল এরপর একটা সুযোগ দিয়েছিলেন ৩৩ রানের মাথায়। নুর আহমেদের বলে সুইপ করলে শর্ট ফাইন লেগে লোপ্পা ক্যাচ ওঠে। তবে মিস করে বসেন মুজিব উর রহমান। সেই মিস হয়ত তার সারাজীবনের আক্ষেপ হয়ে থাকবে। পুরোনো ক্রিকেটীয় প্রবাদ "ক্যাচ মিস তো ম্যাচ মিস" প্রমাণ হয়ে গেল আরও একবার।