রিজার্ভ ১০ বিলিয়নের নিচে নামলে উদ্বেগের কারণ হবে
গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) চেয়ারম্যান রেহমান সোবহান বলেছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ ১০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নামলে সেটা দেশের জন্য বড় উদ্বেগের কারণ হবে। কিন্তু বাংলাদেশ কখনো শ্রীলঙ্কা হবে না। তবে তখন আইএমএফের সহায়তা না-ও মিলতে পারে।
গতকাল সোমবার অর্থনীতিবিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) ‘অধ্যাপক রেহমান সোবহানের সঙ্গে সংলাপ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
রেহমান সোবহান বলেন, ‘ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশের রিজার্ভ কমে যাওয়ার সঙ্গে শ্রীলঙ্কার মিল আছে। যদিও বাংলাদেশের অর্থনীতি নিঃসন্দেহে শ্রীলঙ্কার চেয়ে ভালো অবস্থায় রয়েছে। কারণ আমাদের বড় একটি রপ্তানি খাত আছে। সেই সঙ্গে আছে রেমিট্যান্স বা প্রবাস আয়, যা শ্রীলঙ্কার চেয়ে অনেক বেশি।
সে কারণে বিশ্বাস করি না, বাংলাদেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি কখনো শ্রীলঙ্কার মতো হতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘দেশে রেমিট্যান্স বা প্রবাস আয় কমে যাচ্ছে, তার মানে এই নয় যে দেশে প্রবাস আয় আসা বাস্তবে কমে গেছে। প্রবাস আয় আনুষ্ঠানিক পথে না এসে অনানুষ্ঠানিক পথে আসছে, যার মূল মাধ্যম হুন্ডি। অর্থাৎ রিজার্ভ বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা না হয়ে হুন্ডিতে জমা হচ্ছে, যা বাংলাদেশের বাইরে জমা হচ্ছে।
যারা বিদেশে অর্থ পাচার করেন, তাঁদের জন্য এটা সুবিধাজনক হয়েছে।’
ডলারের পতন ঠেকাতে সুনির্দিষ্ট পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, বিলাসী পণ্যের আমদানি কমাতে হবে। নীতিনির্ধারকদের এই মুহৃর্তে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, আগে বিএমডাব্লিউ গাড়ি আমদানি করবে, নাকি ডিম কিংবা সার আমদানি করবে।
দেশের এই শীর্ষস্থানীয় অর্থনীতিবিদ বলেন, দেশের আর্থিক খাতের সংস্কৃতিতে বড় পরিবর্তন এসেছে। ঋণ নেওয়ার পর ফেরত না দেওয়াটা নিয়মে পরিণত হয়েছে।
যাঁরা এসব করছেন, তাঁরা নিজেদের বড় ব্যবসায়ী নন; বরং যাঁরা এসব করছেন, তাঁরা নিজেদের বড় রাজনৈতিক হিসেবে পরিচয় দিচ্ছেন।
বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বর্তমান সরকার বিদ্যুৎ পরিস্থিতির যথেষ্ট উন্নতি করেছে, যা বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে করতে পারেনি। তবে বর্তমানে ঠিকমতো বিদ্যুৎ না পাওয়ার মূল কারণ হচ্ছে অপারেশন ও সরবরাহব্যবস্থার মধ্যে ব্যবধান। শুধু বিদ্যুৎ উৎপাদন করলেই হবে না, সরবরাহব্যবস্থা ঠিক করতে হবে। এ ছাড়া ২০১০ সালের বাস্তবতায় রেন্টাল ও কুইকরেন্টাল সঠিক ছিল। তবে পরবর্তী সময়ে জরুরি ছিল সংশোধন করা। তা না হওয়ায় আর্থিক চাপ বেড়েছে সরকারের।
১৯৬০ সালে একজন অর্থনৈতিক রিপোর্টার ছিলেন জানিয়ে রেহমান সোবহান একে একে তুলে ধরেন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা জীবন থেকে পরিকল্পনা কমিশনে যুক্ত হওয়ার কথা, বাংলাদেশ গবেষণা উন্নয়ন পরিষদে থাকাকালে কী ধরনের গবেষণার কাজ করেছেন, সেসব কথা। সিপিডি তৈরি, এ প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান হওয়া এবং পর্যায়ক্রমে জীবনের বিভিন্ন কর্মের ওপর আলোকপাত করেন তিনি।
বর্তমান ফিলিস্তিন ও ইসরাইলের যুদ্ধে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কোনো প্রভাব পড়বে কি না—এই প্রশ্নে সিপিডি চেয়ারম্যান বলেন, যদি দীর্ঘমেয়াদি হয় তা হলে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি পেতে পারে। আর তখনই প্রভাব পড়তে পারে।
মতবিনিময় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইআরএফ সভাপতি মোহাম্মদ রিফাতউল্লাহ মৃধা। সঞ্চালনায় ছিলেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম।