img

টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে গত এক মাস ধরে সব ধরনের ইনফিউশন স্যালাইনের সংকট চলছে। এতে রোগী ও ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়েছে বলে জানা গেছে। এর মধ্যে কিছু ওষুধ ব্যবসায়ী বিভিন্ন স্থান থেকে কিনে এনে বেশি দা‌মে বিক্রি করছেন বলে অভিযোগে জানা গেছে। এ নিয়ে রবিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে বাংলাদেশ কেমিস্ট এন্ড ড্রাগিস্ট মির্জাপুর উপজেলা শাখার উদ্যোগে ওষুধ কম্পানির প্রতিনিধি ও স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের নিয়ে এক সভা ডাকেন।

সভায় ব্যবসায়ী ওষুধ কম্পানির প্রতিনিধিরা তাদের সমস্যার কথা তুলে ধরেন।

 

জানা গেছে, মির্জাপুর বাজারসহ উপজেলার একটি পৌরসভা ও ১৪টি ইউনিয়নে চার শতাধিক ওষুধ ব্যবসায়ী রয়েছে। উপজেলা সদরে কুমুদিনী হাসপাতাল ছাড়াও এ উপজেলায় ৩০টি প্রাইভেট হাসপাতাল ও ক্লিনিক রয়েছে। এসব হাসপাতালে প্রতি মাসে কমপক্ষে ১৮ থেকে ২০ হাজার ইনফিউশন স্যালাইনের চাহিদা রয়েছে।

বাজারে নরমাল (এনএস), কলেরা, হার্টম্যান, ডিএনএস, ডিসটোজ ও প্রলিপ ইনফিউশন স্যালাইনের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে প্রলিপ স্যালাইন কিছুটা পাওয়া যাচ্ছে বলে বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে।

 

সম্প্রতি সারাদেশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি পেয়েছে। এজন্য সকল ধরনের ইনফিউশন স্যালানাইনের সংকট দেখা দেয়।

বিভিন্ন ওষুধ কম্পানিতে কাঁচামাল সংকট থাকায়  উৎপাদন কম হচ্ছে বলে ওষুধ কম্পানির প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন। কিছু ওষুধ ব্যবসায়ী বিভিন্ন স্থান থেকে কিনে এনে বেশি দা‌মে বিক্রি করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়ে গত রবিবার বিকেলে বাংলাদেশ কেমিস্ট এন্ড ড্রাগিস্ট মির্জাপুর উপজেলা শাখার উদ্যোগে ওষুধ কম্পানির প্রতিনিধি ও স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীদের নিয়ে এক সভা ডাকেন। সভায় ওষুধ ব্যবসায়ী ওষুধ কম্পানির প্রতিনিধিরা তাদের সমস্যার কথা তুলে ধরেন। 

 

এসময় ব্যবসায়ীরা নিবরা কম্পানির এরিয়া ম্যানেজার শওকত উজ্জামানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, তিনি মির্জাপুর বাজারের মা জননী ফার্মেসীর ব্যবসায়ীর কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে তাকেই স্যালাইন সরবরাহ করে থাকেন।

আর কোনো ব্যবসায়ীকে স্যালাইন সরবরাহ করেন না।

 

সদরের হক মার্কেটের দোতলায় বাংলাদেশ কেমিস্ট এন্ড ড্রাগিস্ট মির্জাপুর উপজেলা শাখার কার্যালয়ে জাহিদুল ইসলাম জরিপের সভাপতিত্বে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সমির বণিক, ব্যবসায়ী শাহিন মিয়া, ছানোয়ার হোসেন, রতন মিয়া, জুবায়ের হোসেন, দুলাল মিয়া, আলমগীর হোসেন খোকন, একমি কম্পানির প্রতিনিধি ইমরান হোসেন, ওরিয়ন কম্পানির সিনিয়র মেডিক্যাল ইনফরমেশন অফিসার মোবারক হোসেন, অপসো স্যালাইনের মেডিক্যাল প্রমোশন অফিসার আলম হোসেন, বেক্সিমকোর এরিয়া ম্যানেজার চিত্তরঞ্জন বিশ্বাস প্রমুখ বক্তৃতা করেন। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, ব্যবসার স্বার্থে বিভিন্ন স্থান থেকে বেশি দামে কিনে এনে বিক্রি করলেও নানা প্রশ্নে সম্মুখীন হচ্ছেন তারা। স্যালাইন দিতে না পারলে চিকিৎসাপত্রে ডাক্তারের লেখা অন্য ওষুধ বিক্রি করতে পারেন না। এজন্য ব্যবসায়ীরা এই কৌশল নিয়েছেন।

বড়বাড়ি ফার্মেসির স্বত্বাধিকার ছানোয়ার হোসেন বলেন, তার দোকানের পাশেই দুটি প্রাইভেট ক্লিনিক রয়েছে। যেখানে প্রতিনিয়ত অপারেশন হচ্ছে। অপারেশনের রোগীর জন্য নরমাল স্যালাইনের খুবই প্রয়োজন। বাজারে নরমাল স্যালাইনের তীব্র সংকট রয়েছে। এজন্য তিনি তার এক আত্মীয়ের মাধ্যমে ময়মনসিংহ থেকে ৩০০ টাকা দরে ৫টি নরমাল স্যালাইন কিনে এনেছেন। তিনি ৩২০ থেকে ৩৩০ টাকা দরে বিক্রি করছেন। রোগী ও প্রতিষ্ঠানের কথা চিন্তা করেই তিনি এই পথ অবলম্বন করেছেন বলে জানান।

অপসো স্যালাইনের মেডিক্যাল প্রমোশন অফিসার আলম হোসেন বলেন, প্রতি মাসে চার থেকে ৫ হাজার ব্যাগ স্যালাইনের চাহিদা রয়েছে। তিনি প্রতি মাসে ৮০ থেকে ১০০ ব্যাগ স্যালাইন পাচ্ছেন বলে জানান।

বেক্সিমকোর এরিয়া ম্যানেজার চিত্তরঞ্জন বিশ্বাস জানান, কাঁচামাল সংকটের কারণে স্যালাইন উৎপাদন সীমিত। সারা মাস সংকট চলছে। সাপ্লাই না থাকাই সরবরাহ করা যাচ্ছে না। 

নিবরা কম্পানির এরিয়া ম্যানেজার শওকত উজ্জামান বলেন, তার কম্পানির অর্থনৈতিক সমস্যা রয়েছে। অগ্রিম টাকা নিয়ে স্যালাইন তৈরির পর সরবরাহ করা হয়।

ওরিয়ন কম্পানির মির্জাপুর সিনিয়র মেডিক্যাল ইনফরমেশন অফিসার মোবারক হোসেন বলেন, ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ার কারণে কম্পানিতে যে পরিমাণ স্যালাইন উৎপাদন হচ্ছে তার ৫০ ভাগ সরকারকে দেওয়া হচ্ছে। প্রতি মাসে মির্জাপুরে ৮ থেকে ১০টি সিডিউলে ৫ লাখ টাকার স্যালাইন বিক্রি হতো। বর্তমানে ৩ লাখ টাকার স্যালাইন দিতে পারছি। এর মধ্যে কুমুদিনী হাসপাতালকে দুই তৃতীয়াংশ দিতে হচ্ছে। চাহিদার ২০ ভাগ স্যালাইন ব্যবসায়ীদের দিতে পারছেন বলে জানান তিনি।

মির্জাপুর উপজেলা পরিবার ও পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ফরিদুল ইসলাম জানান, ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ায় নরমাল, ডিএনএস ও হার্টমেন ইনফিউশন স্যালাইনের চাহিদা বেড়েছে। তবে সংকট থাকার কোনো কারণ নেই। বাজারে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অর্থ উপার্জনের পথ অবলম্বন করে স্যালাইন মজুদ করায় বাজারে স্যালাইনের সংকট সৃষ্টি হয়েছে বলে তিনি ধারণা করছেন।

 

এই বিভাগের আরও খবর