img

বৈশ্বিক মন্দায় পণ্যের চাহিদা কমবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে। এর প্রভাব পড়বে রপ্তানিনির্ভর এশিয়ার অর্থনীতিতে। ফলে চলতি অর্থবছরে অন্য দেশগুলোর পাশাপাশি জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমবে বাংলাদেশেরও। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বলেছে, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি কমে হবে ৬ শতাংশ।

যেখানে ২০২২ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৭.২ শতাংশ। এর পাশাপাশি চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি বেড়ে হবে ৯.১ শতাংশ। 

এর আগে বিশ্বব্যাংক তাদের পূর্বাভাসে জানিয়েছিল চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে ৬.১ শতাংশ হতে পারে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) জানিয়েছিল প্রবৃদ্ধি ৬.৬ শতাংশ হতে পারে। এডিবি থেকে বিশ্বব্যাংক প্রবৃদ্ধি কম দেখিয়েছে। তবে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রবৃদ্ধি অর্জনে বাংলাদেশ তৃতীয় স্থানে থাকবে বলে জানিয়েছিল বিশ্বব্যাংক। 

গতকাল মঙ্গলবার বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পূর্বাভাস প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আইএমএফ। এতে বলা হয়, এ বছর বিশ্বের বেশির ভাগ দেশেই প্রবৃদ্ধির নিম্নগতি থাকবে। কারণ বিশ্বজুড়েই এখন মূল্যস্ফীতি সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের কারণে সারা বিশ্বকেই অস্থিতিশীল করেছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি। বিশ্ববাজারে জ্বালানি ও খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধির ফলে বহু দেশ এখন দীর্ঘ মেয়াদে সংকটে পড়ে যাচ্ছে। 

প্রতিবেদনে বলা হয়, বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি শ্লথ হয়ে পড়ায় করোনা-পরবর্তী এশিয়ার অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার অনিশ্চয়তায় পড়েছে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের প্রবৃদ্ধি কমছে এবং ইউরোপীয় দেশগুলোতে মন্দার ভয় পেয়ে বসেছে। ফলে পণ্যের চাহিদা কমায় এশিয়ার অর্থনীতিতে ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে। এর পাশাপাশি ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে অনেক কেন্দ্রীয় ব্যাংকই মুদ্রানীতি কঠোর করতে বাধ্য হচ্ছে। এতে এশিয়ার জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমবে। 

আইএমএফ বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র সুদের হার বৃদ্ধির কারণে ডলার শক্তিশালী হচ্ছে। এতে উদীয়মান দেশগুলোর ঋণ পরিস্থিতি আরো খারাপ হচ্ছে। ফলে অনেক দেশ নিজস্ব মুদ্রার মান ধরে রাখতে সুদের হার বাড়াচ্ছে। এ ছাড়া মূল্যস্ফীতি কয়েক দশকে সর্বোচ্চ হওয়ায় প্রত্যাশার চেয়েও অনেক বেশি শ্লথ হচ্ছে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। অনেক দেশেই অর্থনৈতিক সংকট বাড়ছে, এতে জীবনযাত্রার ব্যয়ও বেড়ে চলেছে। বিশেষ করে ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা ও অনেক দেশে করোনা দীর্ঘায়িত হওয়ায় বৈশ্বিক পূর্বাভাসে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। 

এতে বৈশ্বিক জিডিপি প্রবৃদ্ধি ২০২১ সালে ৬ শতাংশ হলেও ২০২২ সালে কমে হবে ৩.২ শতাংশ এবং ২০২৩ সালে আরো কমে হবে ২.৭ শতাংশ। এর পাশাপাশি বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি ২০২১ সালের ৪.৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০২২ সালে হবে ৮.৮ শতাংশ। 

পূর্বাভাস অনুযায়ী, এশিয়ার প্রবৃদ্ধি গত বছর ৬.৫ শতাংশ হলেও এ বছর ৪ শতাংশে নেমে আসবে। এর মধ্যে ২০২২ সালে ভারতের প্রবৃদ্ধি হবে ৬.৮ শতাংশ। চীনের প্রবৃদ্ধিও কমে হবে ৩.২ শতাংশ। ইউরোপে এবার শূন্য প্রবৃদ্ধির আশঙ্কা করা হয়েছে। লাতিন আমেরিকার দেশগুলোতে প্রবৃদ্ধি ৩.৫ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে, যা পরের বছর আরো কমে ১.৭ শতাংশে নেমে আসতে পারে। তবে মধ্যপ্রাচ্যে ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। এতে আরো বলা হয়েছে, ইউক্রেন আগ্রাসনকে কেন্দ্র করে বিশ্বজুড়ে অপরিশোধিত তেলের দাম বেড়েছে। ব্যারেলপ্রতি ১২০ ডলারের ওপরে উঠে গেলেও সম্প্রতি ১০০ ডলারের আশপাশে রয়েছে। ধারণা করা হয়েছে, সামনের দিনে তেলের দাম আরো কমে আসবে। কিন্তু তেল উত্তোলনকারী দেশগুলো উত্তোলন কমালে তেলের দাম ফের অস্থিতিশীল হতে পারে। 

এ অবস্থায় দেশগুলোর প্রতি আইএমএফের পরামর্শ হচ্ছে, পণ্যবাজারে স্থিতিশীলতা যাতে ফিরিয়ে আনা যায় এমন মুদ্রানীতি গ্রহণ করতে হবে। মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় যাতে কমে আসে রাজস্ব নীতিতে এমন পদক্ষেপ থাকতে হবে। এর পাশাপাশি কাঠামোগত সংস্কার করতে হবে যাতে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করা যায় এবং সরবরাহ বিঘ্নতা দূর করা যায়। এতে মূল্যস্ফীতি কমে আসবে। এ ছাড়া সবুজ জ্বালানির দিকেও যেতে হবে।

এই বিভাগের আরও খবর