img

কয়েক বছর ধরে ঘুরছে তিস্তার মহাপরিকল্পনা। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে পুণরুদ্ধার হবে তিস্তা নদীর সার্বিক পানি ব্যবস্থাপনা। প্রকল্প প্রস্তাব অনুযায়ী তিস্তানদীর ভূপ্রাকৃতিক গঠনে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হবে। চিনা অর্থায়নে প্রস্তাবিত বাস্তবায়নে ২০১৬ সালে দুই দেশের মধ্যে চুক্তি হওয়া ২৭টি প্রকল্পের মধ্যে অন্যতম ছিল এটি।সেটি বাস্তবায়নে উত্তরের মানুষ মুখিয়ে থাকলেও নানা জটিলতায় ঘুরপাক খাচ্ছিল প্রকল্প বাস্তবায়ন। 

আজ রবিবার সকালে বাংলাদেশের নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত লি জি‌মিং নীলফামারীর ডালিয়ায় দেশের সর্ববৃহৎ সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজ ও তিস্তার অববাহিকা পরিদর্শণে এসে প্রকল্প বাস্তবায়নে আশার আলো জাগিয়েছেন তিস্তাপাড়ের মানুষের মধ্যে। 

তিস্তাপাড়ের সার্বিক পরিস্থিতি সরেজমিনে ঘুরে দেখেন রাষ্ট্রদূত। এ সময় তিনি উপস্থিত গণমাধ্যম কর্মীদের জানান, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন দ্রুত আলোর মুখ দেখবে। 

তিনি বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে সবদিক দিয়ে পরিবর্তন ঘটবে এই এলাকার। জীবন মান উন্নয়ন, অর্থনীতি প্রকৃতি ও পরিবেশ, যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং সর্বোপরি পরিবর্তন ঘটবে মানুষের। 

তিস্তা মহাপরিকল্পনা সম্ভাব্যতা যাচাই চলছে এবং দুই দেশের সরকারের প্রচেষ্টায় দ্রুত কাজ শুরু হওয়ার চেষ্টাও চলছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।  

এ সময় উপস্থিত ছিলেন চীনা দূতাবাসের রাজনৈতিক উপদেষ্টা ওয়াং ঝিহং, অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক বিভাগের দ্বিতীয় সচিব  জিইউ ঝিকিন, পানি উন্নয়ন বোর্ড রংপুর অঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী আনোয়ারুল হক ভুইয়া, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী খুশি মোহন সরকার, পাউবো ডালিয়া বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আশফাউদৌলা প্রিন্স, ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন উপস্থিত ছিলেন। 

কী রয়েছে তিস্তার মহাপরিকল্পনায়

প্রস্তাবিত তিস্তা মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের ভাটি থেকে তিস্তা-যমুনার মিলনস্থল পর্যন্ত নদীর প্রস্থ কমিয়ে ৭০০ থেকে ১০০০ মিটারে সীমাবদ্ধ করা হবে। নদীর গভীরতা বাড়াবে ১০ মিটার। নদী শাসনের মাধ্যমে তিস্তা নদীকে সঠিক ব্যবস্থাপনার আওতায় আনা, ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে পানি বহনক্ষমতা বাড়ানো, নদীর দুই পাড়ে বিদ্যমান বাঁধের মেরামত করা, নদীর দুই পাড়ে মোট ১০২ কিলোমিটার নতুন বাঁধ নির্মাণ করা, ৫০টি গ্রয়েন স্থাপন, নদী ড্রেজিংয়ের মাটি ভরাট করে নদীর দুই পাড়ে ১৭০ বর্গকিলোমিটার ভূমি উদ্ধার করা হবে। 

পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রস্তাবিত তিস্তা নদীর উন্নয়ন প্রকল্পের প্রাথমিক প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়েছিল, ৯৮৩ মিলিয়ন ডলারের এ প্রকল্পের মাধ্যমে বন্যা নিয়ন্ত্রণ, পানি প্রাপ্যতা বৃদ্ধি, জমি উদ্ধার, নৌ-চলাচল বৃদ্ধিসহ তিস্তাপাড়ের কৃষি অঞ্চল, শিল্প-কারখানা, আবাসন প্রকল্প, সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প গড়ে তোলা হবে এবং তিস্তা পাড়ের মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন করা হবে। চিলমারী বন্দর থেকে ডালিয়ায় তিস্তা ব্যারাজ পর্যন্ত তিনটি নৌ-টার্মিনাল তৈরি করা হবে। নদীর দুই পাড়ে হাইওয়ে তৈরি করে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি করা হবে। 

তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে দুই বছর ধরে মাঠ পর্যায়ে পর্যবেক্ষণ করে চীনের প্রতিষ্ঠান চায়না পাওয়ার ও চায়না রিভার ইয়েলো। প্রাপ্ত তথ্যানুসারে ইতিমধ্যে সার্বিক পরিকল্পনাসহ ড্রয়িং ডিজাইনও সম্পন্ন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। বাংলাদেশের পক্ষে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে উত্তরাঞ্চলের তিস্তার মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে যেমন আগ্রহী, তেমনি চীন সরকারও এগিয়ে আসছে অর্থায়নে।

এই বিভাগের আরও খবর